Pages

Tuesday, April 15, 2014

আল্লাহর আমানত মানুষের বহন করার দায়িত্বগ্রহণ সম্পর্কে কিছু কথা

আল্লাহর আমানত মানুষের বহন করার দায়িত্বগ্রহণ সম্পর্কে কিছু কথা



.إِنَّا عَرَضْنَا الْأَمَانَةَ عَلَى السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَالْجِبَالِ فَأَبَيْنَ أَن يَحْمِلْنَهَا وَأَشْفَقْنَ مِنْهَا وَحَمَلَهَا الْإِنسَانُ ۖ إِنَّهُ كَانَ ظَلُومًا جَهُولًا


.لِّيُعَذِّبَ اللَّهُ الْمُنَافِقِينَ وَالْمُنَافِقَاتِ وَالْمُشْرِكِينَ وَالْمُشْرِكَاتِ وَيَتُوبَ اللَّهُ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ ۗ وَكَانَ اللَّهُ غَفُورًا رَّحِيمًا


৭২) আমি এ আমানতকে আকাশসমূহ, পৃথিবী ও পর্বতরাজির ওপর পেশ করি, তারা একে বহন করতে রাজি হয়নি এবং তা থেকে ভীত হয়ে পড়ে৷ কিন্তু মানুষ একে বহন করেছে, নিসন্দেহে সে বড় জালেম ও অজ্ঞ৷১২০  ৭৩) এ আমানতের বোঝা উঠাবার অনির্বায ফল হচ্ছে এই যে, আল্লাহ মুনাফিক পুরুষ ও নারী এবং মুশরিক পুরুষ ও নারীদেরকে সাজা দেবেন এবং মু’মিন পুরুষ ও নারীদের তাওবা কবুল করবেন, আল্লাহ ক্ষমাশীল ও করুণাময়৷  (আল আহযাব)

তাফহীমুল কুরআনে প্রণীত উক্ত আয়াতসমূহের বিস্তারিত ব্যাখ্যা নীচে দেয়া হল: 

