Pages

Sunday, March 30, 2014

আল্লাহকে কে সৃষ্টি করেছে?-একটি অযৌক্তিক ও অবাস্তব প্রশ্ন

আল্লাহকে কে সৃষ্টি করেছে?-একটি অযৌক্তিক ও অবাস্তব প্রশ্ন


[ফেসবুক থেকে সংগৃহীত]

আমার মহল্লার এক ছেলে।  আমাকে দেখে সেদিন বললো, ভাইয়া আমার একটা কথা আছে, আপনার কি একটু সময় হবে?

বললাম, হ্যাঁ বলো। সে বললো, ভাইয়া এতো দিন তো ধর্ম-কর্ম নামাজ-কালামের ধার দিয়েও হাটতাম না। এখন একটু এ পথে আসার চেষ্টা করছি; অথচ মনের মধ্যে একটা প্রশ্ন শুধু খোচায়! 

বললাম, কী প্রশ্ন বলো। সে বললো, খালি মনে হয় ‘আল্লাহকে কে সৃষ্টি করেছে’?
আমি বললাম, কেন অন্য কেউ কি নিজেকে বিশ্বজাহানের স্রষ্টা বলে দাবী করেছে না কি?
সে যেন একটু হকচকিয়ে গেল। বললাম তাহলে সমস্যা কী? অন্য কেউ দাবী করলে না একটা সমস্যা ছিলো। যে দাবী মাত্র একজনই করেছে, কেউ কোনো দিন তাকে চ্যালেঞ্জ করার দুঃসাহস দেখায়নি সেটা নিয়ে তো কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়!
একটু থতমত খেয়ে সে বললো, না ভাইয়া! এমন তো না, কিন্তু মনের মধ্যে খালি এই কথা এসে খোচায়! 
বললাম, এটা তো কোনো প্রশ্ন নয় এটা শয়তানের একটা শিশুতোষ ধোঁকা! এটা দিয়ে সে কেবল বোকাদেরকেই ঘায়েল করতে পারে। তুমি এতো আধুনিক যুগের বুদ্ধিমান মানুষ হয়ে এতে আক্রান্ত হও কিভাবে? 
সে যেন একটু সাহস পেলো, চোখটা চকচক করে উঠলো। বললাম, শোনো, তোমার মনের ঘরে এতো দিন কোনো সম্পদ ছিলো না যে, শয়তান তা চুরি করতে আসবে। এখন সম্ভবত ঈমানের সম্পদ একটু একটু জমা হতে শুরু করেছে। তাই শয়তানের এই হানা, তা চুরি করে নিতে। তুমি সত্যিই আন্তরিকভাবে জানতে ও বুঝতে চাও, নাকি শুধু তর্কের জন্য তর্ক করতে চাও? সে বললো, ছি ভাইয়া! আমি আপনার সাথে তর্ক করবো? 
আমি বললাম, তাহলে শোনো, ‘আল্লাহকে কে সৃষ্টি করেছে’ প্রশ্ন তো এখানেই শেষ হয়ে যাবে না। এরপর তোমার জানতে হবে, তাকে কে সৃষ্টি করেছে, তারপর তাকে কে? তারপর তাকে কে? তারপর তাকে কে? তাই না?
খানিকটা ভেবে সে বললো, হ্যাঁ, তাই তো! আমি বললাম, ঠিক আছে তুমি এক কাজ করো; এভাবে প্রশ্ন করতে থাকো, তাকে কে সৃষ্টি করেছে? তাকে কে? তাকে কে? তাকে কে? তাকে কে? তাকে কে? তাকে কে? এভাবে প্রশ্ন করতে থাকো। তারপর যেখানে গিয়ে তুমি ঠেকে যাবে, যে আর পিছনে কেউ নেই, তারপর আমি জবাব দেবো যে, তাকে সৃষ্টি করেছে। সে একটু মাথা চুলকিয়ে বললো, হ্যাঁ, ভাইয়া। 

বললাম, ঠিক আছে আগে তোমার প্রশ্ন আগে শেষ করো। এক কাজ করো তুমি। তুমি প্রশ্ন করতে থাকো, আল্লাহকে কে সৃষ্টি করেছে? তাকে কে সৃষ্টি করেছে? তাকে কে? তাকে কে? তাকে কে? তাকে কে? তাকে কে? তাকে কে? তাকে কে? তাকে কে? তাকে কে? তাকে কে? তাকে কে? তাকে কে? তাকে কে? তাকে কে? তাকে কে? তাকে কে? তাকে কে? তাকে কে? তাকে কে? তাকে কে? তাকে কে? তাকে কে? তাকে কে? তাকে কে? তাকে কে?............ এভাবে প্রশ্ন করতে থাকো.........। আমি একটু বাজার করে আসি। তুমি যেখানে গিয়ে দেখবে যে আর পিছনে কেউ নেই সেখানে দাঁড়িয়ে যাবে। তারপর আমি দলীল প্রমাণ সহ সেই সত্ত্বাকে চিনিয়ে দেবো। ঠিক আছে?

সে সম্ভবত কিছু বুঝে না উঠতে পেরে বললো, ঠিক আছে ভাইয়া।

আমি বাজার থেকে ফিরে এসে তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, কী খবর, শেষ পেয়েছো? সে অসহায়ের মতো বললো, না ভাইয়া, এ প্রশ্নের তো কোনো শেষ নেই?

বললাম, তুমি একটু গভীরভাবে ভেবে দেখো, তাহলেই বুঝতে পারবে যে, সকল কিছুর অস্তিত্বের জন্য এমন একজন থাকা চাই যাকে কেউ অস্তিত্ব দেয়নি, যাকে কেউ সৃষ্টি করেনি। যিনি চিরঞ্জীব চিরস্থায়ী; চিরকাল ছিলেন, চিরকাল থাকবেন। যিনি অনন্ত অসীম; যিনি প্রথম যিনি শেষ।

ছেলেটা আবেগে কাঁদো কাঁদো হয়ে বললো, জি ভাইয়া বুঝতে পেরেছি।

আমি বললাম, আসলে যার কোনো স্রষ্টা আছে সে তো সৃষ্টি। যার অস্তিত্বের জন্য স্রষ্টা প্রয়োজন সে তো স্রষ্টা হতে পারে না। স্রষ্টা আর সৃষ্টির মৌলিক একটা পার্থক্যই তো এইটা। 

তাছাড়া ‘আল্লাহর স্রষ্টা কে’ এ প্রশ্নের যেহেতু কোনো শেষ নেই, তাই আসলে এটা কোনো প্রশ্নই নয়; বরং এটা হলো নিছক শয়তানের কুমন্ত্রণা। যখনই তোমার মনে শয়তান এমন কুমন্ত্রণা দেবে সাথে সাথে আল্লাহর কাছে আশ্রয় কামনা করবে। পড়বে, আউযুবিল্লাহি মিনাশ শাইত্ব-নির রজীম। পড়বে, রব্বী আউযুবিকা মিন হামাযাতিশ শাইয়াইত্বীন, ওয়া আউযুবিকা রব্বী আই ইয়াহ্‌দুরূন। সূরা ইখলাস পাঠ করবে। আল্লাহ এবং তাঁর রসূল (সা.) আমাদেরকে এ কুমন্ত্রণা থেকে নিজেদেরকে রক্ষা করতে এ ধরণের উপদেশই দিয়েছেন।

সব শেষে সে বললো, ঠিকই বলেছেন ভাইয়া। শয়তান আর এই ফালতু প্রশ্ন নিয়ে আমার চিন্তার ত্রিসীমানায়ও আসতে পারবে না।

আল্লাহ আমাদের সকলকে শয়তানের ওয়াসওয়াসা থেকে হেফাজত করুন!

Saturday, March 29, 2014

'স্রষ্টাকে কে সৃষ্টি করেছে', এই প্রশ্ন করার অধিকার নাস্তিকদের নাই..

'স্রষ্টাকে কে সৃষ্টি করেছে', এই প্রশ্ন করার অধিকার নাস্তিকদের নাই..


নাস্তিকদের স্ববিরোধীতা ও দ্বৈতনীতির একটা জ্বলজ্বলে উদাহরণ হচ্ছে এই প্রশ্নটা- "স্রষ্ট্রাকে কে সৃষ্টি করেছে?" কারণ, নাস্তিকতার প্রথম বিশ্বাস বা নাস্তিক্যবাদী ঈমানের মূল ভিত্তি হচ্ছে এই বিশ্বজগতের কোন সৃষ্টিকর্তা নাই, এগুলি নিজে নিজেই সৃষ্টি হয়ে গিয়েছে। এতবড় বিশ্বজগৎ যদি কোন সৃষ্টিকর্তা ছাড়াই সৃষ্টি হয়ে যেতে পারে তাহলে "স্রষ্ট্রার এমনি এমনি সৃষ্টি হয়ে যাওয়া"-তে তাদের এত সমস্যা কোথায়? তাদের নিজেদের বেলায় এতকিছু সৃষ্টি হওয়ার জন্য কোন স্রষ্ট্রা লাগে না কিন্তু আস্তিকদের স্রষ্ট্রার অবশ্যই একজন স্রষ্ট্রা থাকতে হবে! স্ববিরোধীতার এরচাইতে ভাল উদাহরণ আর কী হতে পারে?



