Pages

Thursday, May 1, 2014

আলমে আরওয়াহতে আল্লাহর সাথে সমস্ত মানব রূহের কথোপকথন ও বিস্তারিত ব্যাখ্যা

আলমে আরওয়াহতে আল্লাহর সাথে সমস্ত মানব রূহের কথোপকথন ও বিস্তারিত ব্যাখ্যা

সুরা আরাফের ১৭২ ও ১৭৩নং আয়াতে বলা হয়েছে: 
১৭২) আর হে নবী! ১৩৩  লোকদের স্মরণ করিয়ে দাও সেই সময়ের কথা যখন তোমাদের রব বনী আদমের পৃষ্ঠদেশ থেকে তাদের বংশধরদের বের করিয়েছিলেন এবং তাদেরকে তাদের নিজেদের ওপর সাক্ষী বানিয়ে জিজ্ঞেস করেছিলেনঃ আমি কি তোমাদের রব নই? তারা বলেছিলঃ নিশ্চয়ই তুমি আমাদের রব , আমরা এর সাক্ষ দিচ্ছি৷ ১৩৪  এটা আমি এ জন্য করেছিলাম যাতে কিয়ামতের দিন তোমরা না বলে বসো, আমরা তো একথা জানতাম না ৷  ১৭৩) অথবা না বলে ওঠো, শিরকের সূচনা তো আমাদের বাপ -দাদারা আমাদের পূর্বেই করেছিলেন এবং পরবর্তীকালে তাদের বংশে আমাদের জন্ম হয়েছে৷ তবে কি ভ্রষ্টাচারী লোকেরা যে অপরাধ করেছিল সে জন্য তুমি আমাদের পাকড়াও করছো? ১৩৫ 


তাফহীমুল কুরআনে প্রণীত উক্ত আয়াতসমূহের বিস্তারিত ব্যাখ্যা নীচে দেয়া হল: 

১৩৩. পূর্ববর্তী আলোচনা যেখানে শেষ হয়েছিল সেখানে বলা হয়েছিল, মহান আল্লাহ বনী ইসরাঈললের কাছ থেক বন্দেগী ও আনুগত্যের অংগীকার নিয়েছিলেন এখন সাধারণ মানুষকে সম্বোধন করে তাদেরকে জানানো হচ্ছে যে এ ব্যাপারে বনী ইসরাঈলের কোন বিশেষত্ব নেই বরং প্রকৃতপক্ষে তোমরা সবাই নিজেদের স্রষ্টার সাথে একটি অংগীকারে আবদ্ধ এবং এ অংগীকার তোমরা কতটুকু পালন করেছো সে ব্যাপারে তোমাদের একদিন জবাবদিহি করতে হবে।
১৩৪. বিভিন্ন হাদীস থেকে জানা যায় এটি আদম সৃষ্টির সময়কার একটি ঘটনা।সে সময় একদিকে যেমন ফেরেশতাদের একত্র করে প্রথম মানুষটিকে সিজদা করানো হয়েছিল এবং পৃথিবীতে মানুষের খিলাফতের কথা ঘোষণা করা হয়েছিল, অন্যদিকে ঠিক তেমনি কিয়াতম পর্যন্ত আদমের যে অগণিত সংখ্যক বংশধর জন্মলাভ করবে মহান আল্লাহ তাদের সবাইকে একই সংগে সজীব ও সচেতন সত্তায় আবির্ভূত করে নিজের সামনে উপস্থিত করেছিলেন এবং তাদের কাছ থেকে তার রব হবার ব্যাপারে সাক্ষ্য গ্রহণ করেছিলেন। এ আয়াতের ব্যাখ্যায় হযরত উবাই ইবনে কা'ব রাদিয়াল্লাহু আনহু সম্ভবত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে জ্ঞান লাভ করে যা কিছু বর্ণনা করেন তা এ বিয়ষের সবচেয়ে ভাল ব্যাখ্যা বলে আমার কাছে মনে হয়ছে।তিনি বলেনঃ