১২০. বক্তব্য শেষ করতে গিয়ে আল্লাহ মানুষকে এ চেতনা দান করতে চান যে, দুনিয়ায় সে কোন ধরনের মর্যাদার অধিকারী এবং এ মর্যাদায় অধিষ্ঠিত থেকে যদি সে দুনিয়ার জীবনকে নিছক একটি খেলা মনে করে নিশ্চিন্তে ভুল নীতি অবলম্বন করে, তাহলে কিভাবে স্বহস্তে নিজের ভবিষ্যত নষ্ট করে।
এ স্থানে "আমানত" অর্থ সেই "খিলাফতই" যা কুরআন মজীদের দৃষ্টিতে মানুষকে দুনিয়ায় দান করা হয়েছে। মহান আল্লাহ মানুষকে আনুগত্য ও অবাধ্যতার যে স্বাধীনতা দান করেছেন এবং এ স্বাধীনতা ব্যবহার করার জন্য তাকে অসংখ্য সৃষ্টির ওপর যে কর্তৃত্ব ক্ষমতা দিয়েছেন। তার অনিবার্য ফল স্বরূপ মানুষ নিজেই নিজের স্বেচ্ছাকৃত কাজের জন্য দায়ী গণ্য হবে এবং নিজের সঠিক কর্মধারার বিনিময়ে পুরস্কার এবং অন্যায় কাজের বিনিময়ে শাস্তির অধিকারী হবে। এসব ক্ষমতা যেহেতু মানুষ নিজেই অর্জন করেনি বরং আল্লাহ তাকে দিয়েছেন এবং এগুলোর সঠিক ও অন্যায় ব্যবহারের দরুন তাকে আল্লাহর সামনে জবাবদিহি করতে হবে, তাই কুরআন মজীদের অন্যান্য স্থানে এগুলোকে খিলাফত শব্দের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়েছে এবং এখানে এগুলোর জন্য আমানত শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে।
এ আমানত কতটা গুরুত্বপূর্ণ ও দুর্বল সে ধারণা দেবার জন্য আল্লাহ বলেন, আকাশ ও পৃথিবী তাদের সমস্ত শ্রেষ্ঠত্ব এবং পাহাড় তার বিশাল ও বিপুলায়তন দেহাবয়ব ও গম্ভীরতা সত্ত্বেও তা বহন করার শক্তি ও হিম্মত রাখতো না কিন্তু দূর্বল দেহাবয়বের অধিকারী মানুষ নিজের ক্ষুদ্রতম প্রাণের ওপর এ ভারী বোঝা উঠিয়ে নিয়েছে।
পৃথিবী ও আকাশের সামনে আমানতের বোঝা পেশ করা এবং তাদের তা উঠাতে অস্বীকার করা এবং ভীত হওয়ার ব্যাপারটি হতে পারে শাব্দিক অর্থেই সংঘটিত হয়েছে। আবার এও হতে পারে যে, একথাটি রূপকের ভাষায় বলা হয়েছে। নিজের সৃষ্টির সাথে আল্লাহর যে সম্পর্ক রয়েছে তা আমরা জানতেও পারি না এবং বুঝতেও পারি না। পৃথিবী, চাঁদ, সূর্য ও পাহাড় যেভাবে আমাদের কাছে বোবা, কালা ও প্রাণহীন, আল্লাহর কাছেও যে তারা ঠিক তেমনি হবে তার কোন নিশ্চয়তা নেই। আল্লাহ নিজের প্রত্যেক সৃষ্টির সাথে কথা বলতে পারেন এবং সে তার জবাব দিতে পারে। এর প্রকৃত অবস্থা অনুধাবন করার ক্ষমতা আমাদের বুদ্ধি ও বোধশক্তির নেই। তাই এটা পুরোপুরিই সম্ভব যে, প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ নিজেই এ বিরাট বোঝা তাদের সামনে পেশ করে থাকবেন এবং তারা তা দেখে কেপে উঠে থাকবে আর তারা তাদের প্রভু ও স্রষ্টার কাছে এ নিবেদন পেশ করে থাকবে যে, আমরা তো আপনারই ক্ষমতাহীন সেবক হয়ে থাকার মধ্যেই নিজেদের মংগল দেখতে পাই। নাফরমানী করার স্বাধীনতা নিয়ে তার হক আদায় করা এবং হক আদায় না করতে পারলে তার শাস্তি বরদাশত করার সাহস আমাদের নেই। অনুরূপভাবে এটাও সম্ভব, আমাদের বর্তমান জীবনের পূর্বে আল্লাহ সমগ্র মানব জাতিকে অন্য কোন ধরনের একটি অস্তিত্ব দান করে নিজের সামনে হাজির করে থাকবেন এবং তারা নিজেরাই এ দায়িত্ব বহন করার আগ্রহ প্রকাশ করে থাকবেন। একথাকে অসম্ভব গণ্য করার জন্য কোন যুক্তি আমাদের কাছে নেই। একে সম্ভাবনার গন্ডীর বাইরে রাখার ফায়সালা সেই ব্যক্তিই করতে পারে যে নিজের চিন্তা ও বুদ্ধিবৃত্তিক যোগ্যতার ভুল ধারণা নিয়ে বসে আছে।