আস্তিকের দাবী অনুসারে এই বিশ্বজগৎ সৃষ্টির পেছনে অবশ্যই একজন স্রষ্ট্রা রয়েছেন এবং সেই স্রষ্ট্রার অস্তিত্ব যতটা না যুক্তির উপরে দাঁড়িয়ে তারচাইতে বেশি বিশ্বাসের উপরে। আর এই বিশ্বাসের নামই হচ্ছে ঈমান যেটাকে নাস্তিকরা অন্ধ বিশ্বাস বলে দাবী করে। তাদের এই দাবী দাঁড়িয়ে আছে যে যুক্তির উপরে সেই যুক্তিও কিন্তু বিশ্বজগৎ সৃষ্টির রহস্যের কোন জবাব দিতে সক্ষম নয়। যুক্তির কবর খুঁড়তে খুঁড়তে তারাও একসময় অসহায় হয়ে পড়েন, তাদের চিন্তার জগতের গোড়াও বিশ্বাসের উপরেই দাঁড়িয়ে কিন্তু তারা দাবী করেন অযৌক্তিক কিছু তারা করতে পারেন না। অথচ বিশ্বজগৎ সৃষ্টির রহস্যের জবাবে কোনরকম যুক্তির ধার না ধেরেই তারা বিশ্বাস করে বসে আছেন সবকিছু এমনি এমনি হয়ে গিয়েছে। যুক্তিবাজদের এহেন অযৌক্তিক আচরণ সত্যিই বিস্ময়কর!
স্ববিরোধী ও অযৌক্তিক বিশ্বাসের উপরে দাঁড়িয়ে থাকা নাস্তিকদের সৃষ্টিকর্তার স্রষ্ট্রা খুঁজতে যাওয়া একধরনের স্ববিরোধীতাই বটে।
বিঃদ্রঃ সিস্টেমের ভেতরে বসে সিস্টেমের ক্রিয়েটরকে সিস্টেমের প‌্যারামিটার দিয়ে যাচাই করতে যাওয়া এক ধরনের অবৈজ্ঞানিক ও অযৌক্তিক কাজ। এই অযৌক্তিক ও অবৈজ্ঞানিক কাজ যারা করেন তাদের (নাস্তিকদের) সাথে যুক্তি দেয়া অর্থহীন বিবেচনা করে সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব ও সৃষ্টিকর্তার স্রষ্ট্রা বিষয়ক যুক্তি দিয়ে সময় নষ্ট করার পক্ষপাতী নই। তবুও কেউ ঐ বিষয়ে আলোচনায় যেতে চাইলে একটা লেখা পড়তে পারেন-

“সৃষ্টিকর্তাকে কে সৃষ্টি করেছেন?” – এই প্রশ্নের সরল উত্তর


“মুক্তমনা” নাস্তিকরা, “ডি-জুস”-কালচারে-বড়-হওয়া নিজের দ্বীন-সম্বন্ধে-একেবারে-অজ্ঞ কোন কিশোর বা তরুণকে যে ক’টি প্রশ্ন করে ভড়কে দেয়, তার একটি হচ্ছে: “সৃষ্টিকর্তাকে কে সৃষ্টি করেছেন?” অথচ, একটু চিন্তা করলেই দেখা যাবে যে, এই প্রশ্নটা সেই গ্রাম্য “শঠ-পন্ডিতের” সাথে “সত্যিকার পন্ডিতের” বিতর্কের প্রসিদ্ধ গল্পের মত – যেখানে “শঠ-পন্ডিত” তার প্রতিদ্বন্দিকে জিজ্ঞেস করেছিল: I don’t know – মানে কি?
চলুন দেখি “সৃষ্টিকর্তাকে কে সৃষ্টি করেছেন?” এই প্রশ্নের একটা সরল উত্তর ভেবে দেখা যাক:

স্রষ্টা এমন সত্তা যিনি সৃষ্ট নন, তিনি অস্তিত্বে আসনে নি বরং সর্বদা অস্তত্বিশীল এবং তিনি সৃষ্টিজগতের স্থান-কাল কাঠামোর অংশ নন ৷ আর এজন্যই তিনি অসৃষ্ট বা অবস্তু, ফলে তাঁর সৃষ্ট হওয়ার প্রয়োজন নেই ৷ এজন্য স্রষ্টাকে কে সৃষ্টি করেছেন, এই প্রশ্নটিই অবান্তর ৷ যেমন একটি ছবি কে এঁকেছে, এর উত্তরে একজন চিত্রশিল্পীর অস্তিত্ব থাকা আবশ্যক, কিন্তু “চিত্রশিল্পীকে কে এঁকেছে?” এই প্রশ্নটি অবান্তর কেননা চিত্রশিল্পীর ক্ষেত্রে “আঁকা” নামক ক্রিয়াটি প্রযোজ্য নয় ৷ তাই চিত্রশিল্পীর অংকিত হওয়ার প্রয়োজন নেই, অন্য কথায় “অংকিত নয়” এমন একজন অংকনকারী থাকা সম্ভব ৷ একইভাবে “সৃষ্ট নন”, এমন একজন স্রষ্টা থাকা সম্ভব, তাই বার্ট্রান্ড রাসেলের “হু ক্রিয়েটেড গড মাম?” এই প্রশ্ন করা অযৌক্তিক, অবান্তর, বোকামী ৷ আরেকটা উদাহরণ দেয়া যাক ৷ ধরা যাক আপনি অনেক দীর্ঘ একটি তাসের সারির সামনে দাঁড়িয়ে আছেন, আপনি দেখছেন একটি একটি করে তাস পড়ে যাচেছ এবং পড়ে যাওয়ার সময় সে পরের তাসটিকে ধাক্কা দিচ্ছে, ফলে পরের তাসটিও পড়ে যাচেছ, এভাবে একটি তাসের পতনের কারণ হচ্ছে তার পূর্বের তাসটি, তার পতনের কারণ তার পূর্বের তাসটি, তার পতনের কারণ তার পূর্বের তাসটি, এভাবে যেতে থাকলে একটি তাসে গিয়ে আপনাকে থামতেই হবে যেটি প্রথম তাস ৷ এখন যদি প্রশ্ন করা হয় যে, প্রথম তাসের পতনের কারণ কি? উত্তরে বলা যাবে না যে সেটিও একটি তাস, ফলে বুঝতে হবে যে প্রথম তাসের পতনের কারণ এমন কিছু যে নিজে তাস নয় ৷ হয়ত সে একজন মানুষ যে প্রথম তাসটিকে টোকা দিয়েছে ৷ এই মানুষটি যেহেতু তাস নয়, সেজন্য তাসের ক্ষেত্রে যে বৈশিষ্ট্যসূচক প্রশ্ন করা যাবে, এই মানুষের ক্ষেত্রে তা করা যাবে না ৷ যেমন তাসের ক্ষেত্রে প্রশ্ন করা যায় যে “তাসটি কি হরতন না ইস্কাপন?”, কিন্তু মানুষের ক্ষেত্রে এই প্রশ্নটি অবান্তর ৷ কিন্তু তা সত্ত্বেও তাসের পতনের পেছনে আদি কারণ হিসেবে মানুষ থাকার বিষয়টি বাস্তব ৷ ঠিক তেমনি স্রষ্টা যেহেতু সৃষ্টি নন কিংবা ফল নন, সেহেতু “তাঁর স্রষ্টা কে?” বা “কারণ কি?” এই প্রশ্নগুলি তাঁর বেলায় প্রযোজ্য নয় – কিন্তু তাঁর থাকার বিষয়টি বাস্তব ৷ এখানে আপাতদৃষ্টিতে একটি প্রশ্ন আসতে পারে যে, যদি স্রষ্টাকে অস্তিত্বে আনার প্রয়োজন নেই বলে ধরে নেই, তবে খোদ মহাবিশ্বের ক্ষেত্রেই একথা ধরে নেই না কেন ? এর কারণ এই যে, মহাবিশ্ব কোন “জ্ঞানসম্পন্ন সত্তা” নয় যে নিজেই নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, পরিচালনা করতে পারে। বরং মহাবিশ্বের সকল ব্যবস্থা ও সকল অংশ ইংগিত করছে যে, তা নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত। এজন্য কোন স্রষ্টা ব্যতীত মহাবিশ্বের স্বয়ংসর্ম্পূণ অস্তিত্বের ধারণা সর্ম্পূণ যুক্তি বিরোধী, তাই এক্ষেত্রে একমাত্র যৌক্তিক সম্ভাবনা হচ্ছে এই যে, এর একজন জ্ঞানী স্রষ্টা ও নিয়ন্ত্রণকারী থাকতে হবে যিনি নিজে সৃষ্ট নন।


আল্লাহর অস্তিত্ব সম্পর্কে সংশয় নিরসন: আল্লাহ তায়ালাকে কে সৃষ্টি করেছে? তিনি কিভাবে পয়দা হলেন?

