Pages

Friday, May 23, 2014

আল্লাহ পাকের দিদার, আল্লাহর ইবাদতের অর্থ, আল্লাহর নৈকট্য লাভের উপায় - আল্লামা দেলোয়ার হোসাইন সাঈদী

আল্লাহ পাকের দিদার, আল্লাহর ইবাদতের অর্থ, আল্লাহর নৈকট্য লাভের উপায় - আল্লামা দেলোয়ার হোসাইন সাঈদী 

আল্লাহ পাকের দিদার:


আল্লাহর ইবাদতের অর্থ:


আল্লাহর নৈকট্য লাভের উপায়:

Thursday, May 22, 2014

আল্লাহ তা’য়ালা সম্পর্কে তিনটি প্রশ্ন এবং একটি বালকের জবাব

আল্লাহ তা’য়ালা সম্পর্কে তিনটি প্রশ্ন এবং একটি বালকের জবাব

অনেক বছর আগে, তাবেয়ীনদের সময়ে (সাহাবীদের পরের সময়ে)। বাগদাদ ছিল ইসলামী সাম্রাজ্যের রাজধানী। তৎকালীন প্রখ্যাত বহু আলিম এখানে বসবাস করতেন। তাই এটি হয়ে উঠেছিল ইসলামী জ্ঞানের কেন্দ্রভূমি।


Saturday, May 10, 2014

কোরআনে কি এমন কথা আছে যে, " আল্লাহর ইশারা বা হুকুম ছাড়া গাছের একটি পাতাও নড়ে না অথবা পড়ে না।" ?

কোরআনে কি এমন কথা আছে যে, " আল্লাহর ইশারা বা হুকুম ছাড়া গাছের একটি পাতাও নড়ে না অথবা পড়ে না।" ?

উত্তর:

না, কোরআনে এমন কথা বলা নেই যে "আল্লাহর ইশারা বা হুকুম ছাড়া গাছের একটি পাতাও নড়ে না অথবা পড়ে না"।
বরং নিচের আয়াতগুলো দেখলে দেখা যাবে, আল্লাহর অজ্ঞাতসারে কোন কিছুই হয় না, এমন কি গাছের একটি পাতাও পড়ে না এবং কোন ফল আবরণ মুক্ত হয়না।
অর্থাৎ আল্লাহ্‌ সব কিছুই জানেন এবং তার অজ্ঞাতসারে কোন কিছুই হয় না।
এই কথাটাই কোনো ভাবে বিকৃত হয়ে সাধারণ সল্প জ্ঞানী মানুষের কাছে অন্যরুপ ধারণ করেছিলো।
" তাঁরই নিকট অদৃশ্যের চাবি রয়েছে, তিনি ব্যতীত অন্য কেউ তা জানে না। স্থলে ও জলে যা কিছু আছে তা তিনিই অবগত, তার অজ্ঞাতসারে একটি পাতাও পড়ে না, মৃত্তিকার অন্ধকারে এমন কোন শস্যকণাও অন্কুরিত হয় না অথবা রসযুক্ত কিম্বা শুষ্ক এমন কোন বস্তু নেই যা সুস্পষ্ট কিতাবে (কোরআনে) নেই। (Al-An'aam 6: 59)"
"কিয়ামতের জ্ঞান কেবল আল্লাহ্‌র নিকট আছে, তাঁর অজ্ঞাতসারে কোন ফল আবরণ মুক্ত হয়না, কোন নারী গর্ভধারণ ও সন্তান প্রসব করে না। যেদিন আল্লাহ্‌ ওদের ডেকে বলবেন, আমার অংশীদাররা কোথায় ? তখন ওরা বলবে, 'আমরা আপনার নিকট নিবেদন করছি যে, এ ব্যাপারে আমরা কিছুই জানি না' । (Fussilat ( Haa Mim sijadaha) 41: 47) "

অনুবাদের সূত্র : (Al-An'aam 6: 59) এবং (Fussilat ( Haa Mim sijadaha) 41: 47)

কোরআনের বাংলা অনুবাদক : মাওলানা মোবারক করীম জওহর
প্রকাশক : হরফ প্রকাশনী (কলকাতা)
প্রকাশের সময় : ৩ সেপ্টেম্বর ১৯৭৪

তাহলে এতদিন যারা বা যেই সব মুসলিম বিরোধী লোকেরা কোরআন সম্পর্কে মিথ্যা ধারণা দিয়ে অর্থাৎ, " আল্লাহর ইশারা বা হুকুম ছাড়া গাছের একটি পাতাও নড়ে না অথবা পড়ে না।" এই সব কথা বলে নিজেদের দোষ ঢাকতে চেয়েছিলো বা তাদের দোষ আল্লাহর উপর চাপাতে চাচ্ছিলো, তাদের নির্দোষ হওয়ার সমস্ত রাস্থাই বন্ধ হয়ে গেছে।
আল্লাহ সব শুনেন, সব দেখেন, তিনি সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান এবং শক্তিমান আর অদৃশ্য বিষয়ের জ্ঞান তাঁরই কাছে রয়েছে, আল্লাহ সবকিছুর তত্ত্বাবধায়ক এবং তিনি যা ইচ্ছা তাই করেন।


Monday, May 5, 2014

আল্লাহ মানুষের সাথে সরাসরি কথা বলেন না কেন ?

আল্লাহ মানুষের সাথে সরাসরি কথা বলেন না কেন ?



১ নং উত্তর: 

মানুষ এমন কোন মর্যাদার প্রাণি নয় যে আল্লাহ তাদের সাথে সরাসরি কথা বলবেন। আল্লাহ মানুষের সাথে কথা বলার সময়ে হয় ওহীর (প্রত্যাদেশ) মাধ্যম বা অন্তরাল থেকে অথবা কোন দূত (জিব্রাঈল) প্রেরণ করে কথা বলেন। নিচের আয়াতগুলো দেখুন।
 
"মানুষের এমন মর্যাদা নেই যে, আল্লাহ্‌ তার সাথে সরাসরি কথা বলবেন ওহীর (প্রত্যাদেশ) মাধ্যম ব্যতিরেকে, অন্তরাল ব্যতিরেকে অথবা জিব্রাঈল প্রেরণ ব্যতিরেকে যে (জিব্রাঈল) আল্লাহ্‌ যা চান তা ব্যক্ত করে তাঁর অনুমতিক্রমে; নিঃসন্দেহে তিনি সমুন্নত, প্রজ্ঞাময় । (Ash-Shura:51)"

"এভাবে আমি তোমার প্রতি প্রত্যাদেশ করেছি গ্রন্থ তথা আমার নির্দেশ, তুমি তো জানতে না গ্রন্থ কি, বিশ্বাস কি। পক্ষান্তরে আমি একে করেছি আলো যা দ্বারা আমি আমার দাসদের যাকে ইচ্ছা পথ-নির্দেশ করি; তুমি তো কেবল সরল পথই প্রদর্শন কর। (Ash-Shura:52)"

"আল্লাহ্‌র পথ। আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে তা তাঁরই। সকল পরিণাম আল্লাহর নিকট । (Ash-Shura:53)"



সূত্র :

কোরআনের বাংলা অনুবাদক : মাওলানা মোবারক করীম জওহর

প্রকাশক : হরফ প্রকাশনী (কলকাতা)

প্রকাশের সময় : ৩ সেপ্টেম্বর ১৯৭৪
 
সূরা শূরার আয়াত নং ৪২:৫১ (Ash-Shura:51) এর অনুবাদ কোথাও কোথাও অন্যরকমও দেখা যায়।
তবে মোট কথা প্রায় একই রকমের।
"কোন মানুষের জন্য এমন হওয়ার নয় যে, আল্লাহ তার সাথে কথা বলবেন। কিন্তু ওহীর মাধ্যমে অথবা পর্দার অন্তরাল থেকে অথবা তিনি কোন দূত প্রেরণ করবেন, অতঃপর আল্লাহ যা চান, সে তা তাঁর অনুমতিক্রমে পৌঁছে দেবে। নিশ্চয় তিনি সর্বোচ্চ প্রজ্ঞাময়। (Ash-Shura:51)"

২ নং উত্তর:
মানুষ কি বিশ্বাস করবে যে, আল্লাহ তার সাথে কথা বলছেন? আল্লাহ সকল রূহের সাথে (মানুষের সহ) রূহের জগতে একবার কথা বলেছিলেন। তিন জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে, তিনি রুহদিগের প্রভু কিনা এবং সব রুহ তার উত্তরে বলেছিল যে, আল্লাহই তাদের প্রভু। তখন রুহগুলোর একরকম উপলব্ধি ছিল যার জন্য তারা আল্লাহর অস্তিত্ব বুঝতে পেরেছিল। পরবর্তীতে এই জড়জগতে আসার পরে সেই উপলব্ধি আর থাকে না। এটা সাধনার দ্বারা অর্জন করতে হয়। মূসা (আঃ) সহ আরো নবী-রসূলগণের সাথে আল্লাহ কথা বলেছেন। নবী-রসূলগণের উপলব্ধি সেইরকম হওয়ার কারণে আল্লাহ তাদের সাথে কথা বলেছেন আর সাধারণ মানুষের জন্য তাদের মাধ্যমে দিকনির্দেশনা জানিয়ে দিয়েছেন। ফলে কথা বলার দরকার নেই। কেউ যদি আরো বিস্তারিত জানতে চায়, তবে তাকে সাধনা করতে হবে মনের উপলব্ধি ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য। এভাবে সে বিভিন্ন বিষয়ের মূলকথা জানতে পারে যা সাধারণভাবে বোধগম্য হয় না।


Sunday, May 4, 2014

হযরত মুসা (আঃ)-এর সাথে আল্লাহর সাক্ষাৎ, আল্লাহর নিদর্শন এবং তা অমান্যের পরিণতি

হযরত মুসা (আঃ)-এর সাথে আল্লাহর সাক্ষাৎ, আল্লাহর নিদর্শন এবং তা অমান্যের পরিণতি


সূরা আরাফের ১৪৩ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন-
  وَلَمَّا جَاءَ مُوسَى لِمِيقَاتِنَا وَكَلَّمَهُ رَبُّهُ قَالَ رَبِّ أَرِنِي أَنْظُرْ إِلَيْكَ قَالَ لَنْ تَرَانِي وَلَكِنِ انْظُرْ إِلَى الْجَبَلِ فَإِنِ اسْتَقَرَّ مَكَانَهُ فَسَوْفَ تَرَانِي فَلَمَّا تَجَلَّى رَبُّهُ لِلْجَبَلِ جَعَلَهُ دَكًّا وَخَرَّ مُوسَى صَعِقًا فَلَمَّا أَفَاقَ قَالَ سُبْحَانَكَ تُبْتُ إِلَيْكَ وَأَنَا أَوَّلُ الْمُؤْمِنِينَ (143)

"মূসা যখন আমার নির্ধারিত স্থানে উপস্থিত হলো এবং তাঁর প্রতিপালক তাঁর সাথে কথা বললেন, তখন মূসা বললো, হে আমার প্রতিপালক! আমার কাছে দেখা দিন যাতে আমি আপনাকে দেখতে পারি । আল্লাহ বললেন, আমাকে কখনও দেখতে পারবে না । বরং পাহাড়ের দিকে তাকাও, যদি তা নিজ স্থানে স্থির থাকে, তবে তুমি আমাকে দেখবে । যখন তাঁর প্রতিপালক পাহাড়ে তাঁর জ্যোতি প্রকাশ করলেন, তখন তা পাহাড়কে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে ফেললো, আর মূসা জ্ঞানহীন হয়ে পড়লো । যখন জ্ঞান ফিরে পেলো, তখন মূসা বলল, মহা পবিত্র আপনি, বা আপনি দর্শন থেকে পবিত্র, আমি আপনার কাছে ক্ষমা চাইছি এবং আমিই সর্বপ্রথম আপনার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করছি।" (৭:১৪৩)

