Pages

Tuesday, March 25, 2014

সুরা আল-কিয়ামাহতে বর্ণিত আখেরাতে আল্লাহর দর্শন লাভের বিস্তারিত ব্যাখ্যা

সুরা আল-কিয়ামাহতে বর্ণিত আখেরাতে আল্লাহর দর্শন লাভের বিস্তারিত ব্যাখ্যা


আল্লাহ বলেনঃ
ٌঅর্থঃ “সেদিন অনেক মুখমন্ডল উজ্জ্বল হবে। নিজের রবের প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখবে৷১৭   আর অনেক মুখমন্ডল সেদিন উদাস হয়ে পড়বে। তারা ধারণা করবে যে, তাদের সাথে কোমর ভাঙ্গা আচরণ করা হবে। (সূরা আল-কিয়ামাহঃ ২২-২৫)



তাফহীমুল কুরআনে প্রণীত উক্ত আয়াতসমূহের বিস্তারিত ব্যাখ্যা নীচে দেয়া হল: 

১৭ . ''নিজের রবের প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখবে৷" - মুফাস্সিরগণের কেউ কেউ একথাটিকে রূপক অর্থে গ্রহণ করেছেন। তারা বলেনঃ "কারো প্রতি তাকিয়ে থাকা"কথাটি প্রচলিত প্রবাদ হিসেবে তার কাছে কোন কিছু আশা কার, তার সিদ্ধান্তের অপেক্ষা করা এবং তার দয়া প্রার্থী হওয়া অর্থে ব্যবহৃত হয়। এমন কি অন্ধ ব্যক্তিও অনেক সময় বলে যে, আমি তো অমুকের দিকে তাকিয়ে আছি, তিনি আমার জন্য কি করেন তা দেখার জন্য। কিন্তু বহু সংখ্যক হাদীসে এর যে ব্যাখ্যা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত হয়েছে তাহলো, আখেরাতে আল্লাহর নেককার বান্দাদের আল্লাহর সাক্ষাত লাভের সৌভাগ্য হবে। বুখারী,শরীফের বর্ণনায় আছেঃ ---------------"তোমরা প্রকাশ্যে সুষ্পস্টভাবে তোমাদের রবকে দেখতে পাবে।" মুসলিম এবং তিরমিযীতে হযরত সুহাইব থেকে বর্ণিত হয়েছে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ বেহেশতবাসীরা বেহেশতে প্রবেশ করার পর আল্লাহ তা"আলা তাদের জিজ্ঞেস করবেন, তোমরা কি চাও, যে, আমি তোমাদের আরো কিছু দান করি৷ তারা আরয করবে, আপনি কি আমাদের চেহারা দীপ্তিময় করেননি৷ আপনি কি আমাদের জান্নাতে প্রবেশ করেননি এবং জাহান্নাম থেকে রক্ষা করেননি৷তখন আল্লাহ তা"আলা পর্দা সরিয়ে দেবেন। ইতিপূর্বে তারা যেসব পুরস্কার লাভ করেছে তার কোনটিই তাদের কাছে তাদের "রবের "সাক্ষাতলাভের সম্মান ও সৌভাগ্য থেকে অধিক প্রিয় হবে না। এটিই সে অতিরিক্ত পুরষ্কার যার কথা কুরআনে এভাবে বলা হয়েছেঃ--------------------- অর্থাৎ "যারা নেক কাজ করেছে তাদের জন্য উত্তম পুরস্কার রয়েছে। আর এ ছাড়া অতিরিক্ত পুরস্কারও রয়েছে।"