আল্লাহর অস্তিত্ব সম্পর্কে সংশয় নিরসন: আল্লাহ তায়ালাকে কে সৃষ্টি করেছে? তিনি কিভাবে পয়দা হলেন?


প্রশ্ন: আমি একজন গুনাহ্‌গার মুসলমান। দীর্ঘকাল অনৈসলামিক জীবন যাপন করেছি। কিছুদিন যাবত আমি ইবাদত ও কুরআন পাঠের আগ্রহ অনুভব করছি। কিন্তু বড়ই পরিতাপের বিষয় যে, এর সাথে সাথেই আমার মনে নানা রকম সন্দেহ সংশয় জন্ম নিচ্ছে। আমি এগুলোকে চাপা দিতে চেষ্টা করছি। কিন্তু আশংকা হয় যে, এ সব সংশয় দূর করা না হলে এই বার্ধক্যে এসেও আবার আমার ইবাদত পরিত্যক্ত হয়ে যেতে পারে এবং পুনরায় আমি গোমরাহীতে লিপ্ত হয়ে বসতে পারি। যে সংশয়টি বারবার আমার মনে জাগে, তা আমি মুখে উচ্চারণ করতে চাইনে। কিন্তু সেটি শুধু এ জন্য আপনার কাছে পেশ করছি, যেন আপনি আমাকে বুঝিয়ে আশ্বস্ত করতে পারেন। যে প্রশ্নটি থেকে থেকে আমার মনে জাগে, তা এই যে, আল্লাহ তায়ালাকে কে সৃষ্টি করেছে? তিনি কিভাবে পয়দা হলেন? আল্লাহর দোহাই, আপনি আমার এই সংশয় দূর করে দিন, যাতে আমি এই দ্বিধাদ্বন্দ্ব থেকে নিষ্কৃতি পাই।



জবাব: আপনি যে প্রশ্ন ও সংশয়ের কথা স্বীয় চিঠিতে উল্লেখ করেছেন, এ ধরনের প্রশ্ন মানুষের মনে জাগা কোনো অস্বাভাবিক ব্যাপার নয়।



আপনি যদি সামান্য একটু  চিন্তাভাবনা করেন, তাহলে বুঝতে পারবেন যে, এ ধরনের সন্দেহ শুধু আল্লাহর অস্তিত্বে বিশ্বাসীদের মনেই জন্মে না, যে কোনো নাস্তিক সংশয়বাদী ও খোদাদ্রোহীতার মনেও এ ধরনের প্রশ্নাবলী জন্ম নিয়ে থাকে। যে ব্যক্তি দৃশ্যমান বিশ্বজগতের উর্ধে বা বাইরে এর কোনো স্রষ্টার অস্তিত্ব মানে না, অথবা সে ব্যাপারে কোনো সন্দেহ সংশয় বা দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভোগে, তাকে কয়েকটা প্রশ্ন অত্যন্ত প্রবলভাবে নাড়া দেয় এবং জবাব দেবার দাবি জানায়। যেমন, এই সৃষ্টি জগতের প্রথম উদ্ভব কিভাবে হয়, এর আর্বিভাবের আসল কারণ বা উৎস কি, জীবন, শক্তি, পদার্থ ও বির্বতনের যে অসংখ্য প্রতীক বা বাহন আমাদেরকে চারদিক থেকে ঘিরে রেখেছে, সে সবের সূচনা কবে ও কিভাবে হয়েছিল এবং কে করেছিল? এ ধরনের প্রশ্ন কোনো না কোনোভাবে প্রত্যেক মানুষকেই বিব্রত করে থাকে-তা সে বিশ্বাসীই হোক, সংশয়বাদী হোক অথবা নাস্তিক হোক।

এরপর আরো একটু চিন্তাভাবনা করলে এ ব্যাপারেও সহজেই ধারণা লাভ করা যায় যে, বিশ্ব প্রকৃতির আবির্ভাব ও তার স্রষ্টা সংক্রান্ত এ ধরনের যাবতীয় প্রশ্নের কোনো সন্তোষজনক জবাব নিছক নিজস্ব বুদ্ধিবৃত্তি, প্রজ্ঞা, চেষ্টা সাধনা ও তত্ত্বানুসন্ধান দ্বারা লাভ করা প্রত্যেক মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। বিশ্ব স্রষ্টার সত্তা ও গুণাবলীর কল্পনা করাটা অবশ্য অনেক উর্ধের ব্যাপার। তথাপি আমরা যদি ক্ষণকালের জন্য মহাবিশ্বের বাইরেও তার চেয়ে উচ্চতর ও ক্ষমতাধর কোনো শক্তি বা সত্তা এর স্রষ্টা হিসেবে বিদ্যমান আছে কিনা সে প্রশ্ন এড়িয়ে যাই এবং শুধুমাত্র সৃষ্টিজগতের অস্তিত্ব মেনে নিয়েই ভাবতে শুরু করি, তাহলেও স্থান ও কালের সাথে সংশ্লিষ্ট অনেক বাস্তব ও কাল্পনিক বিষয় এমন রয়েছে, যা পুরোপুরিভাবে আমাদের বোধশক্তির নাগালে আসতে অক্ষম। এ সব জিনিসের ব্যাপকতা ও বিস্তৃতি এতো বেশি যে, তা আয়ত্বে আনা তো দূরের কথা, একটা নির্দিষ্ট সীমার বাইরে তার কল্পনা করতেও আমরা অপারগ। উদাহরণস্বরূপ, কালের আদি অন্ত সম্পর্কে আমরা কি ভাবতে পারি যে, তার সূচনা কিভাবে ও কখন হয়েছে এবং তা কোথায় গিয়ে কিভাবে সমাপ্ত হবে? সূর্য, চন্দ্র, নক্ষত্র,এবং অন্তরীক্ষের অন্যান্য বস্তু যে মহাশূন্যে ভেসে বেড়াচ্ছে, সে মহাশূন্যের সীমা সরহদ কোথায় গিয়ে শেষ হয়েছে, এই মহাশূন্যের সীমার ওপারে কোন্‌ জগত বিরাজ করছে, কল্পনার চোখ দিয়ে উঁকিঝুঁকি মেরেও কি তা দেখার সাধ্য কারো আছে? এ ধরনের দু'একটা উদাহরণ দ্বারাই এ কথা স্পষ্ট হয়ে যায় যে, আমাদের চিন্তাশক্তি ও বোধশক্তির ক্ষমতা খুবই সীমিত। আমাদের চিন্তাশক্তি ও বোধশক্তির স্বাভাবিক পরিধিই এতো সংকীর্ণ ও সংকুচিত যে, একটা নির্দিষ্ট স্তর পেরিয়ে কোনো কিছু কল্পনা করাও তার পক্ষে সম্পূর্ণ অসম্ভব। মানবীয় বিবেক বুদ্ধি ও চিন্তাশক্তি যখন এতোই অক্ষম ও সীমাবদ্ধ যে, সে সৃষ্টির রহস্যও পুরোপুরিভাবে বুঝতে পারেনা। তখন সে স্রষ্টার আদি অন্ত কিভাবে উপলব্ধি করতে পারবে?