তবে এ বিষয়টাও সমান সম্ভবপর যে, নিছক রূপকের আকারে আল্লাহ এ বিষয়টি উপস্থাপন করেছেন এবং অবস্থার অস্বাভাবিক গুরুত্বের ধারণা দেবার জন্য এমনভাবে তার নকশা পেশ করা হয়েছে যেন একদিকে পৃথিবী ও আকাশ এবং হিমালয়ের মতো গগণচুম্বী পাহাড় দাঁড়িয়ে আছে আর অন্যদিকে দাঁড়িয়ে আছে ৫/৬ উচু লম্বা একজন মানুষ। আল্লাহ জিজ্ঞেস করছেনঃ
"আমি আমার সমগ্র সৃষ্টিকূলের মধ্যে কোন একজনকে এমন শক্তি দান করতে চাই যার ফলে আমার সার্বভৌম কর্তৃত্বের মধ্যে অবস্থান করে সে নিজেই স্বেচ্ছায় ও সাগ্রহে আমার প্রাধান্যের স্বীকৃতি এবং আমার হুকুমের আনুগত্য করতে চাইলে করবে অন্যথায় সে আমাকে অস্কীকার করতেও পারবে আর আমার বিরুদ্ধে বিদ্রোহের ঝান্ডা নিয়েও উঠতে পারবে। এ স্বাধীনতা দিয়ে আমি তার কাছ থেক এমনভাবে আত্মগোপন করে থাকবো যেন আমি কোথাও নেই। এ স্বাধীনতাকে কার্যকর করার জন্য আমি তাকে ব্যাপক ক্ষমতা দান করবো, বিপুল যোগ্যতার অধিকারী করবো এবং নিজের অসংখ্য সৃষ্টির ওপর তাকে শ্রেষ্ঠত্ব দান করবো। এর ফলে বিশ্ব- জাহানে সে যা কিছু ভাংগা গড়া করতে চায় করতে পারবে। এরপর একটি নির্দিষ্ট সময়ে আমি তার কাজের হিসেব নেবো। যে আমার প্রদত্ত স্বাধীনতাকে ভুলপথে ব্যবহার করবে তাকে এমন শাস্তি দেবো যা কখনো আমার কোন সৃষ্টিকে আমি দেইনি। আর যে নাফরমানীর সমস্ত সুযোগ পাওয়া সত্ত্বেও আমার আনুগত্যের পথই অবলম্বন করে থাকবে তাকে এমন উচ্চ মর্যাদা দান করবো যা আমার কোন সৃষ্টি লাভ করেনি। এখন বলো তোমাদের মধ্য থেকে কে এ পরীক্ষাগৃহে প্রবেশ করতে প্রস্তুত আছে৷
এ ভাষণ শুনে প্রথমে তো বিশ্ব-জগত নিরব নিথর দাঁড়িয়ে থাকে। তারপর একের পর এক এগিয়ে আসে। সকল প্রকান্ড অবয়ব ও শক্তির অধিকারী সৃষ্টি এবং তারা হাটু গেড়ে বসে কান্নাজড়িত স্বরে সানুনয় নিবেদন করে যেতে থাকে তাদেরকে যেন এ কঠিন পরীক্ষা থেকে মুক্ত রাখা যায়। সবশেষে এ একমুঠো মাটির তৈরি মানুষ ওঠে। সে বলে, হে আমার পওয়ারদিগার!আমি এ পরীক্ষা দিতে প্রস্তুত। এ পরীক্ষায় সফলকাম হয় তোমার সালতানাতের সবচেয়ে উচ্চ পদে অধিষ্ঠিত হবার যে আশা আছে সে কারণে আমি এ স্বাধীনতা ও স্বেচ্ছাচারের মধ্যে যেসব আশংকা ও বিপদাপদ রয়েছে সেগুলো অতিক্রম করে যাবো।
নিজের কল্পনাদৃষ্টির সামনে এ চিত্র তুলে ধরেই মানুষ এই বিশ্ব জাহানে কেমন নাজুক স্থানে অবস্থান করছে তা ভালোভাবেই আন্দাজ করতে পারে। এখন এ পরীক্ষাগৃহে যে ব্যক্তি নিশ্চিন্তে বসে থাকে এবং কতবড় দায়িত্বের বোঝা যে সে মাথায় তুলে নিয়েছে, আর দুনিয়ার জীবনে নিজের জন্য কোন নীতি নির্বাচন করার সময় যে ফায়সালা সে করে তার সঠিক বা ভুল হবার ফল কি দাঁড়ায় তার কোন অনুভূতিই যার থাকে না তাকেই আল্লাহ এ আয়াতে জালেম ও অজ্ঞ বলে অভিহিত করছেন। সে অজ্ঞ, কারণ সেই বোকা নিজেই নিজেকে অদায়িত্বশীল মনে করে নিয়েছে। আবার সে জালেম, কারণ সে নিজেই নিজের ধ্বংসের ব্যবস্থা করছে এবং নাজানি নিজের সাথে সে আরো কতজনকে নিয়ে ডুবতে চায়।