আগের আয়াতের আলোচনায় আমরা জেনেছি, মহান আল্লাহ তাওরাত গ্রন্থ গ্রহণ করতে হযরত মূসা (আ.)কে তুর পাহাড়ে চল্লিশ দিন ধরে অবস্থানের আহবান জানান। এ আয়াতে বলা হচ্ছে, হযরত মূসা (আ.) তুর পাহাড়ে আসেন এবং মহান আল্লাহর সাথে কথা বলেন। হযরত মূসা (আ.)’র কাছে উত্থাপিত বনী ইসরাইলের বিভিন্ন দাবির মধ্যে একটি দাবি ছিল, মহান আল্লাহকে চোখ দিয়ে দেখা । তাই, মূসা (আ.) মহান আল্লাহর কাছে এ দাবি পেশ করে বলেনঃ হে আল্লাহ যদি সম্ভব হয়, তাহলে আমার সামনে এমনভাবে দেখা দিন, যাতে আমি আপনাকে আমার চোখ দিয়ে দেখতে পারি এবং যাতে আমার জাতির কাছে এটা বলতে পারি যে, আমি আল্লাহকে দেখেছি। কিন্তু মহান আল্লাহ এর উত্তরে বলেনঃ না, তুমিও আমাকে কখনও দেখতে পারবে না, কারণ, আমি দর্শনাতীত, অবশ্য আমার ক্ষমতা ও শক্তির নিদর্শন দেখতে পাবে। আর এ জন্যে এ পাহাড়ের দিকে তাকিয়ে দেখ, তা আমার ইচ্ছায় কিভাবে ধ্বংস হয়ে  গেছে। এ অবিশ্বাস্য ঘটনা দেখে হযরত মূসা (আ.) জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন এবং মাটিতে পড়ে যান। পরে হুঁশ ফিরে এলে তিনি বলেন, আমি সবার আগে আপনার প্রতি ঈমান আনলাম এবং আপনার শক্তি ও মহামহিমা বা মহা প্রতাপের সাক্ষ্য দিচ্ছি। আর এ ধরনের অযৌক্তিক দাবি উত্থাপনের জন্যে আাপনার কাছে ক্ষমা চাইছি। নিশ্চয়ই আপনি চোখে দেখার অনেক উর্ধ্বে ও এ ধরনের সীমাবদ্ধতা থেকে পবিত্র ।
আমীরুল মুমিনিন হযরত আলী (আ.)’র কাছে এক ব্যক্তি প্রশ্ন করেন, আপনি কি আল্লাহকে দেখেছেন যে এভাবে তাঁর ইবাদত করছেন? উত্তরে তিনি বললেন, যে আল্লাহকে আমি দেখি না বা জানি না আমি তাঁর ইবাদতও করি না, অবশ্য দেখা বলতে আমি চোখ দিয়ে দেখা নয়, বরং অন্তর দিয়ে দেখাকে বোঝাচ্ছি । অন্য এক সময় তিনি বলেছেন, আমি এমন কোনো কিছু দেখিনি যার সাথে এবং  আগে ও পরে আল্লাহ ছিলেন না । সূরা আনআমের ১০৩ নম্বর আয়াতেও মহান আল্লাহ বলেছেন, চোখ তাঁকে দেখতে পারে না, কিন্তু তিনি সব চোখ দেখতে পান ।

এ আয়াত থেকে আমাদের মনে রাখা দরকার:
এক. মহান আল্লাহকে জানা বা বোঝার জন্যে তাঁর মহিমা ও ক্ষমতার নিদর্শনের দিকে লক্ষ্য করা উচিত এবং সমস্ত সৃষ্টি  জগতই   আল্লাহর নিদর্শন ।
দুই. আল্লাহর কাছ থেকে অযৌক্তিক কিছু আশা করা ঠিক নয়, এ ধরনের আশা এবং আল্লাহ সম্পর্কে সব ধরনের ভুল ধারণার ব্যাপারে তওবা করা উচিত ।

সূরা আ'রাফের ১৪৪ ও ১৪৫ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে-
  قَالَ يَا مُوسَى إِنِّي اصْطَفَيْتُكَ عَلَى النَّاسِ بِرِسَالَاتِي وَبِكَلَامِي فَخُذْ مَا آَتَيْتُكَ وَكُنْ مِنَ الشَّاكِرِينَ (144) وَكَتَبْنَا لَهُ فِي الْأَلْوَاحِ مِنْ كُلِّ شَيْءٍ مَوْعِظَةً وَتَفْصِيلًا لِكُلِّ شَيْءٍ فَخُذْهَا بِقُوَّةٍ وَأْمُرْ قَوْمَكَ يَأْخُذُوا بِأَحْسَنِهَا سَأُرِيكُمْ دَارَ الْفَاسِقِينَ (145)

"আল্লাহ বললেন, হে মূসা! নিশ্চয়ই আমি তোমাকে আমার বাণী ও বাক্যালাপের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছি। তাই, আমি যা দিয়েছি তা অর্থাৎ তাওরাত কিতাব গ্রহণ কর ও কৃতজ্ঞ হও।" (৭:১৪৪)
"তাওরাত গ্রন্থে আমি তোমার জন্যে সব বিষয়ের উপদেশ ও সব বিষয়ে বিবৃতি লিখে দিয়েছি। অতএব, তুমি তা দৃঢ়ভাবে ধারণ কর এবং তোমার জাতির লোকদেরকে তার কল্যাণকর বিষয়গুলোকে গ্রহণ করতে বল। আমি শিগগিরই তোমাকে সত্য ত্যাগীদের বাসস্থান দেখাবো।" (৭:১৪৫)

তুর পাহাড়ে ৪০ দিন অবস্থানকালে হযরত মূসা (আ.)’র কাছে মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে তাওরাত গ্রন্থ নাজেল হয়। পাথরের ফলকে এ ঐশী প্রত্যাদেশ নাজেল হয়েছিল। আল্লাহ এ গ্রন্থের বিধানগুলো কঠোরভাবে আঁকড়ে ধরতে এবং বনী ইসরাইলকে এর বিধানগুলো মেনে চলতে বলার জন্যে  হযরত মূসা  (আ.)’র প্রতি আহবান জানান।

এ দুই আয়াত থেকে আমাদের মনে রাখা দরকারঃ
এক.  ফেরাউনের মতো অত্যাচারী ও খোদাদ্রোহী শাসকদের রাষ্ট্র ব্যবস্থা উৎখাত ও খোদায়ী রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার পর  এ রাষ্ট্রে অবশ্যই খোদায়ী বিধি বিধান বাস্তবায়ন করতে হবে ।
দুই.   ঐশী কিতাব বা খোদায়ী গ্রন্থ লাভের জন্যে বিশেষভাবে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা উচিত। আর এ ধরনের মহা অনুগ্রহের জন্যে কৃতজ্ঞতা হিসেবে আল্লাহর বিধানগুলো মানা উচিত, কিছু নৈতিক উপদেশ প্রচারই এ জন্যে যথেষ্ট নয় ।

 সূরা আরাফের ১৪৬ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে-
  سَأَصْرِفُ عَنْ آَيَاتِيَ الَّذِينَ يَتَكَبَّرُونَ فِي الْأَرْضِ بِغَيْرِ الْحَقِّ وَإِنْ يَرَوْا كُلَّ آَيَةٍ لَا يُؤْمِنُوا بِهَا وَإِنْ يَرَوْا سَبِيلَ الرُّشْدِ لَا يَتَّخِذُوهُ سَبِيلًا وَإِنْ يَرَوْا سَبِيلَ الْغَيِّ يَتَّخِذُوهُ سَبِيلًا ذَلِكَ بِأَنَّهُمْ كَذَّبُوا بِآَيَاتِنَا وَكَانُوا عَنْهَا غَافِلِينَ (146)

"পৃথিবীতে যারা অন্যায়ভাবে গর্ব করে বেড়ায়, আমি শিগগিরই তাদেরকে আমার নিদর্শন হতে বিমুখ করবো এবং যদি তারা আমার সমস্ত নিদর্শন দেখে, তবুও তারা এতে বিশ্বাস করবে না, যদি তারা সুপথ দেখে তবুও তারা ঐ পথ গ্রহণ করবে না এবং যদি ভুল পথ দেখে, তবে তারা সে পথই গ্রহণ করবে ; এটা এ জন্যে যে তারা আমার নিদর্শনাবলীতে অবিশ্বাস করেছিল এবং ওতে অমনোযোগী ছিল।" (৭:১৪৬)

আগের আয়াতে আল্লাহর বিধান  দৃঢ়ভাবে মেনে চলা ও তা বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব দেয়ার পর এ আয়াতে বলা হচ্ছে - যারা আল্লাহর বিধানের কাছে নতি স্বীকার করে না এবং অহংকার করে, তারা সত্য গ্রহণে প্রস্তুত নয় । এমনকি তাঁরা মহান আল্লাহর ক্ষমতার অনেক নিদর্শন দেখা এবং সত্যের পথকে বোঝার পরও সত্য গ্রহণ করে না। আসলে তারা উন্নতি ও পূর্ণতার পথের সন্ধান করে না এবং তারা যেখানেই যাক না কেন সত্য থেকে পালিয়ে বেড়ায়।

এ আয়াত থেকে আমাদের মনে রাখা দরকারঃ
এক.  মহান আল্লাহর নিদর্শনকে অস্বীকার করা ও আল্লাহর বিরুদ্ধে বিদ্রোহের মূল উৎস হলো অহংকার বা গর্ব ।
দুই. আল্লাহর মোকাবেলায় অহংকারের পরিণতি হলো সুপথ থেকে বঞ্চিত হওয়া এবং আল্লাহ বিনা কারণে কারো ওপর অনুগ্রহ করা বন্ধ করেন না। #


Thursday, May 1, 2014

আমি না দেখেই বিশ্বাস করি আল্লাহ আছেন-আছে জান্নাত জাহান্নাম..কারণ-

আমি না দেখেই বিশ্বাস করি আল্লাহ আছেন-আছে জান্নাত জাহান্নাম..কারণ-


``জ্ঞানী মানুষও চিন্তার সংকীর্ণতার কারণে কীভাবে মূর্খের মতো আচরণ করতে পারে তার একটা উদাহরণ হলো শিরোনামে দেওয়া বক্তব্য। উনারা বলে থাকেন ইসলাম কি আজব আজব কথাবার্তা বলে। কি নাকি বেহেশত, দোজখ, জিন, ফেরেশতা আছে। এসব কি কেউ কখনো দেখেছে? ''


গতকাল স্টুডেন্টকে পড়াতে গিয়ে এ চিন্তার অসারতার নতুন একটা দিক খুঁজে পেলাম। যখন বলছিলাম একটা বস্তুকে উপরে ছেড়ে দিলে নিচে নামে কেন। কারণ পৃথিবীর অভিকর্ষ। নিউটনের মহাকর্ষ সূত্রানুযায়ী প্রত্যেক বস্তুই একে অপরকে নিজ দিকে আকর্ষণ করে। এমনকি দুটো কলম পাশাপাশি রেখে দিলেও এরাও আসলে পরস্পরকে আকর্ষণ করে। কিন্তু আকর্ষণের পরমিাণ অনুভূত হবার চেয়ে অনেক কম হওয়ায় দেখা যায়না বা বোঝাই যায়না। তাই বলে কি তাদের আকর্ষণ মিথ্যা????!!!!
 
অসংখ্য উদাহরণ দেওয়া যায়। 

একইভাবে 'চোখে দেখিনা' দোহাই দিয়ে কোনভাবেই জান্নাত জাহান্নামকে অস্বীকার করা যায়না। পৃথিবীর অস্তিত্ব যেমন বাস্তব তার চেয়েও বাস্তব পরকাল। পৃথিবীর সকল কাজ-কর্মের প্রতিফল পাবার জন্যে আরেকটা জগত প্রয়োজন যেখানে এখানে না পাওয়া প্রাপ্য সঠিকভাবে ন্যায় বিচারের মাধ্যমে দেওয়া হবে। প্রকৃত অপরাধীরা শাস্তি পাবে। যারা মহান কাজ সম্পাদন করেও এখানে পুরস্কার পাননি তাদের পুরস্কৃত করা হবে। যারা একাই অসংখ্য মানুষের ক্ষতিসাধন করেছে তাদের থেকে কড়ায় গন্ডায় হিসেব নেওয়া হবে। একমাত্র পরকালের ভয় আর আল্লাহভীতিই মানুষকে অপরাধ থেকে দূরে রাখতে পারে। যে মনে সে যে করছে তার হিসেব দিতে হবে আর যে উল্টোটা মনে করছে দুজনের কাজের প্রকৃতি একই হওয়া সম্ভব নয়। প্রথমজন অবশ্যই অন্যের জন্যে ও সমাজের জন্যে ক্ষতিকর কাজ এড়িয়ে যাবে। 

এছাড়া যে আল্লাহ কুরআনে এত সুন্দর গুছিয়ে মানবজীবনের সব বিষয় আলেঅচনা করেছেন, সমাধান দিয়েছেন নির্ভুল অসংখ্য বৈজ্ঞানিক তথ্য দিয়েছেন তাঁর আর একটি কথা পরকালের ব্যাপারে সেটা বিশ্বাস না করাই অস্বাভাবিক।
 
যে মুহাম্মাদ সা. জীবনে মিথ্যা বলেনি, বানিয়ে কোন কথা বলেননি যার সাক্ষ্য তাঁর ঘোর বিরোধীরাও দিত তিনি পরকালের ব্যাপারে উদ্ভট একটা কথা বলেছেন এটা মেনে নেওয়াও হাস্যকর ও অযৌক্তিক।



আল্লাহ মানুষের সাথে কিভাবে কথা বলেন ?