বিশ্বস্রষ্টা সংক্রান্ত সংশয় যদি নিছুক ব্যাকুলতার কারণে সৃষ্টি হয়ে থাকে যা অনিচ্ছা বশতই অন্তরে অনুপ্রবেশ করে থাকে, তবে তা থেকে কোনো ঈমানদার মুক্ত থাকতে পারে না। বরঞ্চ রসূল সা. একে ঈমানের সুস্পষ্ট আলামত বলে আখ্যায়িত করেছেন। চোর দস্যু সেই গৃহেই হানা দেয়, যেখানে ধনসম্পদ বিদ্যমান। কাজেই ঈমানের সম্পদে সমৃদ্ধ যে হৃদয়, তাকে এ ধরনের আক্রমনের শিকার হতেই হবে। তাই এ ধরণের চিন্তাভাবনা যদি অন্তরে শুধু আসা যাওয়া করে তবে সেটা তেমন উদ্বেগজনক ব্যাপার নয়। ব্যাপারটা উদ্বেগজনক ও শাস্তিযোগ্য হবে তখনই, যখন মুমিন এসব কুপ্ররোচনাকে গুরুত্ব দেবে এবং একে অন্তরে প্রশ্রয় দিয়ে বদ্ধমূল করে লালন করবে ও ফলবান হবার সুযোগ দেবে। অথবা সচেতনভাবে এ প্রশ্নগুলোকে সমাধানযোগ্য মনে করে এর জবাব লাভের ব্যর্থ চেষ্টায় নিয়োজিত হবে এবং তার চর্চা ও প্রচারে আত্মনিয়োগ করবে। শেষোক্ত কর্মপন্থা একজন মুসলমানের পক্ষে মোটেই সঙ্গত নয়। ইসলাম আমাদেরকে আল্লাহর সত্তা ও গুণাবলী সম্পর্কে যে ধারণা দিয়েছে, সেটা মনে বদ্ধমূল রাখলে আমরা এ কর্মপন্থা কখনো অবলম্বন করতে পারিনা। কুরআন ও হাদিসে আল্লাহর যে গুণাবলী বর্ণিত হয়েছে, তা নিয়ে গভীরভাবে চিন্তাভাবনা করলে বুঝা যায় যে, আল্লাহর গুণাবলীকে অনুরূপ মানবীয় গুণাবলীর সাথে তুলনা করা সম্ভব নয়। উভয়ের মাঝে প্রকৃতপক্ষে কোনো সাদৃশ্যও নেই। এ জন্যই কুরআনে বলা হয়েছে যে, ----------------------- 'তাঁর সমতুল্য কিছুই নেই।' মানবীয় গুণাবলী সীমাবদ্ধ এবং বহিরাগত ও বস্তুগত সহায়ের মুখাপেক্ষী। আবার নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে তা বাধাবন্ধনহীন ও বহিরাগত সহায়ের ধার ধারেনা। দৃষ্টিশক্তি আমাদেরও আছে। তবে তা একটা নির্দিষ্ট গণ্ডির মধ্যে আবদ্ধ। তাছাড়া আমাদের দৃষ্টিশক্তির এসব সীমা ও বাধার ঊর্ধে। আমরাও শ্রবণ করি। কিন্তু আমাদের শ্রবণের জন্য কান ও বাতাসের সহায়তা প্রয়োজন। অথচ আল্লাহর শ্রবণের জন্য এসব মাধ্যমের কোনো প্রয়োজন নেই। জীবন ও অস্তিত্ব আমাদেরও আছে, তবে তা বহিরাগত সহায়ক শক্তি ও বস্তুর উপর নির্ভরশীল। কিন্তু আল্লাহর জীবন ও অস্তিত্ব সম্পূর্ণ স্বনির্ভর। তিনি এমন চিরঞ্জীব ও চিরস্থায়ী সত্তা, যিনি আপন শক্তিতেই বহাল আছেন এবং সব কিছুতেই বহাল রেখেছেন। এভাবে চিন্তা গবেষণা চালালে দিবালোকের মতো পরিষ্কার হয়ে উঠবে যে, আল্লাহর অস্তিত্ব সঠিক ও প্রকৃত অর্থেই অনাদি ও অনন্ত। চিরস্থায়ী জীবন ও নিরবিচ্ছিন্ন অস্তিত্ব তাঁর অমর, অক্ষয় ও অবিনশ্বর সত্তার মৌলিক বৈশিষ্ট্য। তাঁর জন্ম ও আবির্ভাবের প্রশ্ন তোলা দুটো পরস্পর বিরোধী জিনিসের একত্র সমাবেশ ঘটানোর চেষ্টা ছাড়া আর কিছু নয়। যিনি নিজের অস্তিত্ব লাভের জন্য আরেক স্রষ্টার মুখাপেক্ষী হন, তিনি আবার কেমন স্রষ্টা?

এই দিব্য সত্যকে আল্লাহ তায়ালা এভাবে ব্যক্ত করেছেন :
--------------------------------------------------------
কুরআনের এ উক্তির অত্যন্ত চমকপ্রদ ও মনোজ্ঞ ব্যাখ্যা রসূল সা. এভাবে করেছেন :
------------------------------------------------------------------------
"তিনি প্রথম। তাঁর পূর্বে কিছু নেই, তিনি শেষ তাঁর পরে কিছু নেই। তিনিই প্রকাশ্য। তাঁর ঊর্ধ্বে কিছু নেই। তিনিই গোপন, তাঁর কাছে গোপনীয় কিছু নেই।"

সর্বশেষে, অন্তরে অনুপ্রবেশকারী কু-প্ররোচনা সম্পর্কে রসূল সা.-এর কয়েকটি হাদিস উদ্ধৃত করেছি। আল্লাহ চাহে তো এতে আপনার সকল দুশ্চিন্তা ও সংশয়য়ের অবসান ঘটবে :
--------------------------------------------------------------------------- 
"আবু হুরায়রা রা, থেকে বর্ণিত যে রসূল সা. বলেছেন : আল্লাহ আমার উম্মতের মনের যাবতীয় কুচিন্তা ও সন্দেহ সংশয়কে মাফ করে দিয়েছেন, যদি না সে তা কার্যে পরিণত করে কিংবা কারো সাথে আলোচনা করে।"
--------------------------------------------------------------------------
"ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত : এক ব্যক্তি রসূর সা.- এর কাছে উপস্থিত হয়ে বলতে লাগলো আমার মনে মাঝে মাঝে এমন সব কুচিন্তা আসে, যা মুখে প্রকাশ করার চেয়ে আমি পুড়ে কয়লা হয়ে যাওয়া অধিকতর পছন্দ করি। রসূর সা. বললেন : আল্লাহর শোকর যে, তিনি এ ব্যাপারটিকে কেবল কুচিন্তার পর্যায়েই সীমাবদ্ধ রেখেছেন।"
-------------------------------------------------------------------------
"আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত যে, রসূল সা. বলেছেন : মানুষ নানা রকমের প্রশ্নোত্তর করতে থাকবে। এমনকি এক সময় এ প্রশ্নও তোলা হবে যে, আল্লাহ তো এই গোটা জগতের সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহকে কে সৃষ্টি করেছে? যে ব্যক্তির সামনে এ জাতীয় কথাবার্তা উচ্চারিত হবে সে যেনো বলে আমি শুধু এটুকুই যথেষ্ট মনে করি যে আল্লাহ ও তাঁর রসূলদের উপর ঈমান এনেছি।"

আর একবার রসূল সা. বলেন : এ ধরণের কুচিন্তার উদ্ভবকালে আল্লাহর আশ্রয় চাইবে এবং ওখানেই থেমে থাকবে। যে ব্যক্তি এখানে থামবেনা এবং কল্পনার লাগাম টেনে ধরবেনা, তার গোমরাহীর সীমাহীন প্রান্তরে উদভ্রান্তের মতো ছুটে বেড়ানো ছাড়া আর কোনো লাভ হবেনা। [তরজমানুল কুরআন, এপ্রিল ১৯৫৪]

২. প্রশ্ন : আমি বিজ্ঞানের ছাত্র। এখন আমি জীবনের এমন একটা সময় অতিক্রম করছি, যখন মানসপটে যে ছবিই অংকিত হয়, তা হয় আনন্দ ও তৃপ্তির উৎস, নয় মানসিক যন্ত্রণার কারণ হয়ে চিরস্থায়ী হয়ে যায়। এক সময় ধর্মের প্রতি খুবই অনুরাগী ছিলাম। কিন্তু এখন আমার মনে বিশ্বাসের পরিবর্তে নানা রকমের সন্দেহ সংশয় জন্ম নিতে শুরু করেছে। আমি নামাজও পড়ি। তবে তা নিতান্তই প্রথাসিদ্ধ কাজ হিসেবে। আমার মনে যেসব ধ্যান ধারণার উদ্ভব হয়, তা আপনার কাছে তুলে ধরছি।

আল্লাহর অস্তিত্বকে বিজ্ঞানের সূত্রগুলোর আলোকে কিভাবে প্রমাণ করা যায়? এমনটি হওয়া কি সম্ভব নয় যে, আদিম যুগের মানুষ এ ধারণাটা উদ্ভাবন করে নিয়েছিল এবং তার পর এটা পুরুষানুক্রমে আমাদের পর্যন্ত হস্তান্তরিত হয়েছে? সে সময় মানুষ প্রকৃতির নিয়ম ও বিশ্বজগতের বস্তু নিচয়ের রহস্য জানতো না। কিন্তু আজ সে বিশ্বচরাচরের যাবতীয় রহস্য জেনে ফেলেছে এবং স্রষ্টার বিশ্বাসের প্রয়োজন কি, তা অনেকের বুঝে আসেনা। আল্লাহর অস্তিত্ব মেনে নিলেও কিছু কিছু তত্ত্ব বুদ্ধির অগম্য মনে হয়। রসূল সা.-এর মিরাজ শারীরিকভাবে হয়েছিল এ কথাই এ যাবত শুনে এসেছি। কিন্তু প্রাকৃতিক জগতে মাধ্যাকর্ষণ ও মহাশূন্য সংক্রান্ত অন্য যেসব নিয়ম চালু রয়েছে, তার প্রেক্ষাপটে এ ঘটনা বুঝে আসেনা। অন্যান্য মোযেজা বা অলৌকিক ঘটনার ক্ষেত্রেও একই জটিলতা দেখা দেয় যে, প্রাকৃতিক নিয়ম লংঘন না করে ঐ ঘটনাগুলো ঘটতে পারেনা। অথচ আল্লাহ তাঁর নিয়ম-কানুনে পরিবর্তন ঘটান না। চাঁদ দ্বিখণ্ডিত হলে কি পৃথিবী ধ্বংস না হয়ে পারে?

