আল্লাহ মানুষের সাথে কিভাবে কথা বলেন ?
وَمَا كَانَ لِبَشَرٍ أَن يُكَلِّمَهُ اللَّهُ إِلَّا وَحْيًا
أَوْ مِن وَرَاءِ حِجَابٍ أَوْ يُرْسِلَ رَسُولًا فَيُوحِيَ بِإِذْنِهِ مَا يَشَاءُ
ۚ إِنَّهُ عَلِيٌّ حَكِيمٌ
৫১) কোন৭৮ মানুষই এ মর্যাদার অধিকারী নয় যে, আল্লাহ তার সাথে
সরাসরি কথা বলবেন৷ তিনি কথা বলেন হয় অহীর (ইংগিত) মাধ্যমে,৭৯ অথবা পর্দার
আড়াল থেকে,৮০ কিংবা তিনি কোন বার্তাবাহক (ফেরেশতা) পাঠান এবং সে
তার হুকুমে তিনি যা চান অহী হিসেবে দেয়৷৮১ তিনি সুমহান ও
সুবিজ্ঞ৷ ৮২ (আশ শূরা)
উক্ত আয়াতসমূহের তাফহীমুল কুরআনে প্রণীত বিস্তারিত ব্যাখ্যা নীচে দেয়া হল:
৭৮. বক্তব্যের সূচনা পর্বে
যা বলা হয়েছিলো সমাপ্তি পর্যায়েও সেই বিষয়টিই বলা হচ্ছে। কথাটা পুরোপুরি বুঝতে হলে
এই সূরার প্রথম আয়াত এবং তার টীকা পুনরায় দেখে নিন।( ৩নং আয়াত: মহাপরাক্রমশালী ও জ্ঞানময় আল্লাহ তোমার কাছে ও তোমার পূর্ববর্তীদের (রসূল) কাছে
এভাবেই অহী পাঠিয়ে আসছেন৷ ১
১. বক্তব্য শুরু করার এই
ভঙ্গি থেকেই বুঝা যায়, সেই সময় পবিত্র মক্কার প্রতিটি মাহফিল ও গ্রাম্য বিপণী,
প্রতিটি গলি ও বাজার এবং প্রতিটি বাড়ী ও বিপনীতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লামের আন্দোলন ও কুরআনের বিষয়বস্তু নিয়ে যে জোর গুজব, কানাঘুষা ও আলোচনা চলছিলো
তা-ই ছিল এর পটভূমি। লোকেরা বলতো : এ ব্যক্তি কোথা থেকে এসব অভিনব কথা নিয়ে আসছে তা
কে জানে। এ রকম কথা আমরা কখনো শুনিনি বা হতেও দেখিনি। তারা বলতো : বপ-দাদা থেকে যে
দীন চলে আসছে, গোটা জাতি যে দীন অনুসরণ করছে, সমগ্র দেশে যে নিয়ম পদ্ধতি শত শত বছর
ধরে প্রচলিত আছে এ লোকটি তার সব কিছুকেই ভুল বলে আখ্যায়িত করছে এবং বলছে, আমি যে
দীন পেশ করছি সেটিই ঠিক। এ এক বিস্ময়কর ব্যাপার। তারা বলতো : এ লোকটি যদি এই বলে
তার বক্তব্য পেশ করতো যে, বাপ-দাদার ধর্ম এবং প্রচলিত নিয়ম-পদ্ধতির মধ্যে তার
দৃষ্টিতে কিছু দোষ-ত্রুটি আছে এবং সে চিন্তা - ভাবনা করে নিজে কিছু নতুন বিষয় বের
করেছে তাহলে তা নিয়েও আলোচনা করা যেতো ।কিন্তু সে বলে, আমি তোমাদের যা শুনাচ্ছি তা
আল্লাহর বাণী । একথা কি মেনে নেয়া যায় । আল্লাহ কি তাঁর কাছে আসেন ৷ না কি সে
আল্লাহর কাছে যায়। না তার ও আল্লাহর মধ্যে কথাবার্তা হয় ৷ এসব আলোচনা ও কানাঘুষার
জবাবে বাহ্যত রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে উদ্দেশ্য করে কিন্তু
মূলত কাফেরদের শুনিয়ে বলা হয়েছে : হাঁ , মহাপরাক্রমশালী ও জ্ঞানময় আল্লাহ অহীর
মাধ্যমে এসব কথাই বলছেন এবং পূর্বের সমস্ত নবী-রসূলদের কাছে এসব বিষয় নিয়েই অহী
নাযিল হতো ।
অহীর আভিধানিক অর্থ হচ্ছে, দ্রুত ইংগিত এবং গোপন ইংগিত অর্থাৎ এমন ইংগিত যা অতি
দ্রুত এমনভাবে করা হবে যে তা কেবল ইংগিতদাতা এবং যাকে ইংগিত করা হয়েছে সেই জানতে ও
বুঝতে পারবে । তাছাড়া অন্য কেউ তা জানতে পারবে না । এ শব্দটিকে পারিভাষিক অর্থে এমন
দিক নির্দেশনা বুঝাতে ব্যবহার করা হয়েছে যা আল্লাহর এ বাণীর উদ্দেশ্য হলো, কোন
বান্দার কাছে আল্লাহর আসার কিংবা তাঁর কাছে কোন মানুষের যাওয়ার এবং সামনাসামনি কথা
বলার কোন প্রশ্নই ওঠে না। তিনি মহাপরাক্রমশালী ও জ্ঞানময়। মানুষের হিদায়াত ও
দিকনির্দেশনার জন্য যখনই তিনি কোন বান্দার সাথে যোগাযোগ করতে চান তখন কোন অসুবিধাই
তাঁর ইচ্ছার পথে প্রতিবন্ধক হতে পারে ।এ কাজের জন্য তিনি তাঁর জ্ঞান দ্বারা অহী
পাঠানোর পথ অবলম্বন করেন। সূরার শেষ আয়াতগুলোতে এ বিষয়টিরই পুনরাবৃত্তি করা হয়েছে
এবং সেখানে বিষয়টি আরো পরিষ্কার করে বলা হয়েছে।
তাদের ধারণা ছিল এসব হচ্ছে অদ্ভুত ও অভিনব কথা। তার জবাবে বলা হয়েছে, এসব অদ্ভুত
ও অভিনব কথা নয়। বরং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পূর্বে যত
নবী-রসূল এসেছেন আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদের সকলকেই এসব হিদায়াতই দান করা হতো। )
৭৯. এখানে অহী অর্থ
'ইলকা', ইলহাম, মনের মধ্যে কোন কথা সৃষ্টি করে দেয়া কিংবা স্বপ্নে কিছু দেখিয়ে
দেয়া, যেমন হযরত ইবরাহীম ও ইউসুফকে দেখানো হয়েছিলো (ইউসুফ, আয়াত ৪ ও ১০০ এবং আস
সাফফাত, ১০২)
৮০. এর সারমর্ম হচ্ছে,
বান্দা শব্দ শুনতে পায় কিন্তু শব্দদাতাকে দেখতে পায় না, যেমন হযরত মূসার ক্ষেত্রে
ঘটেছিলো। তূর পাহাড়ের পাদদেশে একটি বৃক্ষ থেকে হঠাৎ আওয়াজ আসতে শুরু হলো। কিন্তু
যিনি কথা বললেন তিনি তার দৃষ্টির আড়ালেই থাকলেন (ত্বাহা আয়াত ১১ থেকে ৪৮, আন নামল,
আয়াত ৮ থেকে ১২; আল কাসাস, আয়াত ৩০ থেকে ৩৫)
৮১. যে পদ্ধতিতে
নবী-রসূলদের কাছে সমস্ত আসমানী কিতাব এসেছে এটা অহী আসার সেই পদ্ধতি। কেউ কেউ এ
আয়াতাংশের ভুল ব্যাখ্যা করে এর অর্থ করেছেনঃ আল্লাহ রসূল প্রেরণ করেন যিনি তার
নির্দেশে সাধারণ লোকদের কাছে তাঁর বাণী পৌছিয়ে দেন।" কিন্তু কুরআনের
ভাষা-----আরবী-------(তারপর সে তাঁর নির্দেশে তিনি যা চান তাই অহী হিসেবে দেয়।)
তাদের এই ব্যাখ্যার ভ্রান্তি সম্পূর্ণ স্পষ্ট করে দেয়। সাধারণ মানুষের সামনে নবীদের
তাবলীগী কাজকর্মকে "অহী প্রদান" অর্থে না কুরআনের কোথাও আখ্যায়িত করা হয়েছে, না
আরবী ভাষায় মানুষের সাথে মানুষের কথাবার্তাকে 'অহী' শব্দ দ্বারা ব্যাখ্যা করার কোন
অবকাশ আছে। অহীর আভিধানিক অর্থই হচ্ছে গোপন এবং ত্বরিত ইংগিত । নবী-রসূলদের তাবলীগী
কাজকর্ম বুঝাতে এই শব্দটির ব্যবহার শুধু এমন ব্যক্তিই করতে পারে যে আরবী ভাষায়
একবারেই অজ্ঞ।
৮২. অর্থাৎ তিনি কোন
মানুষের সাথে সামনা -সামনি কথাবার্তা বলার বহু উর্ধে। নিজের কোন বান্দার কাছে
নির্দেশনা পৌছিয়ে দেয়ার জন্য সামনা সামনি বাক্যালাপ করা ছাড়া আর কোন কৌশল উদ্ভাবন
করতে তার জ্ঞান অক্ষম নয়।
No comments:
Post a Comment