আল্লাহ মানুষের সাথে কিভাবে কথা বলেন ?



وَمَا كَانَ لِبَشَرٍ أَن يُكَلِّمَهُ اللَّهُ إِلَّا وَحْيًا أَوْ مِن وَرَاءِ حِجَابٍ أَوْ يُرْسِلَ رَسُولًا فَيُوحِيَ بِإِذْنِهِ مَا يَشَاءُ ۚ إِنَّهُ عَلِيٌّ حَكِيمٌ

৫১) কোন৭৮ মানুষই এ মর্যাদার অধিকারী নয় যে, আল্লাহ তার সাথে সরাসরি কথা বলবেন৷ তিনি কথা বলেন হয় অহীর (ইংগিত) মাধ্যমে,৭৯ অথবা পর্দার আড়াল থেকে,৮০ কিংবা তিনি কোন বার্তাবাহক (ফেরেশতা) পাঠান এবং সে তার হুকুমে তিনি যা চান অহী হিসেবে দেয়৷৮১ তিনি সুমহান ও সুবিজ্ঞ৷ ৮২ (আশ শূরা)

উক্ত আয়াতসমূহের তাফহীমুল কুরআনে প্রণীত বিস্তারিত ব্যাখ্যা নীচে দেয়া হল: 

৭৮. বক্তব্যের সূচনা পর্বে যা বলা হয়েছিলো সমাপ্তি পর্যায়েও সেই বিষয়টিই বলা হচ্ছে। কথাটা পুরোপুরি বুঝতে হলে এই সূরার প্রথম আয়াত এবং তার টীকা পুনরায় দেখে নিন।( ৩নং আয়াত: মহাপরাক্রমশালী ও জ্ঞানময় আল্লাহ তোমার কাছে ও তোমার পূর্ববর্তীদের (রসূল) কাছে এভাবেই অহী পাঠিয়ে আসছেন৷  
১. বক্তব্য শুরু করার এই ভঙ্গি থেকেই বুঝা যায়, সেই সময় পবিত্র মক্কার প্রতিটি মাহফিল ও গ্রাম্য বিপণী, প্রতিটি গলি ও বাজার এবং প্রতিটি বাড়ী ও বিপনীতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আন্দোলন ও কুরআনের বিষয়বস্তু নিয়ে যে জোর গুজব, কানাঘুষা ও আলোচনা চলছিলো তা-ই ছিল এর পটভূমি। লোকেরা বলতো : এ ব্যক্তি কোথা থেকে এসব অভিনব কথা নিয়ে আসছে তা কে জানে। এ রকম কথা আমরা কখনো শুনিনি বা হতেও দেখিনি। তারা বলতো : বপ-দাদা থেকে যে দীন চলে আসছে, গোটা জাতি যে দীন অনুসরণ করছে, সমগ্র দেশে যে নিয়ম পদ্ধতি শত শত বছর ধরে প্রচলিত আছে এ লোকটি তার সব কিছুকেই ভুল বলে আখ্যায়িত করছে এবং বলছে, আমি যে দীন পেশ করছি সেটিই ঠিক। এ এক বিস্ময়কর ব্যাপার। তারা বলতো : এ লোকটি যদি এই বলে তার বক্তব্য পেশ করতো যে, বাপ-দাদার ধর্ম এবং প্রচলিত নিয়ম-পদ্ধতির মধ্যে তার দৃষ্টিতে কিছু দোষ-ত্রুটি আছে এবং সে চিন্তা - ভাবনা করে নিজে কিছু নতুন বিষয় বের করেছে তাহলে তা নিয়েও আলোচনা করা যেতো ।কিন্তু সে বলে, আমি তোমাদের যা শুনাচ্ছি তা আল্লাহর বাণী । একথা কি মেনে নেয়া যায় । আল্লাহ কি তাঁর কাছে আসেন ৷ না কি সে আল্লাহর কাছে যায়। না তার ও আল্লাহর মধ্যে কথাবার্তা হয় ৷ এসব আলোচনা ও কানাঘুষার জবাবে বাহ্যত রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে উদ্দেশ্য করে কিন্তু মূলত কাফেরদের শুনিয়ে বলা হয়েছে : হাঁ , মহাপরাক্রমশালী ও জ্ঞানময় আল্লাহ অহীর মাধ্যমে এসব কথাই বলছেন এবং পূর্বের সমস্ত নবী-রসূলদের কাছে এসব বিষয় নিয়েই অহী নাযিল হতো ।
অহীর আভিধানিক অর্থ হচ্ছে, দ্রুত ইংগিত এবং গোপন ইংগিত অর্থাৎ এমন ইংগিত যা অতি দ্রুত এমনভাবে করা হবে যে তা কেবল ইংগিতদাতা এবং যাকে ইংগিত করা হয়েছে সেই জানতে ও বুঝতে পারবে । তাছাড়া অন্য কেউ তা জানতে পারবে না । এ শব্দটিকে পারিভাষিক অর্থে এমন দিক নির্দেশনা বুঝাতে ব্যবহার করা হয়েছে যা আল্লাহর এ বাণীর উদ্দেশ্য হলো, কোন বান্দার কাছে আল্লাহর আসার কিংবা তাঁর কাছে কোন মানুষের যাওয়ার এবং সামনাসামনি কথা বলার কোন প্রশ্নই ওঠে না। তিনি মহাপরাক্রমশালী ও জ্ঞানময়। মানুষের হিদায়াত ও দিকনির্দেশনার জন্য যখনই তিনি কোন বান্দার সাথে যোগাযোগ করতে চান তখন কোন অসুবিধাই তাঁর ইচ্ছার পথে প্রতিবন্ধক হতে পারে ।এ কাজের জন্য তিনি তাঁর জ্ঞান দ্বারা অহী পাঠানোর পথ অবলম্বন করেন। সূরার শেষ আয়াতগুলোতে এ বিষয়টিরই পুনরাবৃত্তি করা হয়েছে এবং সেখানে বিষয়টি আরো পরিষ্কার করে বলা হয়েছে।
তাদের ধারণা ছিল এসব হচ্ছে অদ্ভুত ও অভিনব কথা। তার জবাবে বলা হয়েছে, এসব অদ্ভুত ও অভিনব কথা নয়। বরং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পূর্বে যত নবী-রসূল এসেছেন আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদের সকলকেই এসব হিদায়াতই দান করা হতো। ) 

৭৯. এখানে অহী অর্থ 'ইলকা', ইলহাম, মনের মধ্যে কোন কথা সৃষ্টি করে দেয়া কিংবা স্বপ্নে কিছু দেখিয়ে দেয়া, যেমন হযরত ইবরাহীম ও ইউসুফকে দেখানো হয়েছিলো (ইউসুফ, আয়াত ৪ ও ১০০ এবং আস সাফফাত, ১০২)

৮০. এর সারমর্ম হচ্ছে, বান্দা শব্দ শুনতে পায় কিন্তু শব্দদাতাকে দেখতে পায় না, যেমন হযরত মূসার ক্ষেত্রে ঘটেছিলো। তূর পাহাড়ের পাদদেশে একটি বৃক্ষ থেকে হঠাৎ আওয়াজ আসতে শুরু হলো। কিন্তু যিনি কথা বললেন তিনি তার দৃষ্টির আড়ালেই থাকলেন (ত্বাহা আয়াত ১১ থেকে ৪৮, আন নামল, আয়াত ৮ থেকে ১২; আল কাসাস, আয়াত ৩০ থেকে ৩৫)

৮১. যে পদ্ধতিতে নবী-রসূলদের কাছে সমস্ত আসমানী কিতাব এসেছে এটা অহী আসার সেই পদ্ধতি। কেউ কেউ এ আয়াতাংশের ভুল ব্যাখ্যা করে এর অর্থ করেছেনঃ আল্লাহ রসূল প্রেরণ করেন যিনি তার নির্দেশে সাধারণ লোকদের কাছে তাঁর বাণী পৌছিয়ে দেন।" কিন্তু কুরআনের ভাষা-----আরবী-------(তারপর সে তাঁর নির্দেশে তিনি যা চান তাই অহী হিসেবে দেয়।) তাদের এই ব্যাখ্যার ভ্রান্তি সম্পূর্ণ স্পষ্ট করে দেয়। সাধারণ মানুষের সামনে নবীদের তাবলীগী কাজকর্মকে "অহী প্রদান" অর্থে না কুরআনের কোথাও আখ্যায়িত করা হয়েছে, না আরবী ভাষায় মানুষের সাথে মানুষের কথাবার্তাকে 'অহী' শব্দ দ্বারা ব্যাখ্যা করার কোন অবকাশ আছে। অহীর আভিধানিক অর্থই হচ্ছে গোপন এবং ত্বরিত ইংগিত । নবী-রসূলদের তাবলীগী কাজকর্ম বুঝাতে এই শব্দটির ব্যবহার শুধু এমন ব্যক্তিই করতে পারে যে আরবী ভাষায় একবারেই অজ্ঞ।

৮২. অর্থাৎ তিনি কোন মানুষের সাথে সামনা -সামনি কথাবার্তা বলার বহু উর্ধে। নিজের কোন বান্দার কাছে নির্দেশনা পৌছিয়ে দেয়ার জন্য সামনা সামনি বাক্যালাপ করা ছাড়া আর কোন কৌশল উদ্ভাবন করতে তার জ্ঞান অক্ষম নয়।

আলমে আরওয়াহতে আল্লাহর সাথে সমস্ত মানব রূহের কথোপকথন ও বিস্তারিত ব্যাখ্যা

আলমে আরওয়াহতে আল্লাহর সাথে সমস্ত মানব রূহের কথোপকথন ও বিস্তারিত ব্যাখ্যা

সুরা আরাফের ১৭২ ও ১৭৩নং আয়াতে বলা হয়েছে: 
১৭২) আর হে নবী! ১৩৩  লোকদের স্মরণ করিয়ে দাও সেই সময়ের কথা যখন তোমাদের রব বনী আদমের পৃষ্ঠদেশ থেকে তাদের বংশধরদের বের করিয়েছিলেন এবং তাদেরকে তাদের নিজেদের ওপর সাক্ষী বানিয়ে জিজ্ঞেস করেছিলেনঃ আমি কি তোমাদের রব নই? তারা বলেছিলঃ নিশ্চয়ই তুমি আমাদের রব , আমরা এর সাক্ষ দিচ্ছি৷ ১৩৪  এটা আমি এ জন্য করেছিলাম যাতে কিয়ামতের দিন তোমরা না বলে বসো, আমরা তো একথা জানতাম না ৷  ১৭৩) অথবা না বলে ওঠো, শিরকের সূচনা তো আমাদের বাপ -দাদারা আমাদের পূর্বেই করেছিলেন এবং পরবর্তীকালে তাদের বংশে আমাদের জন্ম হয়েছে৷ তবে কি ভ্রষ্টাচারী লোকেরা যে অপরাধ করেছিল সে জন্য তুমি আমাদের পাকড়াও করছো? ১৩৫ 


তাফহীমুল কুরআনে প্রণীত উক্ত আয়াতসমূহের বিস্তারিত ব্যাখ্যা নীচে দেয়া হল: 