"মহান আল্লাহ সবাইকে একত্র করেন। (এক এক ধরনের বা এক এক যুগের ) লোকদেরকে আলাদা আলাদা দলে সংগঠিত করেন। তাদেরকে মানবিক আকৃতি ও বাকশক্তি দান করেন। তারপর থেকে অংগীকার গ্রহণ করেন। তাদেরকে নিজেদের ওপর সাক্ষী বানিয়ে জিজ্ঞেস করেনঃ আমি কি তোমাদের রব নই৷ তারা বলেঃ অবশ্যই তুমি আমাদের রব। তখন আল্লাহ বলেনঃ কিয়ামতের দিন যাতে তোমরা না বলতে পারো আমরা তো একথা জানতাম না , তাই আমি তোমাদের ওপর পৃথিবী ও আকাশ এবং তোমাদের পিতা আদমকে সাক্ষী করছি।ভালভাবে জেনে রাখো, আমি ছাড়া ইবাদত লাভের যোগ্য আর কেউ নেই এবং আমি ছাড়া আর কোন রব নেই। তোমরা আমার সাথে আর কাউকে শরীক করো না। আমি তোমাদের কাছে আমার নবী পাঠাবো । আমার সাথে তোমরা যেসব অংগীকার করছো তারা সেসব তোমাদের স্মরণ করিয়ে দেবে। আর তোমাদের প্রতি আমার কিতাব নাযিল করবো। এ কথায় সমস্ত মানুষ বলে ওঠেঃআমরা সাক্ষ দিচ্ছি,তুমিই আমাদের রব, তুমিই আমাদের মাবুদ তুমি ছাড়া আমাদের আর কোন রব ও মাবুদ নেই।"
কেউ কেউ এ ব্যাপারটিকে নিছক রূপক বা উপমা হিসেবে বর্ণিত একটি ব্যাপার মনে করে থাকেন।তাদের মতে এখানে কুরআন মজীদ কেবল একথাই বুঝাতে চায় যে, আল্লাহর রব হবার বিষয়টি স্বীকৃতি মানবিক প্রকৃতির মধ্যে নিহিত রয়েছে এবং এ কথাটি এখানে এমনভাবে বর্ণিত হয়েছে যেমন এটি বাস্তব জগতে অনুষ্ঠিত একটি ঘটনা ছিল । কিন্তু এ ব্যাখ্যাকে আমি সঠিক মনে করি না। কুরআনও হাদীসে এটিকে একটি বাস্তব ঘটনা হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। আর শুধু ঘটনা হিসেবে বর্ণনা করেই শেষ করে দেয়া হয়নি বরং এ সংগে একথাও বলা হয়েছে যে, কিয়ামতের দিন অনাদিকালের এ অংগীকারটিকে মানুষের বিরুদ্ধে একটি দলীল ও প্রমাণ হিসেবে পেশ করা হবে। কাজেই একে নিছক একটি রূপক বর্ণনা গণ্য করার কোন কারণ আমি দেখি না। আমার মতে, বাস্তবে যেমন বিভিন্ন ঘটনা ঘটে থাকে ঠিক তেমনিভাবে এ ঘটনাটিও ঘটেছিল। মহান ও সর্বশক্তিমান আল্লাহ কিয়ামত পর্যন্ত যেসব মানুষকে সৃষ্টি করতে চেয়েছিলেন। তাদের সবাইকে বাস্তবে একই সংগে জীবন,চেতনা ও বাকশক্তি দান করে নিজের সামনে হাযির করেছিলেন এবং বাস্তবে তাদেরকে এ সত্যটি সম্পর্কে পুরোপুরি অবহিত করেছিলেন যে, তাঁর মহান, পবিত্র ও উন্নত সত্তা ছাড়া তাদের আর কোন রব ও ইলাহ নেই এবং তাঁর বন্দেগী ও হুকুমের আনুগত্য (ইসলাম) ছাড়া তাদের জন্যে আর কোন সঠিক জীবন বিধান নেই। এ সম্মেলন অনুষ্ঠানকে কোন ব্যক্তি যদি অসম্ভব মনে করে থাকে তাহলে এটি নিছক তার চিন্তার