আল্লাহর সৃষ্টি বিস্ময় - ধারাবাহিক বাংলা ডকুমেন্টারী, দেখুন প্লীজ ॥


ALLAHOR SRISTI BISMOY Clip_1_3
ALLAHOR SRISTI BISMOY Clip_2_3
ALLAHOR SRISTI BISMOY Clip_3_3

Thursday, April 10, 2014

"আমি তার কর্ণ হয়ে যাই" এই হাদিসটি বুঝার ক্ষেত্রে সলফে সালেহীনের অনুসৃত পদ্ধতি এবং এ বিষয়ে ইত্তিহাদিয়া সম্প্রদায়ের দৃষ্টিভঙ্গির অপনোদন।

"আমি তার কর্ণ হয়ে যাই" এই হাদিসটি বুঝার ক্ষেত্রে সলফে সালেহীনের অনুসৃত পদ্ধতি এবং এ বিষয়ে ইত্তিহাদিয়া সম্প্রদায়ের দৃষ্টিভঙ্গির অপনোদন।


প্রশ্ন: 

আল্লাহ তাআলা হাদিসে কুদসিতে বলেছেন- "যখন আমি তাকে (বান্দাকে) ভালবাসি তখন আমি তার কান হয়ে যাই, যে কান দিয়ে সে শুনে। আমি তার চোখ হয়ে যাই, যে চোখ দিয়ে সে দেখে। আমি তার হাত হয়ে যাই, যে হাত দিয়ে সে ধরে। আমি তার পা হয়ে যাই, যে পা দিয়ে সে হাঁটে।" এমতাবস্থায় আমরা স্রষ্টা ও সৃষ্টি একই সত্তা এই মতাদর্শ এবং আল্লাহর গুণাবলী সম্বলিত আয়াতসমূহের ব্যাপারে আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের অনুসৃত পদ্ধতির মাঝে কিভাবে সমন্বয় করব? আশা করি আপনারা বিষয়টি বিস্তারিতভাবে আলোচনা করবেন; আল্লাহ আপনাদের সম্মান বৃদ্ধি করুন। কারণ আল্লাহর গুণাবলীকে অস্বীকারকারী সম্প্রদায় আল্লাহর নাম ও গুণাবলীর ক্ষেত্রে সলফে সালেহীনদের অনুসৃত পদ্ধতিকে এই বলে প্রশ্নবিদ্ধ করেন যে, আমরা যদি আল্লাহর গুণাবলী সম্বলিত আয়াত ও হাদিসকে মূল অর্থে গ্রহণ করি এতে করে স্রষ্টা ও সৃষ্টি এক সত্তা- এ দৃষ্টিভঙ্গি অনিবার্য হয়ে যায়।