১৩৩. পূর্ববর্তী আলোচনা যেখানে শেষ হয়েছিল সেখানে বলা হয়েছিল, মহান আল্লাহ বনী ইসরাঈললের কাছ থেক বন্দেগী ও আনুগত্যের অংগীকার নিয়েছিলেন এখন সাধারণ মানুষকে সম্বোধন করে তাদেরকে জানানো হচ্ছে যে এ ব্যাপারে বনী ইসরাঈলের কোন বিশেষত্ব নেই বরং প্রকৃতপক্ষে তোমরা সবাই নিজেদের স্রষ্টার সাথে একটি অংগীকারে আবদ্ধ এবং এ অংগীকার তোমরা কতটুকু পালন করেছো সে ব্যাপারে তোমাদের একদিন জবাবদিহি করতে হবে।
১৩৪. বিভিন্ন হাদীস থেকে জানা যায় এটি আদম সৃষ্টির সময়কার একটি ঘটনা।সে সময় একদিকে যেমন ফেরেশতাদের একত্র করে প্রথম মানুষটিকে সিজদা করানো হয়েছিল এবং পৃথিবীতে মানুষের খিলাফতের কথা ঘোষণা করা হয়েছিল, অন্যদিকে ঠিক তেমনি কিয়াতম পর্যন্ত আদমের যে অগণিত সংখ্যক বংশধর জন্মলাভ করবে মহান আল্লাহ তাদের সবাইকে একই সংগে সজীব ও সচেতন সত্তায় আবির্ভূত করে নিজের সামনে উপস্থিত করেছিলেন এবং তাদের কাছ থেকে তার রব হবার ব্যাপারে সাক্ষ্য গ্রহণ করেছিলেন। এ আয়াতের ব্যাখ্যায় হযরত উবাই ইবনে কা'ব রাদিয়াল্লাহু আনহু সম্ভবত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে জ্ঞান লাভ করে যা কিছু বর্ণনা করেন তা এ বিয়ষের সবচেয়ে ভাল ব্যাখ্যা বলে আমার কাছে মনে হয়ছে।তিনি বলেনঃ
"মহান আল্লাহ সবাইকে একত্র করেন। (এক এক ধরনের বা এক এক যুগের ) লোকদেরকে আলাদা আলাদা দলে সংগঠিত করেন। তাদেরকে মানবিক আকৃতি ও বাকশক্তি দান করেন। তারপর থেকে অংগীকার গ্রহণ করেন। তাদেরকে নিজেদের ওপর সাক্ষী বানিয়ে জিজ্ঞেস করেনঃ আমি কি তোমাদের রব নই৷ তারা বলেঃ অবশ্যই তুমি আমাদের রব। তখন আল্লাহ বলেনঃ কিয়ামতের দিন যাতে তোমরা না বলতে পারো আমরা তো একথা জানতাম না , তাই আমি তোমাদের ওপর পৃথিবী ও আকাশ এবং তোমাদের পিতা আদমকে সাক্ষী করছি।ভালভাবে জেনে রাখো, আমি ছাড়া ইবাদত লাভের যোগ্য আর কেউ নেই এবং আমি ছাড়া আর কোন রব নেই। তোমরা আমার সাথে আর কাউকে শরীক করো না। আমি তোমাদের কাছে আমার নবী পাঠাবো । আমার সাথে তোমরা যেসব অংগীকার করছো তারা সেসব তোমাদের স্মরণ করিয়ে দেবে। আর তোমাদের প্রতি আমার কিতাব নাযিল করবো। এ কথায় সমস্ত মানুষ বলে ওঠেঃআমরা সাক্ষ দিচ্ছি,তুমিই আমাদের রব, তুমিই আমাদের মাবুদ তুমি ছাড়া আমাদের আর কোন রব ও মাবুদ নেই।"
কেউ কেউ এ ব্যাপারটিকে নিছক রূপক বা উপমা হিসেবে বর্ণিত একটি ব্যাপার মনে করে থাকেন।তাদের মতে এখানে কুরআন মজীদ কেবল একথাই বুঝাতে চায় যে, আল্লাহর রব হবার বিষয়টি স্বীকৃতি মানবিক প্রকৃতির মধ্যে নিহিত রয়েছে এবং এ কথাটি এখানে এমনভাবে বর্ণিত হয়েছে যেমন এটি বাস্তব জগতে অনুষ্ঠিত একটি ঘটনা ছিল । কিন্তু এ ব্যাখ্যাকে আমি সঠিক মনে করি না। কুরআনও হাদীসে এটিকে একটি বাস্তব ঘটনা হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। আর শুধু ঘটনা হিসেবে বর্ণনা করেই শেষ করে দেয়া হয়নি বরং এ সংগে একথাও বলা হয়েছে যে, কিয়ামতের দিন অনাদিকালের এ অংগীকারটিকে মানুষের বিরুদ্ধে একটি দলীল ও প্রমাণ হিসেবে পেশ করা হবে। কাজেই একে নিছক একটি রূপক বর্ণনা গণ্য করার কোন কারণ আমি দেখি না। আমার মতে, বাস্তবে যেমন বিভিন্ন ঘটনা ঘটে থাকে ঠিক তেমনিভাবে এ ঘটনাটিও ঘটেছিল। মহান ও সর্বশক্তিমান আল্লাহ কিয়ামত পর্যন্ত যেসব মানুষকে সৃষ্টি করতে চেয়েছিলেন। তাদের সবাইকে বাস্তবে একই সংগে জীবন,চেতনা ও বাকশক্তি দান করে নিজের সামনে হাযির করেছিলেন এবং বাস্তবে তাদেরকে এ সত্যটি সম্পর্কে পুরোপুরি অবহিত করেছিলেন যে, তাঁর মহান, পবিত্র ও উন্নত সত্তা ছাড়া তাদের আর কোন রব ও ইলাহ নেই এবং তাঁর বন্দেগী ও হুকুমের আনুগত্য (ইসলাম) ছাড়া তাদের জন্যে আর কোন সঠিক জীবন বিধান নেই। এ সম্মেলন অনুষ্ঠানকে কোন ব্যক্তি যদি অসম্ভব মনে করে থাকে তাহলে এটি নিছক তার চিন্তার পরিসরের সংকীর্ণতার ফল ছাড়া আর কিছুই নয়। অন্যথায় বাস্তবে মানব সন্তানের বর্তমান পর্যায়ক্রমিক জন্ম ও বিকাশ যতটা সম্ভব সৃষ্টির আদিতে তার সামষ্টিক আবির্ভাব ও অন্তে তার সামষ্টিক পুনরুত্থান ও সমাবেশ ঠিক ততটাই সম্ভবপর। তাছাড়া মানুষের মত একটি সচেতন, বুদ্ধিমান, ও স্বাধীন ক্ষমতা সম্পন্ন সৃষ্টিকে পৃথিবীতে নিজের প্রতিনিধি হিসেবে নিযুক্তির প্রাক্কালে আল্লাহর পক্ষ থেকে তাকে প্রকৃত সত্য জানিয়ে দেয়া এবং তার কাছ থেকে নিজের পক্ষে বিশ্বস্ততার অংগীকার নিয়ে নেয়াটা অত্যন্ত যুক্তিসংগত বলেই মনে হচ্ছে। এ ধরনের একটা ঘটনা ঘটা মোটেই বিস্ময়কর নয়। বরং এ ধরনের একটা ঘটনা না ঘটলেই অবাক হতে হতো।
১৩৫. আদিকালে তথা সৃষ্টির সূচনা লগ্নে সমগ্র মানব জাতির কাছ থেকে যে অংগীকার নেয়া হয়েছিল এখানে তার উদ্দেশ্য বর্ণনা করা হয়েছে। সেই উদ্দেশ্য হচ্ছে মানব জাতির মধ্যে থেকে যারা আল্লাহর বিরুদ্ধে বিদ্রোহাত্মক আচরণ করবে তারা যেন নিজেরাই নিজেদের এ অপরাধের জন্যে সম্পূর্ণরূপে দায়ী হয়। নিজেদের সাফাই গাইবার জন্যে না জানার ওজুহাত পেশ করার কোন সুযোগ যেন তাদের না থাকে এবং পূর্ববর্তী বংশধরদের ওপর নিজেদের গোমরাহীর সমস্ত দায়-দায়িত্ব চাপিয়ে দিয়ে নিজেরা দায়মুক্ত হতেও না পারে। অন্য কথায় বলাযায়, প্রত্যেকটি মানুষ ব্যক্তিগত পর্যায়ে নিজের মধ্যে আল্লাহর একমাত্র ইলাহ ও একমাত্র রব হবার সাক্ষ ও স্বীকৃতি বহন করে চলেছে, আদিতম অংগীকারকে আল্লাহ প্রত্যেকটি মানুষের জন্যে এরি প্রমাণ হিসেবে গণ্য করেছেন। এ জন্যে কোন ব্যক্তি নিজের অজ্ঞতা অথবা ভ্রান্ত পরিবেশে লালিত হবার কারণে তার গোমরাহীর জন্যে মোটেই দায়ী নয়, একথা কোনক্রমেই বলা যেতে পারে না।
এখন প্রশ্ন দেখা দেয়, সৃষ্টির প্রথম দিনের এ অংগীকার যদি বাস্তবে সংঘটিত হয়েও থাকে তাহলে তা কি আমাদের চেতনা ও স্মৃতিপটে সংরক্ষিত আছে৷ আমাদের মধ্য থেকে কোন একজনও কি একথা জানে , সৃষ্টির সুচনা লগ্নে তাকে আল্লাহর সামনে পেশ করা হয়েছিল, সেখানে তার সামনে ----(আমি কি তোমাদের রব নই৷ ) প্রশ্ন করা হয়েছিল এবং তার জবাবে সে বলছিল ------(হ্যাঁ৷)জবাব যদি নেতিবাচক হয়ে থাকে, তাহলে যে অংগীকারের কথা আমাদের চেতনা ও স্মৃতিপটে থেকে উধাও হয়ে গেছে তাকে কেমন করে আমাদের বিরুদ্ধে প্রমাণ হিসেবে গণ্য করা যেতে পারে৷
এর জবাবে বলা যায়, সেই অংগীকারের কথা যদি মানুষের চেতনা ও স্মৃতিপটে জাগরুক রাখা হতো তাহলে, মানুষকে দুনিয়ার বর্তমান পরীক্ষাগারে পাঠানো ব্যাপারটা একেবারে অর্থহীন হয়ে যেতো। কারণ এরপর পরীক্ষার আর কোন অর্থই থাকতো না। তাই এ অংগীকারের কথা চেতনা ও স্মৃতিপটে জাগরুক রাখা হয়নি ঠিকই কিন্তু অবচেতন মনে ও সুপ্ত অনুভূতিতে তাকে অবশ্যি সংরক্ষিত রাখা হয়েছে। তার অবস্থা আমাদের অবচেতন ও অনুভূতি সঞ্জাত অন্যান্য জ্ঞানের মতই। সভ্যতা, সংস্কৃতি, নৈতিক ও ব্যবহারিক জীবনের সকল বিভাগে মানুষ আজ পর্যন্ত যা কিছুর উদ্ভব ঘটিয়েছিল তা সবই আসলে মানুষের মধ্যে প্রচ্ছন্নভাবে বিরাজিত ছিল। বাইরের কার্যকারণ ও ভিতরের উদ্যোগ আয়োজন ও চেষ্টা সাধনা মিলেমিশে কেবলমাত্র অব্যক্তকে ব্যক্ত করার কাজটুকুই সম্পাদন করেছে। এমন কোন জিনিস যা মানুষের মধ্যে অব্যক্তভাবে বিরাজিত ছিল না, তাকে কোন শিক্ষা , অনুশীলন ,পরিবেশের প্রভাব ও আভ্যন্তরীন চেষ্টা-সাধনার বলে কোনক্রমেই তার মধ্যে সৃষ্টি করা সম্ভব নয় এটি একটি জাজ্বল্যমান সত্য। আর এ প্রভাব -প্রচেষ্টাসমূহ নিজের সর্বশক্তি নিয়োগ করলেও মানুষের মধ্যে যেসব জিনিস অব্যক্তভাবে বিরাজিত রয়েছে তাদের কোনটিকেও পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন করে দেবার ক্ষমতা রাখে না। বড় জোর তারা তাকে তার মূল স্বাভাব প্রকৃতি থেকে বিকৃত করতে পারে মাত্র। তবুও সব রকমের বিকৃতি ও বিপথগামীতা সত্ত্বেও সেই জিনিসটি তার মধ্যে বিদ্যমান থাকবে, আত্মপ্রকাশের প্রচেষ্টা চালাতে থাকবে এবং বাইরের আবেদন সাড়া দেয়ার জন্যে সর্বক্ষণ উন্মুখ থাকবে। এ ব্যাপারটি যেমন আমি ইতিপূর্বে বলেছি , আমাদের সকল প্রকার অবচেতন ও প্রচ্ছন্ন অনুভূতি লব্দ জ্ঞানের ক্ষেত্রে সর্বতোভাবে সত্যঃ
:এগুলো সবই আমাদের মধ্য অব্যক্তভাবে রয়েছে। আমরা বাস্তবে যা কিছু ব্যক্ত করি এবং যেসব কাজ করি তার মাধ্যমেই এগুলোর অস্তিত্বের নিশ্চিত প্রমাণ আমরা পেয়ে থাকি।
: এগুলোর কার্যকর অভিব্যক্তির জন্যে বাইরের আলোচনা (স্মরণ করিয়ে দেয়া)শিক্ষা, অনুশীলন ও কাঠামো নির্মাণের প্রয়োজন হয়। আর আমাদের দ্বারা বাস্তবে যা কিছু সংঘটিত হয়, তা আসলে বাইরের সেই আবেদনেরই সাড়া বলে প্রতীয়মান হয় যা আমাদের মধ্যে সুপ্তভাবে বিরাজমান জিনিসসমূহের পক্ষ থেকে এসে থাকে।
: ভিতরের ভ্রান্ত কামনা বাসনা ও বাইরের প্রতিকূল প্রভাব, প্রতিপত্তি ও কার্যক্রম এগুলোকে দাবিয়ে দিয়ে বিকৃত ও বিপথগামী করে এবং এগুলোর ওপর আবরণ ফেলে দিয়ে এগুলোকে নিস্তেজ ও নিষ্ক্রিয় করে দিতে পারে কিন্তু সম্পূর্ণরূপে নিশ্চিহ্ন করে দিতে পারে না। আর এজন্যেই ভিতরের চেতনা ও বাইরের প্রচেষ্টা -উভয়ের সহায়তায়, সংস্কার, সংশোধন ও পরিবর্তন (conversion) সম্ভবপর।
বিশ্ব জাহানে আমাদের যথার্থ মর্যাদা এবং বিশ্ব জাহানের স্রষ্টার সাথে আমাদের সম্পর্কের ব্যাপারে আমরা যে সুপ্ত চেতনা লব্দ জ্ঞানের অধিকারী তার অবস্থাও এ একই পর্যায়ভুক্তঃ এ জ্ঞান যে আবহামানকাল ধরেই বিরাজমান তার প্রমাণ হচ্ছে এই যে,তা মানব জীবনের প্রতি যুগে পৃথিবীর সব এলাকায়, প্রতিটি জনপদে প্রত্যেকটি বংশে প্রজন্মে ও পরিবারে আত্মপ্রকাশ করেছে এবং কখনো দুনিয়ার কোন শক্তিই তাকে নিশ্চিহ্ন করতে সক্ষম হয়নি।
: ঐ জ্ঞান যে প্রকৃত সত্যের অনুরূপ তার প্রমাণ হচ্ছে এই যে, যখনই তা আত্মপ্রকাশ করে আমাদের জীবনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে তখনই তা সুষ্থ ও কল্যাণকর ফল প্রদান করতে সক্ষম হয়েছে।
: তার আত্মপ্রকাশ করার ও কার্যকর রূপলাভ করার জন্যে সবসময় একটি বহিরাগত আবেদনের প্রয়োজন হয়েছে। তাই নবীগণ, আসমানী কিতাবসমূহ ও তাদের আনুগত্যকারী সত্যের আহবায়কদের সবাই এ দায়িত্বই পালন করে এসেছেন। এ জন্যেই কুরআনে তাদেরকে মুযক্কির (স্মারক) এবং তাদের কাজকে তাযকীর (স্মরণ করিয়ে দেয়া), যিকর (স্মরণ )ও তাযকিরাহ(স্মৃতি) ইত্যাদি শব্দাবলীর মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়েছে । এর অর্থ দাঁড়ায় নবীগণ ,কিতাবসমূহ ও সত্যের আহবায়কগণ মানুষের মধ্যে কোন নতুন জিনিস সৃষ্টি করেন না, বরং তার মধ্যে আগে থেকেই যে জিনিসটির অস্তিত্ব বিরাজ করছিল তাকে জাগিয়ে তোলেন এবং নতুন জীবনীশক্তি দান করেন মাত্র।
: মানবাত্মার পক্ষ থেকে প্রতি যুগে এ স্মরণ করিয়ে দেবার প্রয়াসে ইতিবাচক সাড়া দেয়া হয়েছে । তার মধ্যে যে প্রকৃতপক্ষে এমন এক জ্ঞান সুপ্ত ছিল , যা নিজের আহবায়কারীরা আওয়াজ চিনতে পেরে তার জবাব দেবার জন্যে জেগে উঠেছে, এটি তার আর একটি প্রমাণ।
: তারপর মূর্খতা, অজ্ঞতা, ইন্দ্রিয় লিপ্সা, স্বার্থপ্রীতি এবং মানুষ ও জিনের বংশদ্ভুত শয়তানদের বিভ্রান্তিকর শিক্ষা ও প্ররোচনা তাকে সবসময় দাবিয়ে রাখার, বিপথগামী ও বিকৃত করার প্রচেষ্টা চালিয়েছে। এর ফলে শিরক, আল্লাহ বিমুখতা , আল্লাহর বিরুদ্ধে বিদ্রাহ এবং নৈতিক ও কর্ম ক্ষেত্রে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। কিন্তু বিভ্রান্তি ও ভ্রষ্টতার এ সমুদয় শক্তির সম্মিলিত প্রচেষ্টা সত্তেও সেই জ্ঞানের জন্মগত ছাপ মানুষের হৃদয়পটে কোন না কোন পর্যায়ে অক্ষুণ্ন থেকেছে। এ জন্যেই স্মরণ করিয়ে দেয়াও নবায়নের প্রচেষ্টা তাকে জাগিয়ে তোলার ব্যাপারে সফল ভুমিকা পালন করে এসেছে।
অবশ্যি দুনিয়ার বর্তমান জীবনে যারা পরম সত্য ও বাস্তবতাকে অস্বীকার করতে বদ্ধপরিকর তারা নিজেদের তথাকথিত যুক্তিবাদের ভিত্তিতে জন্মগতভাবে হৃদয়ফলকে খোদিত এ লিপিটির অস্তিত্ব অস্বীকার করতে পারে অথবা কমপক্ষে একে সন্দেহযুক্ত সাব্যস্ত করতে পারে। কিন্তু যেদিন হিসেব নিকেশ ও বিচারের আদালত প্রতিষ্ঠিত হবে সেদিন মহাশক্তিশালী স্রষ্টা তাদের চেতনা ও স্মৃতিপটে সৃষ্টির প্রথম দিনের সেই সম্মেলনটির স্মৃতি জাগিয়ে তূলবেন। সৃষ্টির প্রথম দিনে তারা একযোগে যে মহান সৃষ্টাকে তাদের একমাত্র রব ও মাবুদ বলে স্বীকার করে নিয়েছিল সেই স্মৃতি আবার পুরোদমে তরতাজা করে দেবেন। তারপর তিনি তাদের নিজেদের অভ্যন্তর থেকে প্রমাণ সংগ্রহ করে এ অংগীকরলিপি যে তাদের হৃদয়ে সবসময় খোদিত ছিল তা দেখিয়ে দেবেন।তাদের জীবনের সংরক্ষিত কার্যবিবরণী থেকে সর্বসমক্ষে এও দেখিয়ে দেবেন যে, তারা কিভাবে হৃদয়ফলকে খোদিত সে লিপিটি উপেক্ষা করেছে, কখন কোন সময় তাদের হৃদয়ের অভ্যন্তর থেকে এ লিপির সত্যতার স্বীকৃতি স্বগতভাবে উচ্চারিত হয়েছে, নিজের ও নিজের চারপাশের ভ্রষ্টতার ওপর তাদের বিবেক কোথায় কখন অসম্মতি ও বিদ্রোহের আওয়াজ বুলন্দ করেছে, সত্যের আহবায়কদের আহবানের জবাব দেয়ার জন্যে তাদের অভ্যন্তরের লুকানো জ্ঞান কতবার কত জায়গায় আত্মপ্রকাশে উন্মুখ হয়েছে এবং তারা নিজেদের স্বার্থপ্রীতি ও প্রবৃত্তির লালসার বশবর্তী হয়ে কোন ধরনের তাট বাহানার মাধ্যমে তাকে ক্রমাগত প্রতারিত ও স্তব্ধ করে দিয়েছে। সেদিন যখন এসব গোপন কথা প্রকাশ হয়ে পড়বে তখন যুক্তি-তর্ক করার অবকাশ থাকবে না বরং পরিষ্কারভাবে অপরাধ স্বীকার করে নিতে হবে । তাই কুরআন মজিদ দ্ব্যর্থহীন ভাষায় ঘোষনা করেছেঃ সেদিন অপরাধীরা একথা বলবে না, আমরা মুর্খ ছিলাম অজ্ঞ ছিলাম , আমরা গাফেল ছিলাম বরং তারা একথা বলতে বাধ্য হবে, আমরা কাফের ছিলাম, অর্থাৎ আমরা জেনে বুঝে সত্যকে অস্বীকার করেছিলাম।
------------------------------------
"আর তারা নিজেদের ব্যাপারেই সাক্ষ দেবে, তারা কাফের তথা অস্বীকার ও প্রত্যাখ্যানকারী ছিল।" (আনআমঃ ১৩০) 