জবাব : আপনার মনে যে প্রশ্নগুলোর উদ্ভব হচ্ছে, তা কোনো তাজ্জবের ব্যাপার নয়। যে কোনো চিন্তশীল মানুষের মনে এ ধরণের প্রশ্ন জাগতে পারে। এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে চেষ্টা করা কোনো মানুষেরই উচিৎ নয়, যাতে তার লাগামহীন প্রবৃত্তির বাসনা চরিতার্থ হয় এবং যা তাকে জড় পদার্থ, গাছপালা কিংবা পশুপাখির মতো নৈতিক চেতনাহীন ও দায়িত্বজ্ঞানহীন বানিয়ে দেয়। এ ধরণের উত্তর অনুসন্ধান থেকে নিবৃত্ত থাকাতেই তার কল্যাণ ও মুক্তি নিহিত। পৃথিবীতে যারা আল্লাহর অস্তিত্ব অস্বীকার করেছে তাদের অধিকাংশেরই অস্বীকৃতির একমাত্র কারণ এই যে, আল্লাহকে মেনে নিলে তাদেরকে কতিপয় বিধিনিষেধের অধীন জীবনযাপন করতে হয়। তা না হলে আপনি ভেবে দেখুন তো, একজন বিজ্ঞানীর কাছে আল্লাহকে অস্বীকার করার পক্ষে কি যুক্তি প্রমাণ থাকতে পারে? বিজ্ঞান তো শুধু পার্থিব জগত নিয়েই আলোচনা গবেষণা করে, যা বস্তু ও শক্তি নিয়েই গঠিত অথচ এই বিজ্ঞানই স্বীকার করে যে, এই বস্তু জগৎ অনাদিকাল থেকে বিদ্যমান নয়, আপনা আপনিও গঠিত হয়নি এবং তা অনন্তকাল স্থায়ী হতেও সক্ষম নয়, তেমনি কিভাবে নির্জীব পদার্থের জীবনের আবির্ভাব ঘটে এবং কিভাবেই বা তা বিলুপ্ত হয়, সে কথাও বলতে পারে না। মহাবিশ্বের এমন কোনো সীমাপরিসীমা নেই এবং তার সীমানার এমন কোনো প্রথম প্রান্ত ও শেষ প্রান্ত নেই, যা মানুষের নাগালে আসতে পারে। এমতাবস্থায় মহাবিশ্বের এমন একজন সৃষ্টিকর্তা ও নির্মাতার অস্তিত্ব মেনে নেয়া ছাড়া গতান্তর নেই যিনি গোটা বিশ্বের চেয়েও বিরাট ও বিশাল এবং যার অবস্থান বিশ্বজগতের ঊর্ধে ও নেপথ্যে। এছাড়া রহস্যের উন্মেচন আর কোনোভাবেই সম্ভব নয়। অন্তত: এটুকু যুক্তির আওতায় এবং এই ব্যাখ্যার আলোকে আল্লাহর অস্তিত্বকে প্রত্যেক উল্লেখযোগ্য বিজ্ঞানীই স্বীকার করে থাকেন এবং কোনো বিজ্ঞানীই আল্লাহর অস্তিত্বকে অস্বীকার করার ধৃষ্টতা দেখাতে পারেন না।

১. কয়েক বছর আগে আমেরিকায় দুনিয়ার সর্বাপেক্ষা নামকরা চল্লিশজন বিজ্ঞানীর নিবন্ধন সম্বলিত একখানা বই প্রকাশিত হয়েছে। এই বিজ্ঞানীদের প্রত্যেকেই আল্লাহর অস্তিত্ব স্বীকার করেছেন এবং তার স্বপক্ষে যুক্তি প্রদর্শন করেছেন্ 'খুদা মওজুদ হায়' এই শিরোনামে লাহোরের প্রাংকলিন প্রকাশনী উর্দুতে এবং 'চল্লিশজন সেরা বিজ্ঞানীর দৃষ্টিতে আল্লাহর অস্তিত্ব' এই শিরোনামে ঢাকায় একটি প্রকাশনী বাংলায় পুস্তকটি প্রকাশ করে। এরপর যে প্রশ্ন বাকি থাকে তা হলে, আল্লাহ যদি থেকে থাকেন তবে তিনি কেমন সত্তা ও গুণাবলীর অধিকারি? তাঁর ইচ্ছে ও মর্জি কি এবং মানুষের কাছে তিনি কি চান? এসব প্রশ্নের জবাব কেউ নিজস্ব বুদ্ধি ও যুক্তির উপর নির্ভর করে দিতে পারেন না-তা তিনি বিজ্ঞানীই হোন বা অবিজ্ঞানীই হোন। এর জবাব যে অকাট্য সত্য, সে ব্যাপারে তাঁর নির্মল ও নিষ্কলুষ চরিত্রই সাক্ষী।

২. ধর্ম ও আল্লাহ সংক্রান্ত বিশ্বাস নিছক মানবীয় মস্তিষ্কের আবিষ্কার এ কথা যদিও সঠিক নয়, তবু প্রশ্ন এই যে, একটি ধারণা বিশ্বাস মানবীয় মনমস্তিষ্ক থেকে উদ্ভুত বলেই কি বাস্তবে তার অস্তিত্ব থাকতে পারেনা? মানুষের মস্তিষ্কজাত হওয়াই কি অবাস্তব প্রমাণিত হওয়ার জন্য যথেষ্ট হতে পারে? এমন কি হতে পারেনা যে, আল্লাহর অস্তিত্ব আসলেই একটা জ্বলন্ত সত্য এবং মানুষের মনে তারই প্রতিবিম্ব রেখাপাত করে? মানুষের মনমস্তিষ্ক যে আবহমানকাল ধরে আল্লাহর অস্তিত্বের ধারণা পোষণ করে আসছে, এর দ্বারা কিভাবে প্রমাণিত হয় যে আল্লাহ নেই? এটা তো বরং আল্লাহর অস্তিত্বেরই একটি প্রমাণ।

এই যু্ক্তিটাও সম্পর্ণ ভ্রান্ত যে, প্রকৃতির নিয়ম আগেকার যুগের মানুষের জানা ছিলনা বলেই তারা আল্লাহর অস্তিত্বে বিশ্বাস স্থাপন করেছিল। প্রশ্ন এই যে, প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক রীতি সংক্রান্ত যাবতীয় গুপ্ত রহস্য ও বিস্তৃত তত্ত্ব তথ্য কি মানুষ ইতিমধ্যে জেনে ফেলেছে, কিংবা কখনো তা জানতে পারবে? আপনি কি আমাকে এ প্রশ্নের জবাব দিতে পারেন যে, অসংখ্য জ্যোতিষ্কপিন্ডে ভরপুর এই মহাবিশ্বের শেষ কোথায় এবং সেই শেষ প্রান্তের ওপারে কি আছে? ধরে নিলাম, সমস্ত প্রাকৃতিক নিয়ম আপনি রপ্ত করে ফেলেছেন। তথাপি আপনি কি আমাকে বলতে পারবেন এই রহস্যঘেরা নীরব নিঝুম প্রকৃতির এসব নিয়ম রীতি কার তৈরি এবং প্রকৃতির এই সব উপাদানকে ঐ নিয়ম রীতি মেনে চলতে কে বাধ্য ও বশীভূত করে রেখেছে?

৩. মিরাজ শারীরিক না আত্মিকভাবে হয়েছিল, তা নিয়ে যদিও পূর্বতন মুসলিম মনীষীদের মধ্যে কিছু মতভেদ হয়েছে, তবে আমাদের মতে, সঠিক তথ্য এই যে, এটা একসাথে শরীরিক ও আত্মিক উভয়ভাবেই সংঘটিত হয়েছিল। মিরাজ, চন্দ্র দ্বিখণ্ডিত এবং এ ধরনের অন্যান্য অলৌকিক ঘটনাবলী সম্পর্কে যাবতীয় প্রশ্ন কেবল তখনই জন্মে যখন মানুষ তার ক্ষুদ্র মস্তিষ্ক দিয়ে প্রতিটি বিষয় পর্যবেক্ষণ ও তা নিয়ে চিন্তাভাবনা করে। সে মনে করে, এই বিশ্বপ্রকৃতি যেমন কতিপয় আইন কানুনের অধীন, তেমনি এ বিশ্বজগতের সৃষ্টিকর্তাও এসব আইন কানুনের অনুগত ভৃত্য এবং নিজের তৈরি নিয়মবিধির শৃংখলে তিনি নিজেও বাঁধা। অথচ এ ধারণাটা মূলতই ভুল ও বাতিল। আল্লাহ যখন ইচ্ছে নিজের আইন-কানুন ও নিয়ম রীতিতে রদবদল ঘটাতে পারেন এবং সেই রদবদলও তাঁর আইন অনুসারেই হবে। উদাহরণস্বরূপ, প্রচলিত নিয়ম এই যে, আল্লাহ নর ও নারীর মিলনক্রমে মানুষ সৃষ্টি করে থাকেন। কিন্তু নর ও নারীর এই মিলন মানব সৃষ্টির কোনো চিরন্তন ও অলংঘনীয় বিধান হতে পারেনা। আল্লাহ ইচ্ছে করলে এ ছাড়াও মানুষ সৃষ্টি করে সক্ষম।