পরিসরের সংকীর্ণতার ফল ছাড়া আর কিছুই নয়। অন্যথায় বাস্তবে মানব সন্তানের বর্তমান পর্যায়ক্রমিক জন্ম ও বিকাশ যতটা সম্ভব সৃষ্টির আদিতে তার সামষ্টিক আবির্ভাব ও অন্তে তার সামষ্টিক পুনরুত্থান ও সমাবেশ ঠিক ততটাই সম্ভবপর। তাছাড়া মানুষের মত একটি সচেতন, বুদ্ধিমান, ও স্বাধীন ক্ষমতা সম্পন্ন সৃষ্টিকে পৃথিবীতে নিজের প্রতিনিধি হিসেবে নিযুক্তির প্রাক্কালে আল্লাহর পক্ষ থেকে তাকে প্রকৃত সত্য জানিয়ে দেয়া এবং তার কাছ থেকে নিজের পক্ষে বিশ্বস্ততার অংগীকার নিয়ে নেয়াটা অত্যন্ত যুক্তিসংগত বলেই মনে হচ্ছে। এ ধরনের একটা ঘটনা ঘটা মোটেই বিস্ময়কর নয়। বরং এ ধরনের একটা ঘটনা না ঘটলেই অবাক হতে হতো।
১৩৫. আদিকালে তথা সৃষ্টির সূচনা লগ্নে সমগ্র মানব জাতির কাছ থেকে যে অংগীকার নেয়া হয়েছিল এখানে তার উদ্দেশ্য বর্ণনা করা হয়েছে। সেই উদ্দেশ্য হচ্ছে মানব জাতির মধ্যে থেকে যারা আল্লাহর বিরুদ্ধে বিদ্রোহাত্মক আচরণ করবে তারা যেন নিজেরাই নিজেদের এ অপরাধের জন্যে সম্পূর্ণরূপে দায়ী হয়। নিজেদের সাফাই গাইবার জন্যে না জানার ওজুহাত পেশ করার কোন সুযোগ যেন তাদের না থাকে এবং পূর্ববর্তী বংশধরদের ওপর নিজেদের গোমরাহীর সমস্ত দায়-দায়িত্ব চাপিয়ে দিয়ে নিজেরা দায়মুক্ত হতেও না পারে। অন্য কথায় বলাযায়, প্রত্যেকটি মানুষ ব্যক্তিগত পর্যায়ে নিজের মধ্যে আল্লাহর একমাত্র ইলাহ ও একমাত্র রব হবার সাক্ষ ও স্বীকৃতি বহন করে চলেছে, আদিতম অংগীকারকে আল্লাহ প্রত্যেকটি মানুষের জন্যে এরি প্রমাণ হিসেবে গণ্য করেছেন। এ জন্যে কোন ব্যক্তি নিজের অজ্ঞতা অথবা ভ্রান্ত পরিবেশে লালিত হবার কারণে তার গোমরাহীর জন্যে মোটেই দায়ী নয়, একথা কোনক্রমেই বলা যেতে পারে না।
এখন প্রশ্ন দেখা দেয়, সৃষ্টির প্রথম দিনের এ অংগীকার যদি বাস্তবে সংঘটিত হয়েও থাকে তাহলে তা কি আমাদের চেতনা ও স্মৃতিপটে সংরক্ষিত আছে৷ আমাদের মধ্য থেকে কোন একজনও কি একথা জানে , সৃষ্টির সুচনা লগ্নে তাকে আল্লাহর সামনে পেশ করা হয়েছিল, সেখানে তার সামনে ----(আমি কি তোমাদের রব নই৷ ) প্রশ্ন করা হয়েছিল এবং তার জবাবে সে বলছিল ------(হ্যাঁ৷)জবাব যদি নেতিবাচক হয়ে থাকে, তাহলে যে অংগীকারের কথা আমাদের চেতনা ও স্মৃতিপটে থেকে উধাও হয়ে গেছে তাকে কেমন করে আমাদের বিরুদ্ধে প্রমাণ হিসেবে গণ্য করা যেতে পারে৷