নামাজের তাশাহুদে বর্ণিত শবে মেরাজে আল্লাহ ও তাঁর রাছুলের কথোপকথন: ইতিহাস, ব্যাখ্যা গুরুত্ব ও মাসয়ালা

নামাজের তাশাহুদে বর্ণিত শবে মেরাজে আল্লাহ ও তাঁর রাছুলের কথোপকথন: ইতিহাস, ব্যাখ্যা গুরুত্ব ও মাসয়ালা



তাশাহহুদ (আত্তাহিয়্যাতু) এর ইতিহাস:

আমরা যারা নামাজ পড়ি, সকলেই জানি নামাজের দ্বিতীয় ও চতুর্থরাক’য়াতের শেষে-তাশাহহুদ পড়া ওয়াজিব। কিন্তু জানা আছে কি তাশাহহুদ এর ইতিহাস ? কি পড়ি আমরা তাশাহহুদ এর মধ্যে ? আসুননা, আমরা আজকে জানার চেষ্টা করি তাশাহহুদ এর অর্থ আর ইতিহাস। শুরুর কথা............ .হযরত খাদিজা (রাঃ) ইন্তেকাল করেছেন। মক্কার মুষ্টিমেয় কিছু মানুষ ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে আশ্রয় লাভ করলেও,,, অধিকাংশই মুশরিক রয়ে গেছে। তাই রাসুল (সাঃ) এর মনে অনেক ব্যাথা। দিনে দিনে রাসুলের (সাঃ) প্রতি কোরাইশদের অত্যাচারের মাত্রাও বেড়ে গেছে। এমন অবস্থায় আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিন রজব মাসের এক মহিমাম্বিত রজনীতে তার প্রিয় বন্ধুকে হযরত জিব্রাইল (আঃ) এর মাধ্যমে তার সান্ধিধ্যে ডেকে নিলেন, যা ইতিহাসে মে’রাজ নামে পরিচিত। রাসুল (সাঃ) বায়তুল্লাহ হয়ে বায়তুল মোকাদ্দাস, অতপর উর্দ্ধজগতের সফর শুরু করলেন। বোরাক নামক বেহেশতি বাহনে চড়ে প্রথম আসমান, দ্বিতীয় আসমান, তৃতীয় আসমান করে অতপর সিদরাতুল মুনতাহায় পৌছলেন। এ পর্যন্ত হযরত জিব্রাইল (আঃ) রাসুল (সাঃ) এর সাথী হলেন। সিদরাতুল মুনতাহাতে গিয়ে হযরত জিব্রাইল (আঃ) রাসুল (সাঃ) এর কাছ থেকে বিদায় নিলেন। আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিন তার বন্ধুর জন্য বোরাকের থেকেও গতি সম্পন্ন বাহন ‘রফরফ’ পাঠিয়ে দিলেন। এ বাহনে চড়ে রাসুল (সাঃ) আল্লাহর নূরের সত্তর হাজার পর্দা অতিক্রম করে মহান প্রভুর দরবারে গিয়ে পৌছলেন। দুজন দুজনার খুব নিকটবর্তী হলেন। আল্লাহ হলেন মেজবান আর আমার নবী (সাঃ) হলেন মেহমান। সুন্নত তরীকা হলো মেহমান কারো বাড়িতে গেলে মেজবানের জন্য কিছু তোহফা/উপহার নিয়ে যাওয়া। স্বয়ং আল্লাহ তায়ালার সাথে সাক্ষাতে গেছেন তার প্রিয় রাসুল (সাঃ), তিনি কি নিয়ে যেতে পারেন ? আল্লাহতো দুনিয়াবী কোন কিছুর মুখাপেক্ষী নন। তাহলে ? আল্লাহর হাবীব জনাবে মোহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (সাঃ) যখন আল্লাহর খুবই নিকটবর্তী হলেন, এমনকি তাদের মাঝে একটি রশি বা একটি ধনুকের সমান জায়গার ব্যাবধান ছিলো তখন- শ্রেষ্ঠ তোহফা হিসেবে পড়লেন. "আত্তাহিয়্যাতু লিল্লাহি ওয়াসসালাওয়াতু ওয়াত্তয়্যিবাত" “সকল মর্যাদাব্যঞ্জক ও সম্মানজনক সম্বোধন আল্লাহর জন্য। সমস্ত শান্তি, কল্যাণ ও প্রাচুর্যের মালিক একমাত্র আল্লাহ। সব প্রকার পবিত্রতার মালিকও তিনি।” এক কথায় রাসুল (সাঃ) আর্থিক, শারিরীক ও মৌখিক সব ধরনের ইবাদাত একমাত্র আল্লাহর জন্য তোহফা হিসেবে পেশ করলেন। অতপর আল্লাহ তায়ালা রাসুল (সা.)কে তিনটি জিনিষ দিলেন এভাবে- "আসসালামু আ’লাইকা আইয়্যুহান নাবিয়্যু ওয়ারাহমাতুল্লহি ওয়াবারাকাতুহু" হে নবী! আপনার প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক, আল্লাহর অনুগ্রহ ও বরকত বর্ষিত হোক। উম্মতের কান্ডারী নবী (সাঃ) এমন মিলন মুহুর্তেও তার উম্মতকে ভুলেন নাই। আল্লাহর অনুগ্রহ তার উম্মতের জন্যও চেয়ে নিলেন এভাবে- "আসসালামু আ’লাইনা ওআ’লা- ই’বাদিল্লাহিস সলিহীন" আমাদের প্রতি এবং আল্লাহর সকল নেক বান্দাহদের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক। আল্লাহ এবং তার রাসুল (সাঃ) এর এমন মধুর আলোচনা শুনে আরশবাহী- সকল ফেরেশাতাগণ সমস্বরে একত্রে বলে উঠলেন- "আশহাদু আন লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াশহাদু আন্না মোহাম্মাদান আ’বদুহু ওয়ারাসুলুহু" আমি সাক্ষ্য দিতেছি যে, আল্লাহ ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই। আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি মোহাম্মাদ (সাঃ) আল্লাহর বান্দাহ এবং রাসুল। আল্লাহ পাক রাব্বুল আ’লামিন, রাসুল (সাঃ) এবং ফেরেশতাদের এমন সম্মিলিত কথোপকথনই হয়ে গেলো তাশাহহুদ, যা মে’রাজের রজনীতে আল্লাহর পক্ষ থেকে তোহফা হিসেবে পাওয়া পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজ সহ প্রত্যেক নামাজের দুই রাকাত বা চার রাকা’তের বৈঠকে পড়া ওয়াজিব