অনুরূপভাবে আল্লাহ ইচ্ছে করলে মধ্যাকর্ষণের বিধানকে নিষ্ক্রীয় করে দিতে পারেন এবং স্বীয় বান্দাকে এমন জায়গায় নিয়ে যেতে পারেন, যেখানে তাঁর জ্যোতি বিচ্ছুরিত ও কেন্দ্রিভূত। আল্লাহ ইচ্ছে করলে কিছুক্ষণের জন্য চাঁদকে দু'টুকরো করে দিতে এবং পৃথিবী ও অন্যান্য জ্যোতিষ্ক পিণ্ডকে তার প্রভাব থেকে মুক্ত রাখতে পারেন। একথা নি:সন্দেহে সত্য যে, আল্লাহর বিধান অটল ও তাঁর সিদ্ধান্ত অকাট্য। তিনি এগুলোর রদবদল করেন না। কিন্তু আল্লাহর বিধান কি এবং তাঁর সিদ্ধান্তগুলোই বা কি, সেটা আমরা কেমন করে জানবো। আল্লাহ যে জিনিসকে নিজের বিধান বলে মনে করেন, তা অবশ্যই অপরিবর্তনীয়। কিন্তু যে জিনিসকে আমরা আল্লাহর বিধান বলে মনে করি, তাতে সব সময়ই পরিবর্তন ঘটা সম্ভব। যেমন এক ব্যক্তি মনে করে যে, সূর্য সব সময় পূর্ব দিক থেকে উঠবে বা উঠতে দেখা যাবে এটাই আল্লাহর বিধান। কিন্তু আল্লাহর বিধান এমনও হতে পারে যে, এক দিন তার গতিবিধি পাল্টে দেয়া হবে কিংবা তার অস্তিত্বই বিলুপ্ত করা হবে। এ কথাও মনে রাখা দরকার যে, কুরআনে 'মুন্সায়াতুল্লাহ' বা 'আল্লাহর বিধান' কথাটি দ্বারা সর্বোতভাবে প্রাকৃতিক নিয়ম রীতিকে বুঝানো হয়নি, বরং নৈতিক ও চারিত্রিক বিধানকে বুঝানো হয়েছে, যা পৃথিবীর জাতিসমূহের ও মানব সভ্যতার উত্থান পতন অথবা বিবর্তন প্রক্রিয়া সংক্রান্ত। আর এটাও এমন কোনো ধরাবাধা একক বিধান নয়, বরং অত্যন্ত ব্যাপক ও বিজ্ঞানসম্মত এক নীতিমালা, যা মানব জীবনের বিভিন্ন দিক ও বিভাগে চালু ও কার্যকর রয়েছে। [তরজামানুল কু্রআন, ডিসেম্বর ১৯৭৪]  রাসায়েল ও মাসায়েল ৬ষ্ঠ খন্ড

লিখেছেন: সাইয়্যেদ আবুল আ'লা মওদূদী           

Source: http://www.islam.net.bd
নাস্তিকের প্রশ্নের জবাব । সাঈদী । Nastiker Proshner Jobab । Sayedee । CHP

Friday, March 28, 2014

নাস্তিকদের প্রশ্নঃ আল্লাহ তাআলার স্রষ্টা কে? প্রশ্নটি যৌক্তিক না অবান্তর?

নাস্তিকদের প্রশ্নঃ আল্লাহ তাআলার স্রষ্টা কে? প্রশ্নটি যৌক্তিক না অবান্তর?


প্রশ্ন
নাস্তিকরা প্রশ্ন করে থাকে যে, আল্লাহ তাআলাকে কে সৃষ্টি করেছে? এর জবাব কি?
উত্তর
بسم الله الرحمن الرحيم
আল্লাহ তাআলা সব কিছু সৃষ্টি করেছেন। সব কিছুর স্রষ্টা যিনি তাকে আবার কে সৃষ্টি করবে? এটাতো বোকামীসূলভ প্রশ্ন। কারণ সৃষ্টি জগতে যা কিছু আছে সবই আল্লাহ তাআলাই সৃষ্টি করেছেন। তিনি সব কিছুর স্রষ্টা যখন, তখন তার আগেতো কেউ থাকতে পারে না।  তার আগে কেউ না থাকায় তাঁকে কেউ সৃষ্টি করবে কিভাবে? তাকে সৃষ্টির প্রশ্ন করাটাইতো অবান্তর।
আল্লাহ তাআলা সকল কিছু সৃষ্টি করেছেন
سَبِّحِ اسْمَ رَبِّكَ الْأَعْلَى [٨٧:١] الَّذِي خَلَقَ فَسَوَّىٰ [٨٧:٢] وَالَّذِي قَدَّرَ فَهَدَىٰ [٨٧:٣]
আপনি আপনার মহান পালনকর্তার নামের পবিত্রতা বর্ণনা করুন। যিনি সৃষ্টি করেছেন ও সুবিন্যস্ত করেছেন। এবং যিনি সুপরিমিত করেছেন ও পথ প্রদর্শন করেছেন। {সূরা আলা-১-৩}
وَتَرَى الْجِبَالَ تَحْسَبُهَا جَامِدَةً وَهِيَ تَمُرُّ مَرَّ السَّحَابِ ۚ صُنْعَ اللَّهِ الَّذِي أَتْقَنَ كُلَّ شَيْءٍ ۚ إِنَّهُ خَبِيرٌ بِمَا تَفْعَلُونَ [٢٧:٨٨]
তুমি পর্বতমালাকে দেখে অচল মনে কর, অথচ সেদিন এগুলো মেঘমালার মত চলমান হবে। এটা আল্লাহর কারিগরী, যিনি সবকিছুকে করেছেন সুসংহত। তোমরা যা কিছু করছ, তিনি তা অবগত আছেন। [সূরা নমল-৮৮}
قَالَ رَبُّنَا الَّذِي أَعْطَىٰ كُلَّ شَيْءٍ خَلْقَهُ ثُمَّ هَدَىٰ [٢٠:٥٠]
মূসা বললেনঃ আমাদের পালনকর্তা তিনি,যিনি প্রত্যেক বস্তুকে তার যোগ্য আকৃতি দান করেছেন, অতঃপর পথপ্রদর্শন করেছেন। {সূরা ত্বহা-৫০}
আল্লাহ তাআলাকে কে সৃষ্টি করেছেন? প্রশ্নটি স্ববিরোধী প্রশ্ন
আল্লাহ তাআলা স্রষ্টা। যিনি স্রষ্টা তিনি যদি সৃষ্টি হন, তাহলে মৌলিক স্রষ্টাতো আর তিনি বাকিই থাকেন না। কারণ তখন তাঁকে যিনি সৃষ্টি করেছেন তিনি হয়ে যাচ্ছেন মূল স্রষ্টা। এক্ষেত্রেতো আল্লাহ তাআলা মূল স্রষ্টা হিসেবে আর বাকি থাকবেন না। তাই আল্লাহ তাআলাকে স্রষ্টা মানার পর তাঁর স্রষ্টা কে? এ প্রশ্ন করাটাই অযৌক্তিক ও বোকামী।
এছাড়া এ প্রশ্ন করার দ্বারা ক্রমান্বয়িক অসীম প্রশ্নধারার পথ খোলা হয়। যার কোন শেষ কোনদিন হবে না। কারণ যদি বলা হয় যে, আল্লাহর স্রষ্টা ওমুক [নাউজুবিল্লাহ]।
তাহলে আবার প্রশ্ন হবে- ওমুকের স্রষ্টা কে? যদি কারো নাম উচ্চারণ করা হয়, তাহলে আবার প্রশ্ন আসবে- ওমুকের স্রষ্টা কে? এভাবে ক্রমধারায় অসীম প্রশ্নের দ্বার উন্মোচিত হবে। যার কোন সীমা-পরিসীমা আর বাকি থাকবে না। চলতেই থাকবে এ প্রশ্ন। তাই এরকম প্রশ্ন অযৌক্তিক ও বোকামীসূলভ প্রশ্ন।
এ প্রশ্নটি শয়তানের প্রশ্ন
قال أبو هريرة رضي الله عنه : قال رسول الله صلى الله عليه و سلم ( يأتي الشيطان أحدكم فيقول من خلق كذا من خلق كذا حتى يقول من خلق ربك ؟ فإذا بلغه فليستعذ بالله ولينته )
হযতর আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেনঃ তোমাদের কারো কাছে শয়তান আসতে পারে, এবং সে বলতে পারে যে, এ বস্তু কে সৃষ্টি করেছে? ঐ বস্তু কে সৃষ্টি করেছে? এরূপ প্রশ্ন করতে করতে শেষ পর্যন্ত বলে বসবে, তোমাদের প্রতিপালককে কে সৃষ্টি করেছে? যখন বিষয়টি এ পর্যায়ে পৌঁছে যাবে তখন সে যেন অবশ্যই আল্লাহর কাছে আশ্রয় চায় এবং বিরত থাকে। {সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৩১০২, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৩৬২, মুসনাদে আবী আওয়ানা, হাদীস নং-২৩৬}
عن عائشة عن رسول الله صلى الله عليه و سلم قال : إن الشيطان يأتي أحدكم فيقول : من خلق السماوات ؟ فيقول : الله فيقول : من خلق الأرض ؟ فيقول : الله فيقول : من خلق الله ؟ فإذا كان ذلك فليقل : آمنت بالله ورسله
হযরত আয়শা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেনঃ তোমাদের কারো কাছে শয়তান এসে বলতে পারে- আসমানসমূহ কে সৃষ্টি করেছে? সে বলবে, আল্লাহ। তারপর শয়তান প্রশ্ন করবে- জমীন কে সৃষ্টি করেছে? জবাবে সে বলবে-আল্লাহ তাআলা। তারপর শয়তান বলবে- আল্লাহকে কে সৃষ্টি করেছে? যখন বিষয়টি এ পর্যন্ত এসে যাবে তাহলে বলবে- আমি আল্লাহ ও রাসূলের উপর ঈমান এনেছি। {মুসনাদে আবী ইয়ালা, হাদীস নং-৪৭০৪, মুসনাদে আহমাদ বিন হাম্বল, হাদীস নং-২১৯১৬, মুসনাদে আব্দ বিন হুমাইদ,হাদীস নং-২১৫, আলমুজামুল কাবীর, হাদীস নং-৩৭১৯}
والله اعلم بالصواب
     উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
সহকারী মুফতী-জামিয়াতুল আস’আদ আল ইসলামিয়া-ঢাকা
lutforfarazi@yahoo.com

Source: jamiatulasad.com
.......................................................................................................