এর জবাবে বলা যায়, সেই অংগীকারের কথা যদি মানুষের চেতনা ও স্মৃতিপটে জাগরুক রাখা হতো তাহলে, মানুষকে দুনিয়ার বর্তমান পরীক্ষাগারে পাঠানো ব্যাপারটা একেবারে অর্থহীন হয়ে যেতো। কারণ এরপর পরীক্ষার আর কোন অর্থই থাকতো না। তাই এ অংগীকারের কথা চেতনা ও স্মৃতিপটে জাগরুক রাখা হয়নি ঠিকই কিন্তু অবচেতন মনে ও সুপ্ত অনুভূতিতে তাকে অবশ্যি সংরক্ষিত রাখা হয়েছে। তার অবস্থা আমাদের অবচেতন ও অনুভূতি সঞ্জাত অন্যান্য জ্ঞানের মতই। সভ্যতা, সংস্কৃতি, নৈতিক ও ব্যবহারিক জীবনের সকল বিভাগে মানুষ আজ পর্যন্ত যা কিছুর উদ্ভব ঘটিয়েছিল তা সবই আসলে মানুষের মধ্যে প্রচ্ছন্নভাবে বিরাজিত ছিল। বাইরের কার্যকারণ ও ভিতরের উদ্যোগ আয়োজন ও চেষ্টা সাধনা মিলেমিশে কেবলমাত্র অব্যক্তকে ব্যক্ত করার কাজটুকুই সম্পাদন করেছে। এমন কোন জিনিস যা মানুষের মধ্যে অব্যক্তভাবে বিরাজিত ছিল না, তাকে কোন শিক্ষা , অনুশীলন ,পরিবেশের প্রভাব ও আভ্যন্তরীন চেষ্টা-সাধনার বলে কোনক্রমেই তার মধ্যে সৃষ্টি করা সম্ভব নয় এটি একটি জাজ্বল্যমান সত্য। আর এ প্রভাব -প্রচেষ্টাসমূহ নিজের সর্বশক্তি নিয়োগ করলেও মানুষের মধ্যে যেসব জিনিস অব্যক্তভাবে বিরাজিত রয়েছে তাদের কোনটিকেও পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন করে দেবার ক্ষমতা রাখে না। বড় জোর তারা তাকে তার মূল স্বাভাব প্রকৃতি থেকে বিকৃত করতে পারে মাত্র। তবুও সব রকমের বিকৃতি ও বিপথগামীতা সত্ত্বেও সেই জিনিসটি তার মধ্যে বিদ্যমান থাকবে, আত্মপ্রকাশের প্রচেষ্টা চালাতে থাকবে এবং বাইরের আবেদন সাড়া দেয়ার জন্যে সর্বক্ষণ উন্মুখ থাকবে। এ ব্যাপারটি যেমন আমি ইতিপূর্বে বলেছি , আমাদের সকল প্রকার অবচেতন ও প্রচ্ছন্ন অনুভূতি লব্দ জ্ঞানের ক্ষেত্রে সর্বতোভাবে সত্যঃ
:এগুলো সবই আমাদের মধ্য অব্যক্তভাবে রয়েছে। আমরা বাস্তবে যা কিছু ব্যক্ত করি এবং যেসব কাজ করি তার মাধ্যমেই এগুলোর অস্তিত্বের নিশ্চিত প্রমাণ আমরা পেয়ে থাকি।
: এগুলোর কার্যকর অভিব্যক্তির জন্যে বাইরের আলোচনা (স্মরণ করিয়ে দেয়া)শিক্ষা, অনুশীলন ও কাঠামো নির্মাণের প্রয়োজন হয়। আর আমাদের দ্বারা বাস্তবে যা কিছু সংঘটিত হয়, তা আসলে বাইরের সেই আবেদনেরই সাড়া বলে প্রতীয়মান হয় যা আমাদের মধ্যে সুপ্তভাবে বিরাজমান জিনিসসমূহের পক্ষ থেকে এসে থাকে।