তাশাহুদের বিস্তারিত ব্যাখ্যা:
তাশাহ্’হুদ (আত্তাহিয়্যাতু) পাচ রকমের পাওয়া যায় হাদিসের মাঝে(প্রত্যেকটির নামকরন করা হয়েছে সাহাবাদের নামে যিনি তা বর্ণনা করেছেন)

আমরা শিখব যেটা ইবনে মাসউদ বর্ণনা করেছেন- তিনি বর্ণনা করেন যে নবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) তাকে শিক্ষা দিয়েছেন তার হাত নবী (সঃ) হাতের মাঝে রেখে, ইবনে মাসউদ পরবতীতে বর্ণনা করেছেন তার ছাত্র আলকামাহকে ঠিক সেই ভাবে যেভাবে মুহাম্মদ (সঃ) তাকে শিক্ষা দিয়েছেন এবং আলকামাহ শিক্ষাদেন তার ছাত্র ইবরাহিম -আন-নাকাহ কে ঠিক একই ভাবে ইবরাহিম থেকে হাম্মাদ ইবনে সালামাহ এবং তারপর আবু হানীফা সকলেই একইভাবে হাতের মাঝে হাত রেখে তাদের ছাত্রকে শিক্ষা দেন --এতেই বুঝা যায় তাশাহ্’হুদ (আত্তাহিয়্যাতু) এর গুরুত্ব।

ইবনে আব্বাস ইবনে মাসউদ এবং বাকীরা বর্ননা করেন যে নবী করিম (সঃ) তাশাহ্’হুদ (আত্তাহিয়্যাতু) শিক্ষা দিতেন যেন তিনি কোরআনের সুরা শিক্ষা দিচ্ছেন এটাই প্রামান করে তাশাহ্’হুদ (আত্তাহিয়্যাতু) এবং এটা মুখস্ত করার গুরুত্.।

তাশাহ্’হুদ (আত্তাহিয়্যাতু) ইবনে মাসউদ হতে বর্ননা :
আত্তাহিয়্যাতু লিল্লাহি ওয়াচ্ছালাওয়াতু ওয়াত্’ত্ব্ইয়্যিবাতু
(সমস্ত্ তা’যীম, সমস্ত্ ভক্তি, নামায, সমস্ত্ পবিত্র ইবাদত বন্দেগী আল্লাহর জন্য্, আল্লাহর উদ্দেশ্যে),
আস্’সালামু আ’লাইকা আইয়্যুহান্’নাবিয়্যু ওয়া রহ্’মাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু
(হে নবী! আপনাকে সালাম এবং আপনার উপর আল্লাহর অসীম রহমত ও বরকত)
আস্’সালামু আ’লাইনা ওয়া আলা ই’বদিল্লাহিছ্ ছ্বালিহীন
(আমাদের জন্য এবং আল্লাহর নেক বান্দাদদদের জন্য আল্লাহর পহ্ম্ থেকে শান্তি অবতীর্ন হোক)।
আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহু
(আমি সাহ্ম্ দিচ্ছি যে এক আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোন উপাস্য নাই এবং মোহাম্মদ (দঃ) আল্লাহর বন্দা ও রাসুল।) ।


তাশাহ্’হুদ (আত্তাহিয়্যাতু) এর অর্থ:
আত্তাহিয়্যাতু লিল্লাহি ওয়াচ্ছালাওয়াতু ওয়াত্’ত্ব্ইয়্যিবাত।

আত্তাহিয়্যাত=সম্ভাষণ/অভিনন্দন
বহুবচন ত্তাহিয়্যাত(সম্ভাষণ) এসেছে মুল শব্দ হায়াত মানে জীবন- কারন পূর্ব ইসলামী জাহেলীয়া যুগে মানুষ একে অপরকে সম্ভাষণ/অভিনন্দন জানাত "হায়াকাল্লাহ" বলে যার অর্থ অপর জনের জীবনের জন্য দোয়া. মহানবী (সঃ) পরে আমাদের শিক্ষা দেন ইসলামী সম্ভাষণ/অভিনন্দন ( আসসালামু আলাইকুম) কিন্তু তাহিয়া শব্দ অপরিবর্তিত থেকে যায়।

লিল্লাহি= আল্লাহর জন্য
এটা কি বুঝায় ?? আমরা আল্লাহকে সম্ভাষণ/অভিনন্দন জানাই না, কারন তিনি আস সালাম তাই না?? আমরা কি বলি আল্লাহ আস সালামুআলাই কুম??

একজন বিদ্বান/শিক্ষিত আবদুল্লাহ বি সালিহ আল ইজলি বর্ননা করেন : তিনি বলেন তিনি খুবই কৌতূহলী ছিলেন জানার জন্য এটা "লিল্লাহি" দ্বারা কি বুঝায়। তিনি আর একজন বিদ্বান/শিক্ষিত ব্যক্তির কাছে যান যার নাম আল-কাইশাঈ এবং তিনি বলেন এটার অর্থ "বরকত (আশীর্বাদ/কল্যাণ)" তার পর তিনি বললেন বরকত বলতে কি বুঝায় ?? আল-কাইশাঈ বলেন তিনি এরচেয়ে বেশি জানেন না . আল ইজলি সন্তুষ্ট হতে পারেননি এবং তিনি মুহাম্মদ বিন হাসান আশ-শায়বানির কাছে যান এবং জিগ্গেস করেন " আত্তাহিয়্যাতু লিল্লাহি" বলতে কি বুঝায় এবং মুহাম্মদ বিন হাসান উত্তর দেন এটা একটা শব্দ যা আমরা আল্লাহকে উপাসনা বা শ্রদ্ধা করতে বুঝাই এটুকুই তিনি বলতে পারেন .

আল ইজলি তখনো সন্তুষ্ট হতে পারেন নি মুহাম্মদ বিন হাসান এর উত্তরে তারপর তিনি মুহাম্মদ বিন ইদ্রিস আস-শাফাঈর দ্বারস্থ হন এবং তাকে জিগ্গেস করেন এবং বলেন যাদের কাছেই আমি জিগ্গেস করি কিন্তু সঠিক উত্তর পাচ্ছিনা ,আস-শাফাঈ বলেন তাপনি তাদের কেন জিগ্গেস করেন তারা তো কবিতা জানে না !! . (কারন ঈমাম আস-শাফাঈ একজন দীপ্তিমিান্/উজ্জ্বল কবি ছিলেন) তিনি বলেন


যখন আপনি রাজার দরবারে যান, আপনি রাজাকে সম্ভাষণ/অভিনন্দন করেন মহামান্য/মর্যাদাবান/খ্যাতিমান/উদার রাজা বলে . ঠিক তেমনি " আত্তাহিয়্যাতু লিল্লাহি" বলে আমরা সম্ভাষণ/অভিনন্দন শুধু মাত্র আল্লাহর জন্য করছি যখন আমরা তার সাহাজ্য প্রর্থনা করি নামাজে.

তার মানে "রাজকীয় সম্ভাষণ/অভিনন্দন উপযুক্ত শুধু মাত্র মাহান প্রভু/ আমাদের মালিক আল্লাহর জন্য"-- এটা বলার মানে এমন যে আমরা আল্লাহর হাজ দরবারে প্রবেশ করছি এবং তাকে বলছি সকল প্রশংসা একমাত্র আল্লাহর জন্য।


ওয়াচ্ছালাওয়াত: বহুবচন সালাহর অর্থ আমাদের নামাজ শুধু মাত্র আল্লাহর জন্য এটা দ্বারা উল্লেখ করে সকল প্রকার ইবাদত যা আমরা করি।

ওয়াত্’ত্ব্ইয়্যিবাত: বহুবচন ত্ব্ইয়্যিবের অর্থ সুন্দর জিনিস সমুহ অগ্রহ / আকর্ষন করা কিছু

ওয়াচ্ছালাওয়াতু ওয়াত্’ত্ব্ইয়্যিবাত একসাথে ব্যবহার হয় যা বুঝায় সকল সুন্দর কাজ এবং আমাদের সকল ভাল গুনাবলি ও কাজ এবং অন্যের সাথে ভাল ব্যবহার যাই করি শুধু মাত্র আল্লাহর জণ্য.
দেখুন এই চারটি শব্দের ব্যাপকতা !!!

সুফল: এটা আন্তরিকতা নিশ্চিত করে যে একজন মানুষ তার উন্নতচরিত্র গঠনে সচেস্ট থাকবে. এমন কি আমরা যখন অন্যের সাথে আচার - ব্যবহার করি তার মুল কারন থাকে আল্লাহর সাথে দ্বায় বদ্ধাতা উন্নতচরিত্র গঠনে, এ কারনে নয় যে অন্য জন আমার সাথে কি ভাবে ব্যবহার করল বা তার সম্পকে আমার অনুভূতি/ভাবনা কেমন তার জন্য তা নয় বরং সকলের সাথে উন্নত ব্যবহার নিশ্চিত করা শুধু মাত্র আল্লাহর জন্য।

আস্’সালামু আ’লাইকা আইয়্যুহান্’নাবিয়্যু ওয়া রহ্’মাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু

আস-সালাম: অর্থ শান্তি ও নিরাপত্তা, ইসলাম এসছে একই মুল শব্দ হতে কারন আল্লাহর কাছে আনুগত্য প্রকাশের মাধ্যমে আমরা শান্তি ও নিরাপত্তা পাই/ অর্জন করি।

সুল্লাম: নির্দেশ করে সিড়ি বা মই এসেছে একই শব্দ হতে। কেন? কারন সিড়ি /মই আমাদের নিরাপত্তাহীন /বিপজ্জনক কিছু মনে করায় তাই আরবরা তখন সুল্লাম নাম দিয়েছে যাতে আমাদের প্রথমেই মনে হয় শান্তি ও নিরাপত্তার কথা।

আলাইকা: আপনার উপর ( যেমন আপনার উপর শান্তি বষিত হোক) এটা আরো জোরাল ও আবেগপুর্ণ (ইসমিয়া থেকে) আগে আল্লাহুম্মা সাল্লিম আলা ফুলান, যা আগে ব্যবহৃত হত।

আইয়্যুহান্’নাবিয়্যু: অর্থ হে নবী. নবী এসেছে দুটা মুল শব্দ হতে নাবা: যা বুঝায় খবর যা ১) খুবই শুরুত্বপুর্ন ২) আপনার সাথে সম্পর্ক যুক্ত।
তার মানে নবী হচ্ছেন যিনি খুবই শুরুত্বপুর্ন খবর/সংবাদ আনেন যা আপনার/সকলের জন্য প্রযোজ্য। এমন কিছুই নেই যা নবী (সঃ)বলেছেন যা শুরুত্বপুর্ন ও প্রয়োজনীয় নয়

নাবউন: উচ্চপদ বা প্রসারিত অবস্থা, নবী (সঃ) এমন উচ্চতায় যা সাধারন সকল মানুষ হতে উপরে.