আল্লাহর গুণাবলীর ক্ষেত্রে আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের দৃষ্টিভঙ্গি হলো- কুরআন ও হাদিসের দলীল ছাড়া আল্লাহর জন্য কোন গুণ বা বৈশিষ্ট্য সাব্যস্ত করা যাবে না। কুরআন ও হাদিসে আল্লাহর যেসব গুণের উল্লেখ রয়েছে তাঁর জন্য শুধু সে গুণগুলো সাব্যস্ত করতে হবে এবং কোন মাখলুকের সাথে আল্লাহর গুণ বা বৈশিষ্ট্যের সাদৃশ্যতাকে দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করতে হবে। যেহেতু আল্লাহ নিজেই বলেছেন- (لَيْسَ كَمِثْلِهِ شَيْءٌ  ) অর্থ- তাঁর মত কিছুই নেই এটি মুমাচ্ছিলা (সাদৃশ্যবাদী) সম্প্রদায়ের মতাদর্শের বিপক্ষে দলীল। কোন কোন আলেম এদেরকে মুশাব্বিহা (উপমাবাদী) বলে আখ্যায়িত করে থাকেন। এ আয়াতের পরবর্তী অংশ হচ্ছে- (وَهُوَ السَّمِيعُ البَصِيرُ) অর্থ- "তিনি হচ্ছে সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা"[সূরা শুরা, আয়াত: ১১] এ অংশে মুআত্তিলা (নিরাকারবাদী) মতাদর্শের বিপক্ষে দলীল রয়েছে। যারা বিশ্বাস করেন যে, নামের মধ্যে সাদৃশ্য থাকা অস্তিত্বের মধ্যেও সাদৃশ্য থাকাকে অনিবার্য করে। 
আমরা 155206 নং প্রশ্নের জবাবে আল্লাহর নাম ও গুণাবলী বিষয়ক কিছু গুরুত্বপূর্ণ নীতিমালা উল্লেখ করেছি। আপনি সে নীতিগুলো পড়ে নিতে পারেন। 34630 নং প্রশ্নের জবাবে আল্লাহর নাম ও গুণাবলীর প্রতি ঈমান সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। সেখানে আল্লাহর নাম ও গুণাবলীর ক্ষেত্রে পরিহারযোগ্য তাহরিফ (গুণকে বিকৃত করা), তা'তিল (গুণকে অস্বীকার করা), তামছিল (মাখলুকের গুণের সাথে সাদৃশ্য দেয়া) ও তাক্য়িফ (গুণ বা বৈশিষ্ট্যের অবয়ব নির্ধারণ করা) এ চারটি বিষয়ের বিস্তারিত ব্যাখ্যা পেশ করা হয়েছে। যে বা যারা এ চারটি নিষিদ্ধ বিষয়ে লিপ্ত হবেন তিনি আল্লাহর নাম ও গুণাবলীর প্রতি যেভাবে ঈমান আনা ওয়াজিব সেভাবে ঈমান আনেননি। শাইখ ইবনে উছাইমীন (রহঃ) তাঁর লিখিত আল-কাওয়ায়েদ আল-মুছলা ফি সিফাতিল্লাহি ওয়া আসমাইহিল হুসনা গ্রন্থে এ সংক্রান্ত বেশকিছু বিধি উল্লেখ করেছেন। বইটি নিম্নোক্ত লিঙ্কে পাওয়া যাবে। http://www.ibnothaimeen.com/all/books/article_16822.shtml এছাড়া শাইখ আলাবি বিন আব্দুল কাদের আল-সাক্কাফ (হাঃ) তাঁর লিখিত সিফাতুল্লাহি আয্যা ওয়া জাল্ল ফিল কিতাব ওয়াস সুন্নাহ নামক কিতাবে আল্লাহর গুণাবলী সম্পর্কিত একুশটি নীতি উল্লেখ করেছেন। নীচের লিঙ্কে গিয়ে বইটি পড়া যাবে।
দুই:
প্রশ্নকারী যে হাদিসটি উল্লেখ করেছেন তা আবু হুরায়রা (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত হাদিস। তিনি বলেন: রাসূল (সাঃ) বলেছেন: "আল্লাহ তাআলা বলেন- যে ব্যক্তি আমার কোন ওলির সাথে শত্রুতা পোষণ করে আমি তার বিরুদ্ধে লড়াই ঘোষণা করি আমার বান্দার প্রতি যা ফরয করেছি তা দ্বারাই সে আমার অধিক নৈকট্য লাভ করে আমার বান্দা নফল ইবাদতের মাধ্যমেও আমার নৈকট্য হাছিল করতে থাকে অবশেষ আমি তাকে ভালবেসে ফেলি যখন আমি তাকে ভালবাসি তখন আমি তার কর্ণ হয়ে যাই, যা দিয়ে সে শুনে আমি তার চক্ষু হয়ে যাই, যা দিয়ে সে দেখে আমি তার হাত হয়ে যাই, যা দিয়ে সে ধরে আমি তার পা হয়ে যাই, যে পা দিয়ে সে চলাফেরা করে সে আমার কাছে কিছু প্রার্থনা করে, আমি তাকে তা দেই সে যদি আমার নিকট আশ্রয় চায়, তাহলে আমি তাকে আশ্রয় দেই [সহীহ বুখারী, হাদিস নং- ৬১৩৭] এখানে আমরা একটা বিষয়ে প্রশ্নকারীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। সেটা হলো এই হাদিস দিয়ে হুলুলিয়া সম্প্রদায় তাদের ভ্রান্ত বিশ্বাসের পক্ষে দলীল দিয়ে থাকে; ইত্তিহাদিয়া সম্প্রদায় নয়। ইত্তিহাদ ও হুলুল এর মধ্যে পার্থক্য জানার জন্য 147639 নং প্রশ্নের জবাব দেখুন। হুলুলিয়াগণ বলেন যে, এই হাদিসটি প্রমাণ করে যে - স্রষ্টা ও সৃষ্টি একই সত্তা। যখন বান্দা ফরয ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য হাছিল করে নেয় তখন আব্‌দ নিজেই মাবুদ হয়ে যায় (আল্লাহ ক্ষমা করুন)। আব্‌দ নিজেই আল্লাহর কর্ণ দিয়ে শুনে, আল্লাহর চক্ষু দিয়ে দেখে। অর্থাৎ খালেক ও মাখলুক একীভূত হয়ে এক জিনিসে পরিণত হয়ে যায়। এ ধরনের বিশ্বাস নিঃসন্দেহে ইসলাম বিনষ্টকারী কুফরি বিশ্বাস। যে হাদিসটি দিয়ে তারা দলীল দিচ্ছেন খোদ সে হাদিসই তাদের বিপক্ষে দলীল। যেহেতু সে হাদিসে খালেক ও মাখলুক এর দুইটি সত্তা সাব্যস্ত করা হয়েছে এবং উভয় সত্তার মধ্যে পার্থক্য করা হয়েছে। আবেদ ও মাবুদের দুইটি সত্তা সাব্যস্ত করা হয়েছে এবং উভয় সত্তার মধ্যে পার্থক্য নিরুপণ করা হয়েছে। মুহিব্ব ও মাহবুবের দুইটি সত্তা সাব্যস্ত করা হয়েছে। প্রার্থনাকারী ও সাড়াদানকারীর দুইটি সত্তা সাব্যস্ত করা হয়েছে। হাদিসের মধ্যে এমন দলীল পাওয়া যায় না- যা প্রমাণ করে যে, তারা উভয়ে একই সত্তার অধিকারী। 
ইবনে তাইমিয়া (রহঃ) বলেন: ইত্তিহাদপন্থী নাস্তিকগণ তাদের মতাদর্শের পক্ষে এই দলীল উল্লেখ করেন যে, আমি তার কর্ণ, আমি তার চক্ষু, আমি তার হাত, আমি তার পা।" প্রকৃতপক্ষে কয়েকটি দিক হতে হাদিসটি তাদের বিপক্ষে দলীল: হাদিসে বলা হয়েছে- "যে ব্যক্তি আমার কোন ওলির সাথে শত্রুতা পোষণ করে আমি তার বিরুদ্ধে যুদ্ধের ঘোষণা দিই" অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা শত্রুও সাব্যস্ত করেছেন, ওলি (বন্ধু)ও সাব্যস্ত করেছেন। তিনি নিজের জন্য এটাও সাব্যস্ত করেছেন, ওটাও সাব্যস্ত করেছেন। 