: ভিতরের ভ্রান্ত কামনা বাসনা ও বাইরের প্রতিকূল প্রভাব, প্রতিপত্তি ও কার্যক্রম এগুলোকে দাবিয়ে দিয়ে বিকৃত ও বিপথগামী করে এবং এগুলোর ওপর আবরণ ফেলে দিয়ে এগুলোকে নিস্তেজ ও নিষ্ক্রিয় করে দিতে পারে কিন্তু সম্পূর্ণরূপে নিশ্চিহ্ন করে দিতে পারে না। আর এজন্যেই ভিতরের চেতনা ও বাইরের প্রচেষ্টা -উভয়ের সহায়তায়, সংস্কার, সংশোধন ও পরিবর্তন (conversion) সম্ভবপর।
বিশ্ব জাহানে আমাদের যথার্থ মর্যাদা এবং বিশ্ব জাহানের স্রষ্টার সাথে আমাদের সম্পর্কের ব্যাপারে আমরা যে সুপ্ত চেতনা লব্দ জ্ঞানের অধিকারী তার অবস্থাও এ একই পর্যায়ভুক্তঃ এ জ্ঞান যে আবহামানকাল ধরেই বিরাজমান তার প্রমাণ হচ্ছে এই যে,তা মানব জীবনের প্রতি যুগে পৃথিবীর সব এলাকায়, প্রতিটি জনপদে প্রত্যেকটি বংশে প্রজন্মে ও পরিবারে আত্মপ্রকাশ করেছে এবং কখনো দুনিয়ার কোন শক্তিই তাকে নিশ্চিহ্ন করতে সক্ষম হয়নি।
: ঐ জ্ঞান যে প্রকৃত সত্যের অনুরূপ তার প্রমাণ হচ্ছে এই যে, যখনই তা আত্মপ্রকাশ করে আমাদের জীবনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে তখনই তা সুষ্থ ও কল্যাণকর ফল প্রদান করতে সক্ষম হয়েছে।
: তার আত্মপ্রকাশ করার ও কার্যকর রূপলাভ করার জন্যে সবসময় একটি বহিরাগত আবেদনের প্রয়োজন হয়েছে। তাই নবীগণ, আসমানী কিতাবসমূহ ও তাদের আনুগত্যকারী সত্যের আহবায়কদের সবাই এ দায়িত্বই পালন করে এসেছেন। এ জন্যেই কুরআনে তাদেরকে মুযক্কির (স্মারক) এবং তাদের কাজকে তাযকীর (স্মরণ করিয়ে দেয়া), যিকর (স্মরণ )ও তাযকিরাহ(স্মৃতি) ইত্যাদি শব্দাবলীর মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়েছে । এর অর্থ দাঁড়ায় নবীগণ ,কিতাবসমূহ ও সত্যের আহবায়কগণ মানুষের মধ্যে কোন নতুন জিনিস সৃষ্টি করেন না, বরং তার মধ্যে আগে থেকেই যে জিনিসটির অস্তিত্ব বিরাজ করছিল তাকে জাগিয়ে তোলেন এবং নতুন জীবনীশক্তি দান করেন মাত্র।
: মানবাত্মার পক্ষ থেকে প্রতি যুগে এ স্মরণ করিয়ে দেবার প্রয়াসে ইতিবাচক সাড়া দেয়া হয়েছে । তার মধ্যে যে প্রকৃতপক্ষে এমন এক জ্ঞান সুপ্ত ছিল , যা নিজের আহবায়কারীরা আওয়াজ চিনতে পেরে তার জবাব দেবার জন্যে জেগে উঠেছে, এটি তার আর একটি প্রমাণ।
: তারপর মূর্খতা, অজ্ঞতা, ইন্দ্রিয় লিপ্সা, স্বার্থপ্রীতি এবং মানুষ ও জিনের বংশদ্ভুত শয়তানদের বিভ্রান্তিকর শিক্ষা ও প্ররোচনা তাকে সবসময় দাবিয়ে রাখার, বিপথগামী ও বিকৃত করার প্রচেষ্টা চালিয়েছে। এর ফলে শিরক, আল্লাহ বিমুখতা , আল্লাহর বিরুদ্ধে বিদ্রাহ এবং নৈতিক ও কর্ম ক্ষেত্রে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। কিন্তু বিভ্রান্তি ও ভ্রষ্টতার এ সমুদয় শক্তির সম্মিলিত প্রচেষ্টা সত্তেও সেই জ্ঞানের জন্মগত ছাপ মানুষের হৃদয়পটে কোন না কোন পর্যায়ে অক্ষুণ্ন থেকেছে। এ জন্যেই স্মরণ করিয়ে দেয়াও নবায়নের প্রচেষ্টা তাকে জাগিয়ে তোলার ব্যাপারে সফল ভুমিকা পালন করে এসেছে।