সূরা এখলাছ ( মক্কায় অবতীর্ণ ), আয়াত সংখাঃ ৪

بِسْمِ اللّهِ الرَّحْمـَنِ الرَّحِيمِ
শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু।

قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ

01. বলুন, তিনি আল্লাহ, এক,

اللَّهُ الصَّمَدُ

02. আল্লাহ অমুখাপেক্ষী,

لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ

03. তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং কেউ তাকে জন্ম দেয়নি

وَلَمْ يَكُن لَّهُ كُفُوًا أَحَدٌ

04. এবং তার সমতুল্য কেউ নেই।


............................................................................................................
সৃষ্টিকর্তাকে কে সৃষ্টি করেছে ?

আমাদের চারপাশে এই যে মহাবিশ্ব, সূর্য্য চন্দ্র আমি আপনি এই সব কিছু নিয়েই কিন্তু আমাদের প্রকৃতি বা Nature. মানুষ হচ্ছে এই প্রকৃতির মাঝে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ জীব। আচ্ছা মানুষ কি নিজে নিজে বাচঁতে পারে ? না মানুষকে খাদ্য গ্রহন করতে হয়, এই খাদ্য কিন্তু মানুষের শরীর থেকে উৎপন্ন হয় না। মানুষ এই খাদ্য উদ্ভিদ প্রাণীকূল থেকে সংগ্রহ করে। তাই বলা যায় মানুষ একটা পরাধীন সত্ত্বা। প্রকৃতির মাঝে এমন কোন প্রাণী নেই যেটা নিজে নিজে বাচতে পারে। প্রত্যেকটা প্রানীই বেচে থাকার জন্য একজন আরেকজনের উপর নির্ভরশীল। আবার মানুষ চাইলেই সব কিছু করতে পারে না। মানুষ কিন্তু কোন মৌলিক পদার্থ সৃষ্টি করতে পারে না। মানুষ এই মহাবিশ্বের মাঝে সবচেয়ে বুদ্ধিমান প্রাণী কিন্তু মানুষের পক্ষে সম্ভব নয় কোন মৌলিক পদার্থ সৃষ্টি করা তাই আমরা ধরে নিতে পারি যে প্রকৃতির মাঝে আর কারো পক্ষেই সম্ভব নয় কোন মৌলিক পদার্থ একদম নতুন ভাবে সৃষ্টি করা। আবার মানুষ আকার আয়তনে সীমিত। সে চাইলেও তার থেকে খুব ভারী কোন জিনিস উত্তোলন করতে পারে না। আবার মানুষ চাইলেও মৃত্যুকে ঠেকাতে পারবে না, তাই আমরা বলতে পারি মানুষ হল একটা সীমাবদ্ধ ও পরাধীন সত্ত্বা। শুধু মানুষ নয় আমাদের প্রকৃতির মাঝে আপনি এমন কোন সত্ত্বা খুজে পাবেন না যেটা Unlimited, infinite ও independent. Nature বা প্রকৃতির প্রত্যেকটা সত্ত্বাই Limited, Finite এবং একজন আরেকজনের প্রতি Dependent. এবং এই Nature বা প্রকৃতির কোন সত্ত্বাই মৌলিক কোন পদার্থ তৈরী করতে পারে না। সূর্য্য, চন্দ্র, গ্রহ নক্ষত্র এগুলিও কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম কানুন মেনে চলে। এই মহাজাগতিক উপাদান গুলিও অসীম নয়। আকার আয়তনে সসীম। বলা হয় যে এই মহাবিশ্ব প্রতিনিয়ত প্রসারিত হচ্ছে। কিন্তু মহাবিশ্বের এই প্রসারনটাও কিন্তু একটি সীমার মধ্য থেকেই হচ্ছে। মহাবিশ্ব যদি অসীমই হত তাইলে তো আর সে প্রসারিত হত না। তাছাড়া এই মহাবিশ্ব আবার সংকুচিত হয়ে তার পূর্বের সত্ত্বায় ফিরে আসবে। তাই এই মহাবিশ্বকে আমরা অনন্ত অসীম বলতে পারি না।
এখন প্রকৃতি বলতে আমরা কি বুঝি ? প্রকৃতি কিন্তু এই মহাবিশ্ব এই সকল প্রাণি জগত এই গুলির সমষ্টি। অনেক গুলি সীমাবদ্ধ বস্তুর সমষ্টি কিন্তু সীমাবদ্ধই হবে। ১, ২, ৩, এরকম আপনি যত সংখ্যাই যোগ করুন না কেন এগুলির সমষ্টি কিন্তু একটি নির্দিষ্ট সংখ্যাই হবে। কখনই অসীম কোন সংখ্যা হবে না। যেহেতু প্রকৃতি বা Nature সব Dependent, finite এবং limited সত্ত্বার সমষ্টি তাই প্রকৃতিও একটা Dependent, finite এবং Limited সত্ত্বা। এখন প্রকৃতি যেহেতু নিজেই একটি সীমাবদ্ধ স্বত্বা এবং প্রকৃতির কোন সত্ত্বারই এই ক্ষমতা নেই যে নিজে থেকে কোন মৌলিক পদার্থ সৃষ্টি করা তাই সম্মিলিত প্রকৃতিরও এই ক্ষমতা নেই যে এই মহাবিশ্বকে নিজে থেকে সৃষ্টি করা। তাই প্রকৃতি যদি নিজে নিজেকে সৃষ্টি না করতে পারে তাইলে এই প্রকৃতি এই মহাবিশ্ব কে কে সৃষ্টি করেছেন ? আমরা যদি এখন Rational Method বা স্বাভাবিক বিচার বুদ্ধি প্রয়োগ করি তাইলে দেখব প্রকৃতিও যেহেতু নিজে নিজেকে সৃষ্টি করতে পারে না তাইলে এই প্রকৃতির অবশ্যই একজন সৃষ্টিকর্তা আছে। সেই সৃষ্টিকর্তা কে অবশ্যই একটি স্বাধীন এবং অনন্ত অসীম সত্ত্বা হতে হবে। এবং এই সৃষ্টিকর্তা অবশ্যই কারো প্রতি নির্ভরশীল হবেন না। এই সৃষ্টিকর্তার নামই হল আল্লাহ সুবহানাতায়ালা।
এখন প্রশ্ন হল এই আল্লাহ সুবহানাতায়ালা কে কে সৃষ্টি করেছেন ? এর ৩ টা উত্তর আছে। হয় আল্লাহ সুবহানাতায়ালাকে কেউ তৈরী করেছেন বা আল্লাহ সুবহানাতায়ালা নিজে নিজেকে তৈরী করেছেন অথবা আল্লাহ সুবহানাতায়ালা হচ্ছেন একটি অনন্ত অসীম আজালী সত্ত্বা যাকে কেউ সৃষ্টি করেনি। আল্লাহ সুবহানাতায়ালা কে যদি কেউ সৃষ্টি করেন তাইলে তো আর তিনি আল্লাহই হলেন না। এখন ২য় শর্তে যদি যাই তাইলে দেখব যে আল্লাহ সুবহানাতায়ালা নিজে নিজেকে তৈরি করেছেন। এটাও গ্রহনযোগ্য নয় কারন এটা করতে হলে আগে আল্লাহ সুবহানাতায়ালাকে নিজের অস্তিত্ত্বে আসতে হবে এরপর নিজে নিজেকে তৈরী করতে হবে। আল্লাহ সুবহানাতায়ালা যদি আগেই অস্তিত্ত্বে এসেই পড়েন তাইলে আর নিজেকে সৃষ্টি করার কি দরকার ? তাইলে ৩য় শর্ত টাই ঠিক। আল্লাহ সুবহানাতায়ালা হচ্ছেন একটি আজালী বা অনন্ত অসীম সত্ত্বা যাকে কেউ সৃষ্টি করেনি। আল-কোরআনের সূরা ইখলাসে আল্লাহ সুবহানাতায়ালা নিজের সম্পর্কে যা বলেছেন এটাই আমাদের মানতে হবে যে উনাকে কেঊ সৃষ্টি করেনি আর উনিও কাউকে জন্ম দেন নি উনি হলেন একটি আজালী বা অনন্ত অসীম সত্ত্বা। যখন কেউ ছিল না তখনও আল্লাহ সুবহানাতায়ালা ছিলেন আর যখন কেউ থাকবে না তখনো আল্লাহ সুবহানাতায়ালা থাকবেন। আর মানুষ হচ্ছে একটি সসীম সত্ত্বা। একটি সসীম সত্ত্বা কখনই একটি অনন্ত অসীম আজালী সত্ত্বাকে বুঝতে পারবে না। একটা পাখি যেমন কোনদিন মানুষের মস্তিস্ক কে বুঝতে পারবে না, বিড়াল যেমন কখনো ল্যাপটপ কিভাবে চলে তা জানতে পারবে না ঠিক তেমনি আমরা মানুষেরাও কখনোই দুনিয়ার জীবনে পুরাপুরি ভাবে আল্লাহ সুবহানাতায়ালাকে বুঝতে পারবো না। আল-কোরআনে এবং সহীহ হাদীসে আল্লাহ সুবহানাতায়ালা নিজের সম্পর্কে যতটুকু বলেছেন ততটুকুর উপরই আমাদের কে সন্তুষ্ট থাকতে হবে। কারন মানুষ হচ্ছে একটা সসীম সত্ত্বা আর আল্লাহ সুবহানাতায়ালা হচ্ছেন একটা অনন্ত অসীম আজালী সত্ত্বা। আল্লাহর সত্ত্বা সম্পর্কে এর বেশী চিন্তা করলে আমাদের কে পাগল হয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতে হবে।
[ তথ্যসূত্রঃ আমি এই নোটটি লেখার ক্ষেত্রে মুসলিম বিশ্বের প্রবাদ পুরুষ ফিলিস্তিনের শায়খ তাকিউদ্দিন আন নাবাহানীর লেখা নিজামুল ইসলাম/The System of islam/ইসলামী জীবন ব্যবস্থা এই বইয়ের সাহায্য নিয়েছি। ]    
Source: http://www.farabiblog.com