(ইউনুস, ২৬) বুখারী ও মুসলিমে হযরত আবু সাঈদ খুদরী এবং হযরত আবু হুরাইরা থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, তারা জিজ্ঞেস করলেনঃ হে আল্লাহর রসূল, আমরা কি কিয়ামতের দিন আমাদের রবকে দেখতে পাবো৷ জবাবে নবী (সা) বললেনঃ যখন মেঘের আড়াল থাকে না তখন সুর্য ও চাঁদকে দেখতে তোমাদের কি কোন কষ্ট হয়৷ সবাই বললো "না।" তিনি বললেনঃ তোমরা তোমাদের রবকে এ রকমই স্পষ্ট দেখতে পাবে। বুখারী ও মুসলিমে হযরত জারীর ইবনে আবদুল্লাহ থেকে এ বিষয়ের প্রায় অনুরূপ একটি হাদীস বর্ণিত হয়েছে। মুসনাদে আহমাদ,তিরমিযী, দারকুতনী, ইবনে জারীর, ইবনুল মুনযির, তাবারানী, বায়হাকী, ইবনে আবী শায়বা, এবং আরো কিছু সংখ্যক মুহাদ্দিস কিছুটা শাব্দিক তারতম্যসহ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমরের একটি বর্ণনা উদ্ধৃত করেছেন, যার বিষয়বস্তু হলো, জান্নাতবাসীদের মধ্যে সর্বনিম্ন মর্যাদার অধিকারী ব্যক্তিও দুই হাজার বছরের দুরত্ব পর্যন্ত তার সাম্রাজ্যের বিস্তার দেখতে পাবে। এবং সর্বাধিক মর্যাদার অধিকারী ব্যক্তি প্রতিদিন দুই বার তার রবকে দেখতে পাবে। একথা বলার পর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ আয়াতটি পাঠ করলেন যে, "সেদিন কিছু সংখ্যক চেহারা তরতাজা থাকবে। নিজের রবের প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখবে।" ইবনে মাজাতে হযরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ বর্ণিত একটি হাদীসে আছে যে, আল্লাহ তাদের প্রতি তাকাবেন আর তারাও আল্লাহর প্রতি তাকাবে। অতপর যতক্ষণ আল্লাহ তা"আলা তাদের থেকে অন্তর্হিত না হবেন ততক্ষণ তারা জান্নাতের কোন নিয়ামতের প্রতি মনোযোগ দিবে না। এবং আল্লাহর প্রতি তাকিয়ে থাকবে। এটি এবং অন্য আরো বহু হাদীসের ভিত্তিতে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের অনুসারীগণ প্রায় সর্বসম্মতভাবেই এ আয়াতের যে অর্থ করেন তাহলো, জান্নাতবাসীগণ আখেরাতে মহান আল্লাহর সাক্ষাৎ লাভে ধন্য হবে। কুরআন মজীদের এ আয়াত থেকেও তার সমর্থন পাওয়া যায়।------------------- "কখ্খনো নয়, তারা (অর্থাৎ পাপীগণ) সেদিন তাদের রবের সাক্ষাৎ থেকে বঞ্চিত হবে।"(আল মুতাফফিফীন,১৫) এ থেকে স্বতই এ সিদ্ধান্ত উপনীত হওয়া যায় যে,এ বঞ্চনা হবে পাপীদের জন্য,নেককাদের জন্য নয়।
এখানে একটি প্রশ্ন দেখা দেয়। তাহলো, মানুষের পক্ষে আল্লাহকে দেখা কিভাকে সম্ভব৷ কোন জিনিসকে দেখতে পাওয়ার জন্য যা অনিবার্যরূপে প্রয়োজন তাহলো, সে জিনিসটিকে কোন বিশেষ দিক, স্থান,আকৃতি ও বর্ণ নিয়ে সামনে বিদ্যমান থাকতে হবে।আলোকে রশ্মি তাতে প্রতিফলিত হয়ে চোখের ওপর পড়বে এবং চোখ থেকে তার ছবি বা প্রতিবিম্ব মস্তিস্কের দর্শনকেন্দ্রে পৌছবে। মানুষের আল্লাহ রব্বুল আলামীনের পবিত্র সত্তাকে এভাবে দেখতে পাওয়ার কল্পনাও কি করা যায়৷ কিন্তু এ ধরনের প্রশ্ন মূলত একটি বড় ভ্রান্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত । এ ক্ষেত্রে দুটি জিনিসের মধ্যে