অবশ্যি দুনিয়ার বর্তমান জীবনে যারা পরম সত্য ও বাস্তবতাকে অস্বীকার করতে বদ্ধপরিকর তারা নিজেদের তথাকথিত যুক্তিবাদের ভিত্তিতে জন্মগতভাবে হৃদয়ফলকে খোদিত এ লিপিটির অস্তিত্ব অস্বীকার করতে পারে অথবা কমপক্ষে একে সন্দেহযুক্ত সাব্যস্ত করতে পারে। কিন্তু যেদিন হিসেব নিকেশ ও বিচারের আদালত প্রতিষ্ঠিত হবে সেদিন মহাশক্তিশালী স্রষ্টা তাদের চেতনা ও স্মৃতিপটে সৃষ্টির প্রথম দিনের সেই সম্মেলনটির স্মৃতি জাগিয়ে তূলবেন। সৃষ্টির প্রথম দিনে তারা একযোগে যে মহান সৃষ্টাকে তাদের একমাত্র রব ও মাবুদ বলে স্বীকার করে নিয়েছিল সেই স্মৃতি আবার পুরোদমে তরতাজা করে দেবেন। তারপর তিনি তাদের নিজেদের অভ্যন্তর থেকে প্রমাণ সংগ্রহ করে এ অংগীকরলিপি যে তাদের হৃদয়ে সবসময় খোদিত ছিল তা দেখিয়ে দেবেন।তাদের জীবনের সংরক্ষিত কার্যবিবরণী থেকে সর্বসমক্ষে এও দেখিয়ে দেবেন যে, তারা কিভাবে হৃদয়ফলকে খোদিত সে লিপিটি উপেক্ষা করেছে, কখন কোন সময় তাদের হৃদয়ের অভ্যন্তর থেকে এ লিপির সত্যতার স্বীকৃতি স্বগতভাবে উচ্চারিত হয়েছে, নিজের ও নিজের চারপাশের ভ্রষ্টতার ওপর তাদের বিবেক কোথায় কখন অসম্মতি ও বিদ্রোহের আওয়াজ বুলন্দ করেছে, সত্যের আহবায়কদের আহবানের জবাব দেয়ার জন্যে তাদের অভ্যন্তরের লুকানো জ্ঞান কতবার কত জায়গায় আত্মপ্রকাশে উন্মুখ হয়েছে এবং তারা নিজেদের স্বার্থপ্রীতি ও প্রবৃত্তির লালসার বশবর্তী হয়ে কোন ধরনের তাট বাহানার মাধ্যমে তাকে ক্রমাগত প্রতারিত ও স্তব্ধ করে দিয়েছে। সেদিন যখন এসব গোপন কথা প্রকাশ হয়ে পড়বে তখন যুক্তি-তর্ক করার অবকাশ থাকবে না বরং পরিষ্কারভাবে অপরাধ স্বীকার করে নিতে হবে । তাই কুরআন মজিদ দ্ব্যর্থহীন ভাষায় ঘোষনা করেছেঃ সেদিন অপরাধীরা একথা বলবে না, আমরা মুর্খ ছিলাম অজ্ঞ ছিলাম , আমরা গাফেল ছিলাম বরং তারা একথা বলতে বাধ্য হবে, আমরা কাফের ছিলাম, অর্থাৎ আমরা জেনে বুঝে সত্যকে অস্বীকার করেছিলাম।
------------------------------------
"আর তারা নিজেদের ব্যাপারেই সাক্ষ দেবে, তারা কাফের তথা অস্বীকার ও প্রত্যাখ্যানকারী ছিল।" (আনআমঃ ১৩০) 



No comments:

Post a Comment