ওয়া রহ্’মাতুল্লাহি: অর্থ অনুকম্পা /ক্ষমা প্রবৃত্তি (আল্লাহর ক্ষমা)
আল্লাহ আপনাকে ক্ষমা করুন/ আল্লাহ আপনাকে অনুকমপা বর্ষন করুন।

ওয়া বারাকাতুহু : অর্থ এবং তার দয়া বারাকাহ এটার মুল শব্দ বুঝায় আল্লাহর আশীর্বাদ যা দীর্ঘস্থায়ী /দীর্ঘ আয়ু ব্যাপি
উদাহরন : আমরা বলি "এবং আল্লাহ তাহার দীর্ঘস্থায়ী আশীর্বাদ আপনার উপর বর্ষন করুন"

আস্’সালামু আ’লাইনা ওয়া আলা ই’বদিল্লাহিছ্ ছ্বালিহীন
(আমাদের জন্য এবং আল্লাহর নেক বান্দাদদদের জন্য আল্লাহর পহ্ম্ থেকে শান্তি অবতীর্ন হোক)।

আস্’সালামু আ’লাইনা=আমাদের জন্য শান্তি অবতীর্ন হোক
ওয়া আলা=এবং (তাদের) উপর
ই’বদিল্লাহিছ্ ছ্বালিহীন = আল্লাহর নেক বান্দাদের
ই’বদিল্লাহ= ইবদ হচ্ছে আবদ এর বহুবচল যার অর্থ বান্দা/গোলাম
ইবাদ- শুধু মাত্র আল্লাহর বান্দা/গোলাম এর ক্ষেত্রে ব্যবহ্যত হয় যেমন ইবাদুর রহমান, ইবাদউল্লাহ ইত্যাদি

আস-ছ্বালিহীন = ন্যায়পরায়ণ/ধার্মিক/সচ্চরিত্র বান্দা
আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহু(আমি সাহ্ম্ দিচ্ছি যে এক আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোন উপাস্য নাই এবং মোহাম্মদ (দঃ) আল্লাহর বন্দা ও রাসুল।)

আশহাদু= মুল শব্দ শাহিদা হতে এসেছে যার অর্থ কোন কিছু স্বচক্ষে দেখা/
সাক্ষ্য দেওয়া/প্রমাণ করা যেমন: ·আমি সাক্ষ্য দিচ্ছিযে.
শাহিদ মানে এমন একজন যাকে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য ডাকা হয় যিনি সচক্ষে দেখেছেন বা কিছু প্রমান করতে পারেন।

আরো দেখেন শহিদ- নিজেকে সবচেয়ে বর/চূড়ান্ত/অধিকতম ভাবে কোরবানি দেয় জীবন বিসর্জন দেয় সবকিছু ত্যাগ করে
আন= অর্থ যে বা যিনি

লা ইলাহা ইল্লাল্লা
লা= নেই/ না প্রধানত বোঝায় একেবারে না - অবশ্যই না - কোন সম্ভাবনা নেই এমন
ইলাহা= ইলাহ রব প্রভু বা উপাসনা/বন্দনা/সেবা/ভক্তি/শ্রদ্ধা
ইলা অর্থ ছাড়া
আল্লাহ
ওয়া= এবং
আশহাদু = আমি সাক্ষ্য দিচ্ছিযে, আমি প্রমান দিচ্ছি যে
আন্না= যে ( অবশ্যই)

এখানে জোর দেয়া হয়েছে কেন এখানে ? কারন প্রথম বাক্যে বিশেষ "লা" জোরালভাবে বা মনের উপর ছাপ রেখে এমন ভাবে প্রকাশ করে কিন্তু এখানে এই লা এর প্রয়োজন ছিল না কারন প্রথম বাক্যে বলা হয়েছে এং এখানে আবার লা বলার কারন যাতে এ দুটো বাক্যই সমান ভাবে জোরালো ভাবে বলা হয় মানে দুটোই সমান গুরুত্বপুর্ন আর এর মাধ্যমে দুটি বাক্যের মাঝে সামঞ্জস্য বজায় থাকে (সুবহানাল্লাহ)

মোহাম্মাদান= যার মুল শব্দ হচ্ছে হামদ মানে প্রশংসা করা - এমন একজন যাকে সমসময় প্রশংসা করা হয় (আহমেদ- যার প্রশংসা করা হয় খুবই সুন্দর আর বিশদ /সম্প্রসারিত ভাবে.

" মোহাম্মাদ " শব্দটি মাত্র চার বার কোরআনে বলা হয়েছে - মোহাম্মদ (সঃ) কে সরাসরি উল্লেখ করে নয় কিন্তা উনার সম্পর্কে বলতে গিয়ে (এবং এর মাঝে তিন বার রাসুল শব্দটি আছে একই আয়াতে)

লক্ষ্য করুন: কোরআনে যখন আল্লাহ অন্য নবীদের সম্পর্কে বলেন তিনি তাদের নামে সম্মোধন করেন যেমন ( ইয়া মুসা, ইয়া ইবরাহিম, ইয়া ঈসা) কিন্তু যখন মুহাম্মদ (সঃ) সম্পর্কে বলেন তখন তাহার শিরোনাম বা টাইটেল দিয়ে সম্মোধন করেন যেমন ইয়া নাবী, ইয়া রাসুল.

আবদুহু = মানে তাহার বাণ্দা/ ক্রীতদাস/গোলাম ,এটা অনেক শক্তিশালী. আমরা জানি নবী বলতে তাদেরকে বুঝায় যাদের স্থান সাধারন মানুষ হতে উপরে তবুও তারা আল্লাহন বাণ্দা/ ক্রীতদাস/গোলাম.

আভিজাত্য, উত্কর্ষ, মহত্ত্ব ,মর্যাদা ,সম্ভ্রম,উপাধি সকলই পাওয়া যায় আল্লহর বাণ্দা/ ক্রীতদাস/গোলাম হওয়ার মাধ্যমে.

ওয়া রাসুলুহু= এবং তাহার (আল্লাহর) বার্তাবহন কারী/দূত/সংবাদ বহন কারী। রাসুল মুল শব্দ বুঝায় ঊর্ধ্বতন/সর্বোচ্চ/সর্বোত্কৃষ্ট কারো কাছ থেকে কোন সংবাদ পাঠানো।

ভাষাগত পার্থক্য নবী ও রাসুলের মাঝে: কোরআনে যখন নবী ব্যবহার করা হয়েছে - তখন সাধারনত বুঝায় উচ্চ স্থান কে এবং গুরুত্বপুর্ন ও সম্পর্ক যুক্ত বার্তা/সংবাদ প্রদানে। নবী শব্দটি মানুষের প্রসঙ্গে বুঝান হয়েছে যেমন হে নবী...বলুন আপনার স্ত্রী দের.. বা বলুন বিশ্বাসী মহিলাদের ইত্যাদি।

কিন্তু যখন আলোচনা প্রসঙ্গ আল্লাহর হয় তখন রাসুল ব্যবহ্যত হয়েছে যেমন "বলুন হে মানব, নিশ্চয়ই আমি আল্লাহর রাসুল/ (সংবাদ বাহক ) যাকে তুমাদের জন্য প্রেরন করা হয়েছে" আবার যেমন বলা হয়েছে হে রাসুল আমার বা্র্তা প্রদান করুন/ ছরিয়ে দিন যা আপনার কাছে প্রকাশ করা হয়েছে


তাত্পর্য: আমরা দোয়াতে সর্বদা বহুবচন ব্যবহার করি - যা সাধারনত মুসলিম উম্মার একত্রতা/এক জাতি/ এক সত্বা হিসেব বোঝাতে জোর দেয়া হয়েছে.

উপকারিতা ১: নামাজের মাধ্যমে আমরা একতা প্রদর্শন করি অনুশীলন করি ও মনোযোগ দেই এক হবার জন্য- যখন সবাই নামাজে দাড়াই একে অপরের পাশে তখন বিবেচনা বা চিন্তা করিনা পাশের জনের অর্থ, বিত্ত, প্রভাব, শিক্ষা, ধনি গরিব, সাদা কালো ইত্যাদি সকলে এক কাতেরে এক সমান আল্লাহর কাছে.

উপকারিতা ২: আমরা দোয়া করতে গিয়ে যাতে স্বার্থপর না হই কিন্তু আমাদের কে বিচক্ষণতা ও সচেতনতার বাস্তবিক হতে হয়। আমরা আমাদের জন্য প্রথমে দোয়া করি তার পর বাকি সকল ঈমানদার মানুষের জন্য দোয়া করি। চিন্তা করে দেখুন যখন বিমানে/প্লেনে ইমারজেন্সি সমপকে বলা হয় তখন বলে অক্সিজেন মাস্ক নামার সাথে সাথে আগে নিজে পড়বেন তার পর আপনার পাশের জন কে পড়াবেন কোরআলে কি তাই বলে না ?? যেমন নিজেকে বাচাও এবং তোমার পরিবারকে বাচাও.

উপকারিতা ৩: আমরা কি সকল মানুষের জন্য দোয়া করি না কি কোন দলের মানুষের জন্য দোয়া করি? নিদ্দিস্ট দলের জন্য তা হল ই’বদিল্লাহিছ্ ছ্বালিহীন = আল্লাহর নেক বান্দাদের জন্য

সকল মুসলিম ঈমানদার বান্দা নামাজে দোয়া করছেন সমসময় পৃথিবী সবখানে. আমি যদি আমাকে মুসলিম ঈমানদার বান্দা হিসেবে ধরি তবে আমিও নিজেকে দোয়াতে যুক্ত করতে পারি সকল মুসলিম ঈমানদার বান্দাদের দোয়াতে সকল নামাজে সকল সময় পৃথিবী সবখানে পরবর্তী প্রজন্মের সময় ও পুর্ববর্তী প্রজন্মের সময়। সুভানাল্লাহ কত বড় নেয়ামত আল্লাহর বরকত আল্লাহর শিক্ষা কত মহান।   

তাশাহুদের গুরুত্ব

ওমর (রা.) বলেন, তাশাহ্হুদ ছাড়া কোন নামাযই যথেষ্ট হয় না [মোসান্নাফ আবদুর রাযযাক, ২য় খন্ড, ২০৬ পৃঃ, সুনামে সায়ীদ ইবনে মনসুর, তারীখে বুখারী, আল আসয়েলাহ, ১ম খন্ড, ১৬৬ পৃঃ]। তাই ইবনে আব্বাস (রা.) ও জাবের (রা.) বলেন, রাসূলুলস্নাহ সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়া সালস্নাম আমাদেরকে তাশাহ্হুদ ঐভাবে শেখাতেন যেমন কুরআনের কোন সূরা শেখাতেন (মুসলিম, নাসায়ী, মেশকাত ৮৫ পৃঃ)। ইবনে ওমর (রা.) বলেন, রসূলুলস্নাহ সালস্নালস্নাহু আলাইহ ওয়া সালস্নাম আমাদেরকে নামাযের তাশাহ্হুদ ঐরূপ শেখাতেন যেমন কোন শিক্ষক ছোট ছেলেদের শেখান। ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, আমরা রাসূলুলস্নাহ সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়া সালস্নাম এর যুগে এস্তেখারাহ এবং তাশাহ্হুদ ছাড়া আর কিছু লিখতাম না (মোসান্নাফ ইবনে আবী শায়বা, ১ম খন্ড, ২৯৪ পৃঃ)। আবু সায়ীদ বলেন, আমরা কুরআন এবং তাশাহ্হুদ ছাড়া আর কিছু লিখতাম না। [ঐ, ২৯৩ পৃঃ]। ইবনে ওমর (রা.) বলেন, আবু বাকর (রা.) তাঁদেরকে মেম্বারে বসে তাশাহ্হুদ শেখাতেন, যেমন শিশুদেরকে মক্তবে শেখানো হয় (ঐ, ২৯২ পৃঃ)।

রাসুলুলস্নাহ সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়া সালস্নাম বলেন, তোমরা তাশাহ্হুদ শিখে নাও। কারণ, তাশাহ্হুদ ছাড়া নামাযই নেই [বাযযার, তাবারানী আওসাত, কান্যুল ওমমাল, ৭ম খন্ড, ৩৩৯ পৃঃ)।


শাহাদত আঙ্গুল তোলার গুরুত্ব

তাশাহ্হুদে বসে আলস্নাহর সামনে আলস্নাহর রাসূল সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়া সালস্নাম এর দুই হাঁটু গেড়ে কালেমায়ে শাহাদত পড়াটা আলস্নাহর একত্ববাদের মৌখিক স্বীকৃতি ছিল এবং মৌখিক স্বীকৃতির সাথে সাথে শাহাদাত আঙ্গুল তোলাটা আলস্নাহর একত্ববাদের বাস্তব কাজেরই স্বীকৃতি। তাই এই আঙ্গুল তোলার গুরুত্ব ও মাহাত্ম্য যে কত তা রাসূলুলস্নাহ সালস্নালস্নাহ আলাইহি ওয়া সালস্নাম এর মুখ থেকেই শুনুন: তিনি বলেন, শাহাদাত আঙ্গুলটি শয়তানের ওপর লোহার (বলস্নমের) চেয়েও বেশী কষ্টদায়ক (মোসনাদে আহমাদ, মেশকাত, ৮৫ পৃঃ)। নামাযে প্রত্যেক ইশারার বদলে দশটি অর্থাৎ প্রত্যেক আঙ্গুলের বদলে একটি করে নেকী লেখা হয় [তারীখে হাকেম, কান্যুল ওমমাল, ৭ম খন্ড, ৩৪০ পৃঃ]।