পার্থক্য করা হয়নি। একটি হলো, দেখার তাৎপর্য। আর অপরটি হলো দেখার কাজটি সংঘটিত হওয়ার সেই বিশেষ অবস্থা বা প্রক্রিয়াটি যার সাথে আমরা এ পৃথিবীতে পরিচিত। দেখার তাৎপর্য হলো, দর্শনকারী ব্যক্তির মধ্যে দৃষ্টিশক্তি থাকতে হবে। অর্থাৎ সে অন্ধ হবে না। দৃশ্যমান বস্তু তার কাছে স্পষ্ট হবে, অদৃশ্য বা চোখের আড়াল হবে না। কিন্তু দুনিয়াতে আমরা যে জিনিসের অভিজ্ঞতা লাভ করি বা তা পর্যবেক্ষণ করে থাকি তা দেখার সে বিশেষ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে হয় যার সাহায্যে কোন মানুষ বা পশু কার্যত কোন জিনিসকে দেখে থাকে। এ জন্য অনিবার্যরূপে যা প্রয়োজন তা হলো, দর্শনকারীর দেহে চোখ নামক একটি অংগ থাকবে।সে অংগটিতে দেখার শক্তি বর্তমান থাকবে। তার সামনে একটি সসীম রঙীন বা বর্ণময় দেহ বিদ্যমান থাকবে যা থেকে আলোকরশ্মি প্রতিফলিত হয়ে চোখের পর্দার ওপর পড়বে এবং চোখের পর্দায় তার আকৃতির স্থান সংকুলান হতে হবে। এখন যদি কেউ মনে করে যে, দেখতে পাওয়ার মূলে এ দুনিয়াতে যে প্রক্রিয়াটি কার্যকর বলে আমরা জানি শুধু সে প্রক্রিয়াতেই দেখার কাজটি কার্যত প্রকাশ পেতে বা ঘটতে পারে তাহলে তা তার নিজের মন-মগজ তথা ধী -শক্তির সংকীর্ণতা। অন্যথায় আল্লাহ তা"আলার নিজের সাম্রাজ্যে দেখার জন্য এত অসংখ্য উপায় ও প্রক্রিয়া থাকা সম্ভব যা আমরা কল্পনাও করতে পারি না। এ প্রশ্ন নিয়ে যে ব্যক্তি বিতর্কে লিপ্ত হয় সে নিজেই বলূক, তার বর চক্ষুষ্মান না অন্ধ৷ তিনি যদি চক্ষুষ্মান তথা দৃষ্টিশক্তির অধিকারী হয়ে থাকেন এবং গোটা বিশ্ব -জাহান ও তার প্রতিটি বস্তু দেখে থাকেন তাহলে কি তিনি চোখ নামের একটি অংগ দিয়ে দেখছেন যা দিয়ে দুনিয়ায় মানুষ ও অন্য সব জীবজন্তু দেখে থাকে এবং আমাদের দ্বারা যেভাবে দেখার কাজটা সংঘটিত হচ্ছে তাঁর দ্বারাও কি সেভাবেই সংঘটিত হচ্ছে৷ সবারই জানা যে,এর জবাব হবে নেতিবাচক।এর জবাব যখন নেতিবাচক ,তখন কোন বিবেক ও বোধ সম্পন্ন মানুষের একথা বুঝাতে কষ্ট হবে কেন যে, দুনিয়াতে মানুষ যে নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ায় কোন জিনিসকে দেখে থাকে জান্নাতবাসীগণ সে নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ায় আল্লাহর দর্শন লাভ করবেন না। বরং সেখানে দেখর ধরন, প্রকৃতি ও প্রক্রিয়া হবে অন্য রকম যা এখানে আমাদের পক্ষে জানা সম্ভব নয়। দাম্পত্য জীবন কি এবং কেমন একটি দুই বছরের শিশুর পক্ষে তা বুঝা যতটা কঠিন, প্রকৃতপক্ষে আখেরাতের সবকিছু সঠিকভাবে বুঝা আমাদের জন্য তার চেয়েও বেশী কঠিন। অথচ যৌবনে উপনীত হয়ে এ শিশু নিজের দাম্পত্য জীবন যাপন করবে।

No comments:

Post a Comment