অনুরূপভাবে হাদিসে এসেছে- "আমি যা ফরয করেছি সেটার মত অন্যকিছু দিয়ে বান্দা আমার নৈকট্য হাছিল করতে না।" অর্থাৎ আল্লাহর নৈকট্য প্রাপ্ত বান্দা ও বিভিন্ন ইবাদত ফরযকারী প্রতিপালক সাব্যস্ত করা হয়েছে। হাদিসে আরো এসেছে- "আমার বান্দা উপর্যুপরি নফল ইবাদত করতে থাকে এক পর্যায়ে আমি তাকে ভালবাসি" অর্থাৎ 'নৈকট্য লাভকারী ও যার নৈকট্য লাভ করা হয়' সাব্যস্ত করা হয়েছে। মুহিব্ব ও মাহবুব সাব্যস্ত করা হয়েছে। এ দলীলগুলো তাদের একক অস্তিত্বের মতাদর্শকে অপনোদন করে দেয়। হাদিসে আরো এসেছে- "আমি তাকে ভালবাসতে থাকি একপর্যায়ে আমি তার কর্ণ হয়ে যায়, যে কান দিয়ে সে নে আমি তার চক্ষু হয়ে যায়, যে চক্ষু দিয়ে সে দেখে" অর্থাৎ আল্লাহর ভালবাসা প্রাপ্তির পর বান্দার জন্য এ বিষয়গুলো সাব্যস্ত করা হয়েছে। কিন্তু ইত্তিহাদিয়াদের মতে আল্লাহর ভালবাসা পাওয়ার পরের অবস্থা ও আগের অবস্থা অভিন্ন।[মাজমু' ফাওয়া (২/৩৭১, ৩৭২) 
ইবনে তাইমিয়া আরো বলেন: হাদিসের পরের অংশে আল্লাহ তাআলা বলেন- ( وَلَئِنْ سَأَلَنِي لَأُعْطِيَنَّهُ وَلَئِنْ اسْتَعَاذَنِي لَأُعِيذَنَّهُ ) অর্থ- "যদি সে আমার নিকট কোন কিছু প্রার্থনা করে আমি তাকে সেটা দান করি যদি সে আমার কাছে আশ্রয় চায় আমি তাকে আশ্রয় দান করি" এখানে প্রার্থনাকারী ও প্রার্থনাগ্রহণকারীর আলাদা সত্তা সাব্যস্ত করা হয়েছে। আশ্রয়প্রার্থী ও আশ্রয়প্রদানকারীর আলাদা সত্তা সাব্যস্ত করা হয়েছে। বান্দাকে আশ্রয়প্রার্থী সাব্যস্ত করা হয়েছে। আর প্রতিপালককে আশ্রয়প্রদানকারী সাব্যস্ত করা হয়েছে। এই হাদিসে মহান কিছু উদ্দেশ্যের সন্নিবেশ ঘটেছে।[মাজমু'ল ফাতাওয়া ১৭/১৩৪] 
ইবনে হাজার (রহঃ) এই হাদিসের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন: এই হাদিসটির অর্থ বুঝার ক্ষেত্রে কয়েকটি দৃষ্টিভঙ্গি থাকতে পারে। তবে যে দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই দেখা হোক না কেন এই হাদিসে ইত্তেহাদিয়া বা ওয়াহদাতুল ওজুদ (একক অস্তিত্ববাদ) মতাদর্শীদের পক্ষে কোন দলীল নেই। যেহেতু হাদিসের পরের অংশে এসেছে- "যদি বান্দা আমার কাছে প্রার্থনা করে, যদি বান্দা আমার কাছে আশ্রয় চায়" অর্থাৎ হাদিসের এ অংশটি ইত্তিহাদিয়া ও ওয়াহদাতুল ওজুদ মতাদর্শীদের বিপক্ষে সুস্পষ্ট দলীল।[ফাতহুল বারী ১১/৩৪৫] 
ইমাম শাওকানী (রহঃ) ইবনে হাজার (রহঃ) এর এ উক্তিটি উদ্ধৃত করার পর বলেন: তিনি বাতিলপন্থীদের দলীল খণ্ডন করতে গিয়ে হাদিসের যে অংশটি উদ্ধৃত করেছেন (যদি আমার কাছে প্রার্থনা করে, যদি আমার কাছে আশ্রয়প্রার্থী হয়) এর ব্যাখ্যা হলো এই যে, হাদিসের এ অংশটি প্রার্থনাকারী ও প্রার্থনাগ্রহণকারীর আলাদা অস্তিত্ব সাব্যস্ত করে এবং আশ্রয়প্রার্থী ও আশ্রয়দাতার আলাদা অস্তিত্ব সাব্যস্ত করে। সম্ভবতঃ তিনি হাদিসটি নিয়ে যথোপযুক্ত চিন্তাভাবনা করেননি। যদি করতেন তাহলে তিনি শুধু প্রার্থনা ও আশ্রয়প্রার্থনার কথা উল্লেখ করতেন না। কারণ গোটা হাদিসটি তাদের বিরুদ্ধে দলীল। হাদিসের বাণী: "যে ব্যক্তি আমার কোন ওলির সাথে শত্রুতা পোষণ করে" এ অংশটি শত্রু, বিপক্ষ শত্রু ও শত্রুতার কারণের অস্তিত্ব সাব্যস্ত করে। অনুরূপভাবে বন্ধুত্বপোষণকারী ও বন্ধুত্বগ্রহণকারীর অস্তিত্ব সাব্যস্ত করে। অনুরূপভাবে যুদ্ধঘোষণাকারী ও যার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করা হয় উভয়ের অস্তিত্ব সাব্যস্ত করে। যুদ্ধকারী ও যার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা হয় উভয়ের অস্তিত্ব সাব্যস্ত করে। নৈকট্যলাভকারী ও নৈকট্যপ্রদানকারীর অস্তিত্ব সাব্যস্ত করে। বান্দা ও মাবুদের অস্তিত্ব সাব্যস্ত করে। মুহিব্ব ও মাহবুবের অস্তিত্ব সাব্যস্ত করে। এভাবে হাদিসের শেষ পর্যন্ত। গোটা হাদিসটি ইত্তেহাদিয়া সম্প্রদায়ের মতাদর্শের বিপক্ষে দলীল। কিন্তু তারা তা অনুধাবন করতে চায় না। বরঞ্চ আরো পরিস্কারভাবে হাদিসে এসেছে- "মুমিনের আত্মা কবজের ক্ষেত্রে আমি যতবেশী দ্বিধাগ্রস্ত হই অন্য কোন বিষয়ে আমি সে রকম দ্বিধগ্রস্ত হই না" এই হাদিসে- দ্বিধাগ্রস্ত ও যার ক্ষেত্রে দ্বিধাগ্রস্ত দুইটি সত্তার অস্তিত্ব সাব্যস্ত করা হয়েছে। কর্তা ও কৃত দুইটি সত্তার অস্তিত্ব সাব্যস্ত করা হয়েছে। যে আত্মার ক্ষেত্রে দ্বিধাগ্রস্ত অর্থাৎ মুমিন বান্দা ও যিনি দ্বিধাগ্রস্ত অর্থাৎ কবজকারী দুইটি সত্তা সাব্যস্ত করা হয়েছে। মৃত্যুকে অপছন্দকারী তথা মুমিন বান্দা এবং ও মৃত্যুদান করাকে অপছন্দকারী তথা আল্লাহ তাআলার অস্তিত্ব সাব্যস্ত করা হয়েছে। 
সারকথা হচ্ছে- ইত্তেহাদিয়াদের এই মতাদর্শ সকল বিবেকবানের বিবেককে বিকল করে দেয়। সুতরাং তাদের বিপক্ষে আর কি প্রমাণ পেশ করার প্রয়োজন আছে। তারা যে শুবা-সন্দেহ দ্বারা বিপথগামী হয়েছে, সেটি দ্বৈতবাদে বিশ্বাসীদের কাছ থেকে ধারকৃত। যারা মনে করেন ঈশ্বর দুইজন- কল্যাণের ঈশ্বর ও অনিষ্টের ঈশ্বর। কল্যাণের ঈশ্বর হচ্ছে- আলো। আর অনিষ্টের ঈশ্বর হচ্ছে- অন্ধকার। তাদের মতে সকল অস্তিত্বশীলের মূলে রয়েছে এই দুই সত্তা। যখন মানুষের ওপর আলো প্রভাব বিস্তার করে তখন মানুষ আলোকিত হয়। আর যখন অন্ধকার প্রভাব বিস্তার করে তখন মানুষ অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়। কিন্তু ইত্তেহাদিয়াগণ এ ব্যাপারে উদাসীন ছিলেন যে, এই মতাদর্শের মূল বিশ্বাসই তাদের বিপক্ষে। কারণ অন্ধকার আর আলো তো এক জিনিস নয়। অনুরূপভাবে অন্ধকার বা আলো যে সত্তার ওপর প্রভাব বিস্তার করে সেটাও তো আলাদা একটি সত্তা।[ইমাম শাওকানী এর কাতরুল ওলি আলা হাদিসিল ওলি গ্রন্থ হতে গৃহীত, পৃষ্ঠা ৪১৯-৪২১] আলোচিত হাদিসটির মূল পাঠ এবং আরো কিছু বিশ্লেষণ 2137114397 নং প্রশ্নের জবাবে দেখা যেতে পারে। আল্লাহই ভাল জানেন।
ইসলাম জিজ্ঞাসা ও জবাব