ইশারা কোন জায়গায় করতে হবে

ইমাম নববী বলেন, তাশাহ্হুদে "ইলস্নালস্নাহ" বলার সময় ইশারা করতে হবে। সুবুলুস সালা-ম ওয়ালা বলেন, বায়হাকীর বর্ণনানুসারে লা-ইলা ইলস্নালস্নাহ বলার সময় করতে হবে। আলস্নামা তীবী ইবনে ওমর বর্ণিত একটি হাদীসের বরাত দিয়ে বলেন, ইলস্নালস্না-হ বলার সময় ইশারা করতে হবে, যাতে কথায় ও কাজে তওহীদের সামঞ্জস্য হয়ে যায়। মোলস্না আলী কারী হানাফী বলেন, হানাফী মতে 'লা-ইলা-হা বলার সময় তুলতে হবে এবং ইলস্নালস্নাহ বলার সময় রেখে দিতে হবে। আলস্নামা আবদুর রহমান মোবারকপুরী বলেন, ঐসব মতের কোনটারই প্রমাণে আমি কোন সহীহ হাদীস পাইনি (তোহফাতুল আহঅযী, ১ম খন্ড, ২৪২ পৃঃ)। তবে ইলস্নালস্নাহর ওপরে ইশারা করাটা বেশী সঙ্গত মনে হয় (আফ্যালুস সলা-ত ২০৬-২০৭ পৃঃ)।

শাফেয়ীদের মতে 'ইলস্নালস্নাহ' বলার সময় আঙ্গুল দিয়ে একবার মাত্র এশারা করতে হবে। হানাফী মতে 'লা' বলার সময় তর্জনী আঙ্গুল তুলতে হবে এবং 'ইলস্নালস্নাহ বলার সময় তা রেখে দিতে হবে। মালেকী মতে আত্তাহিয়ু্যাতুর শুরু থেকে সালাম ফেরা পর্যন্ত আঙ্গুলটিকে ডানে ও বামে নাড়াতে হবে। হাম্বলীদের মতে যখন আলস্নাহর নাম উচ্চারণ হবে তখন আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করতে, কিন্তু তা নাড়াবে না (ফেক্হুস সুন্নাহ, ১ম খন্ড, ১৭০ পৃঃ)। ইবনে ওমর (রা.) বলেন, দ্বিতীয় রাকআতে একটু আরামের জন্যই কেবল তাশাহ্হুদ রাখা হয়েছে। তাই আয়েশা বলেন, নবী সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়া সালস্নাম দ্বিতীয় রাকআতের বৈঠকে শুধু আত্তাহিয়্যাত পড়তেন [ইবনে আবী শায়বা, ১ম খন্ড, ২৯৬ পৃঃ]।






Source: Internet(facebook, somewhereinblog, youtube etc)


...তবুও আল্লাহর কথা (লেখা) শেষ হবে না৷ - একথার অর্থ কি?

...তবুও আল্লাহর কথা (লেখা) শেষ হবে না৷ - একথার অর্থ কি?


 قُل لَّوْ كَانَ الْبَحْرُ مِدَادًا لِّكَلِمَاتِ رَبِّي لَنَفِدَ 
الْبَحْرُ قَبْلَ أَن تَنفَدَ كَلِمَاتُ رَبِّي وَلَوْ جِئْنَا بِمِثْلِهِ
مَدَدًا
১০৯) হে মুহাম্মাদ! বলো, যদি আমার রবের কথা৮০ লেখার জন্য সমুদ্র কালিতে পরিণত হয় তাহলে সেই সমুদ্র নিঃশেষ হয়ে যাবে কিন্তু আমার রবের কথা শেষ হবে না৷ বরং যদি এ পরিমাণ কালি আবারও আনি তাহলে তাও যথেষ্ট হবে না৷(আল কাহফ)
৮০. "কথা" বলে বুঝানো হয়েছে তাঁর কাজ, পূর্ণতার গুণাবলী, বিস্ময়কর ক্ষমতা ও বিজ্ঞতা । ব্যাখ্যার জন্য দেখুন, তাফহীমূল কুরআন, সূরা লুকমান, ৪৮ টীকা ।

وَلَوْ أَنَّمَا فِي الْأَرْضِ مِن شَجَرَةٍ أَقْلَامٌ وَالْبَحْرُ
يَمُدُّهُ مِن بَعْدِهِ سَبْعَةُ أَبْحُرٍ مَّا نَفِدَتْ كَلِمَاتُ اللَّهِ 
إِنَّ اللَّهَ عَزِيزٌ حَكِيمٌ
২৭) পৃথিবীতে যত গাছ আছে তা সবই যদি কলম হয়ে যায় এবং সমুদ্র (দোয়াত হয়ে যায়) , তাকে আরো সাতটি সমুদ্র কালি সরবরাহ করে তবুও আল্লাহর কথা (লেখা) শেষ হবে না৷ ৪৮   অবশ্যই আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী ও জ্ঞানী৷(লুকমান)
৪৮ . "আল্লাহর কথা" মানে তার সৃষ্টিকর্ম এবং তার শক্তি ও জ্ঞানের নিদর্শন। এ বিষয়বস্তুটি সূরা আল কাহফের ১০৯ আয়াতে এর থেকে আরো একটু ভিন্ন ভাষায় বর্ণনা করা হয়েছে। আপাতদৃষ্টিতে এক ব্যক্তি ধারণা করবে, বোধ হয় এ বক্তব্যে বাড়াবাড়ি বা অতিকথন আছে। কিন্তু সামান্য চিন্তা করলে এক ব্যক্তি অনুভব করবে , এর মধ্যে তিল পরিমাণও অতিকথা নেই। এ পৃথিবীর গাছগুলো কেটে যতগুলো কলম তৈরি করা যেতে পারে এবং পৃথিবীর বর্তমান সাগরের পানির সাথে আরো তেমনি সাতটি সাগরের পানিকে কালিতে পরিণত করলে তা দিয়ে আল্লাহর শক্তি, জ্ঞান ও সৃষ্টির কথা লিখে শেষ করা তো দূরের কথা হয়তো পৃথিবীতে যেসব জিনিস আছে সেগুলোর তালিকা তৈরি করাই সম্ভবপর হবে না। শুধুমাত্র এ পৃথিবীতেই যেসব জিনিসের অস্তিত্ব রয়েছে সেগুলোই গণনা করা কঠিন, তার ওপর আবার এই অথৈ মহাবিশ্বের সৃষ্টির বিবরণ লেখার তো কোন প্রশ্নই উঠতে পারে না। এ বর্ণনা থেকে আসলে এ ধরনের একটি ধারণা দেয়াই উদ্দেশ্য যে, এত বড় বিশ্ব-জাহানকে যে আল্লাহ অস্তিত্ব দান করেছেন এবং আদি থেকে অনন্তকাল পর্যন্ত এর যাবতীয় আইন্তশৃঙ্খলা ব্যবস্থা পরিচালনা করে চলেছেন তার সার্বভৌম কর্তৃত্বের ক্ষেত্রে তোমরা যেসব ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সত্তাকে উপাস্যে পরিণত করে বসেছো তাদের গুরুত্ব ও মর্যাদাই বা কি । এই বিরাট -বিশাল সাম্রাজ্য পরিচালনায় হস্তক্ষেপ করা তো দূরের কথা এর ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অংশ সম্পর্কে পূর্ণ জ্ঞান এবং নিছক জ্ঞানটুকু পর্যন্ত লাভ করার ক্ষমতা কোন সৃষ্টির নেই। তাহলে কেমন করে এ ধারণা করা যেতে পারে যে, সৃষ্টিকুলেরর মধ্য থেকে কেউ এখানে আল্লাহর সার্বভৌম কর্তৃত্ব ক্ষমতার কোন অংশও লাভ করতে পারে, যার ভিত্তিতে সে ভাগ্য ভাঙা গড়ার ক্ষমতার অধিকারী হয়ে বসে ।

আল্লাহর সৃষ্টির রহস্য - আল্লামা দেলোয়ার হোসাইন সাঈদি

আল্লাহ সুরা হাদীদে বলেন-"তিনিই আদি, তিনি অন্ত এবং তিনিই প্রকাশিত, তিনিই গোপন" - কিভাবে?

আল্লাহ সুরা হাদীদে বলেন-"তিনিই আদি, তিনি অন্ত এবং তিনিই প্রকাশিত, তিনিই গোপন" - কিভাবে?


هُوَ الْأَوَّلُ وَالْآخِرُ وَالظَّاهِرُ وَالْبَاطِنُ ۖ وَهُوَ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمٌ

তিনিই আদি, তিনি অন্ত এবং তিনিই প্রকাশিত, তিনিই গোপন ৷  তিনি সব বিষয়ে অবহিত৷


উক্ত আয়াতসমূহের তাফহীমুল কুরআনে প্রণীত বিস্তারিত ব্যাখ্যা নীচে দেয়া হল: 

৩. অর্থাৎ যখন কিছুই ছিল না তখন তিনি ছিলেন এবং যখন কিছুই থাকবে না তখন তিনি থাকবেন। তিনি সব প্রকাশ্যের চেয়ে অধিক প্রকাশ্য। কারণ পৃথিবীতে যে জিনিসের প্রকাশ দেখা যায় তা তাঁরই গুণাবলী, তাঁরই কার্যাবলী। এবং তাঁরই নূরের প্রকাশ। আর তিনি সব গুপ্ত জিনিসের চেয়ে অধিক গুপ্ত। কারণ, ইন্দ্রীয়সমূহ দ্বারা তাঁর সত্তাকে অনুভব ও উপলব্ধি করা তো দূরের কথা বিবেক-বুদ্ধি, চিন্তাভাবনা ও কল্পনা পর্যন্ত তাঁর রহস্য ও বাস্তবতাকে স্পর্শ করতে পারে । ইমাম আহমাদ, মুসলিম, তিরমিযী ও বায়হাকী হযরত আবু হুরাইরা (রা) থেকে এবং হাফেজ আবু ইয়া'লা মুসেলী তার মুসনাদ গ্রন্থে হযরত আয়েশা (রা) থেকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের একটি দোয়া সম্বলিত যে হাদীস বর্ণনা করেছেন তার নিম্নোক্ত কথাগুলোই এ আয়াতের সর্বোত্তম ব্যাখ্যাঃ "তুমিই সর্ব প্রথম। তোমার পূর্বে আর কেউ নেই। তুমিই সর্বশেষ। তোমার পরে আর কেউ নেই। তুমিই প্রকাশ্য তোমার চেয়ে প্রকাশ্য কেউ নেই। তুমি গুপ্ত । তোমার চেয়ে অধিক গুপ্ত আর কেই নেই।"
এখানে প্রশ্ন দেখা দেয় যে, কুরআন মজীদে জান্নাত ও দোযখবাসীদের জন্য যে চিরস্থায়ী জীবনের কথা বলা হয়েছে আল্লাহ তা'আলাই সর্বশেষ অর্থাৎ যখন কিছুই থাকবে না তখন তিনি থাকবেন -তার সাথে এ কথা কি করে খাপ খায়৷ এর জবাব কুরআন মজীদের মধ্যেই বিদ্যমান। (সূরা কাছাছ আয়াত ৮৮) "অর্থাৎ আল্লাহর সত্তা ছাড়া আর সব জিনিসই নশ্বর ও ধ্বংসশীল। "অন্য কথায় কোন সৃষ্টিরই নিজস্ব স্থায়িত্ব নেই। যদি কোন জিনিস স্থায়ী হয় বা স্থায়ী থাকে তাহলে আল্লাহ তা'আলা স্থায়ী রাখার করেণেই তা স্থায়ী হয়ে আছে এবং থাকতে পারে। অন্যথায় আল্লাহ ছাড়া স্ব স্ব ক্ষেত্রে আর সবাই নশ্বর ও ধ্বংসশীল। কেউ আপন ক্ষমতা ও বৈশিষ্টে অবিনশ্বর বিধায় জান্নাত বা দোযখে চিরস্থায়িত্ব লাভ করবে- এমনটা নয়। বরং সেখানে তার স্থায়িত্ব লাভ করার কারণ হচ্ছে আল্লাহ তা'আলা তাকে চিরস্থায়ী জীবন দান করবেন। ফেরেশতাদের ব্যাপারটাও ঠিক তাই। তারা আপন ক্ষমতা ও বৈশিষ্টে অবিনশ্বর নয়। আল্লাহ যখন ইচ্ছা করেছেন তখন তারা অস্তিত্ব লাভ করেছে এবং যত সময় পর্যন্ত তিনি চাইবেন তত সময় পর্যন্তই তারা বেঁচে থাকতে পারে।
.