.................................................................................

সবকিছুই যদি আল্লাহ্‌ তৈরী করে থাকেন তো আল্লাহ্‌কে কে তৈরী করলো? বিভিন্ন সময় নাস্তিকদের বলতে শুনেছি যে আল্লাহর অস্তিত্বে বিশ্বাস করা অন্ধবিশ্বাস মাত্র।  ঈশ্বর বিশ্বাস কি আসলেই একটা আবেগীয় ব্যাপার,  নাকি ঈশ্বরের অস্তিত্বের যৌক্তিক প্রমান আছে?

উত্তর: নাস্তিকেরা বলে থাকে সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাস একটি অন্ধবিশ্বাস। তারা বলে, যেহেতু আল্লাহকে দেখা যায়না, ধরা যায় না, শুনা যায় না, লজিক দিয়ে প্রমাণ করে যায় না – কাজেই আল্লাহ্‌ বলে কিছু নেই। কিন্তু, বাস্তব হলো সৃষ্টিকর্তার প্রতি বিশ্বাস এবং সৃষ্টিকর্তার ইবাদত করা মানুষের জন্মগত স্বভাব। আর যদিও নাস্তিকেরা নিজেদেরকে যুক্তিবাদী বলে দাবী করে, কিন্তু সত্য হলো সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব  যুক্তি বা লজিক দিয়ে প্রাচীণ কাল থেকেই প্রমাণিত হয়ে এসেছে।
বর্তমানে আমরা যে লজিক বা যুক্তিবিদ্যা পড়ি, তার আবিষ্কারক হলো প্রাচীণ গ্রীকের পন্ডিতগণ। গ্রীকের ইতিহাসের সবচেয়ে বিখ্যাত লজিশিয়ান বা যুক্তিবিজ্ঞানী ছিলেন প্লেটো এবং তার ছাত্র এরিস্টোটল, যারা লজিককে formal discipline হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করে গেছেন। আপনি জানেন কি এরা দুজনেই সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব (তাদের ভাষায় ‘unmoved mover’) বিশ্বাস করতেন? এরা দু’জনেই যুক্তি দিয়েই সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব প্রমাণ করে গেছেন। এর মাধ্যমে এটুকু বোঝা গেল, যুক্তিবাদী(?) নাস্তিকেরা যুক্তিবিদ্যার পিতা / পিতাতুল্যদেরকে নিজেরাই বিশ্বাস করে না।
এবার আসুন দেখি প্লেটোর যুক্তি কি ছিল। প্লেটো যে যুক্তিটি ব্যবহার করেছিলেন সেটা হলো, Design Indicates Designer, অর্থাৎ – প্রতিটি নকশারই নকশাকারী আছে। মহাগ্রন্থ কোরআনে আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা এই একই যুক্তি দিয়ে বার বার অবিশ্বাসীদের নিকট স্রষ্টার অস্তিত্ব প্রমাণ করেছেন (যেমনঃ সূরা আন’আম ৬:৯৯, সূরা রুম ৩০:২০-২৭)। উদাহরন দিয়ে বুঝানো যাক। আপনি যদি সমুদ্র পারে একটা বালির ঘর দেখেন, আপনি কি চিন্তা করবেন – বাহ কি সুন্দর একটা ঢেউ এসেছিল যেটা একটা বালির ঘর তৈরি করে চলে গেছে? নাকি এটি চিন্তা করবেন, নিশ্চয়ই এখানে কোন মানুষ এসে এটা বানিয়েছিল? কাকে আপনার যুক্তিবাদী মনে হয়? এটা সম্পূর্ণই অযৌক্তিক হবে যদি কেউ বলে, যে ঐ বালির ঘর ভাগ্যক্রমে বা হাজার হাজার ঢেঊ এর মিশ্রনে হয়েছে। বরং সাধারণ বিচার-বুদ্ধি সম্পন্ন যেকোন মানুষই বলবে যে ঐ বালির ঘরটি নিশ্চয়ই কেউ না কেউ তৈরী করেছে। কারন, প্রতিটা সৃষ্টির পেছনেই স্রষ্টা থাকে। ঠিক একইভাবে, এই মহাবিশ্ব এবং এর ভিতরের সবকিছুর অবশ্যই একজন স্রষ্টা আছে।
একটা কলম নিজে নিজে তৈরি হতে পারে না, ফেইসবুক নিজে নিজে তৈরী হতে পারে না, আইফেল টাওয়ার থেকে মোনালিসা কোন কিছুই নিজে নিজে তৈরী হতে পারে না, তাহলে এত নিয়মতান্ত্রিক, নিঁখুত মহাবিশ্ব ও মানবজাতি কিভাবে নিজে নিজে তৈরী হতে পারে? একটা অণুর ভিতর তাকান, আপনি ডিজাইন দেখতে পাবেন, মহাকাশের দিকে তাকান আপনি ডিজাইন দেখতে পাবেন। সূর্য যদি পৃথিবীর আরো কাছে থাকতো তাহলে পৃথিবী অনেক বেশী গরম হয়ে যেতো, পৃথিবী থেকে সূর্য আরো দূরে থাকলে পৃথিবী ঠান্ডা হয়ে বসবাসের অনুপযুক্ত হয়ে যেতো, সূর্য পৃথিবী থেকে ঠিক ততটুকুই দূরে আছে যতটুকু দূরে থাকলে পৃথিবীটা প্রাণের টিকে থাকার উপযুক্ত হবে, সৃষ্টিজগতের এই নিঁখুত স্থাপত্য এটা প্রমান করে যে এই সৃষ্টি জগত র‍্যান্ডমলি সৃষ্টি হতে পারে না, এর পেছনে অবশ্যই একজন প্রবল পরাক্রমশালী, অসীম ক্ষমতাধর, প্রজ্ঞাময় স্রষ্টা আছেন। আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা কোরআন মাজিদে প্রশ্ন করেন:
তারা কি স্রষ্টাহীন সৃষ্টি? না তারা নিজেরা নিজেদের সৃষ্টি করেছে? না তারা আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছে? বরং তারা নিশ্চিত বিশ্বাস রাখে না । – সূরা তুর (৫২:৩৫-৩৬)
প্রত্যেকটি মানুষই এক আল্লাহ্‌র অস্তিত্বের স্বাভাবিক অনুভূতি নিয়ে জন্মায়, জন্ম থেকেই মানুষ জানে যে আল্লাহ্‌ এক এবং আল্লাহ্‌ চান আমি তার ইবাদত করি -  ইসলামের ভাষায় এই অনুভূতিকে ‘ফিতরাহ’ বলে।
কি, ‘ফিতরাহ’ এর ব্যাপারটা বিশ্বাস হচ্ছে না? বৈজ্ঞানিক প্রমান লাগবে? তাহলে শুনুন। University of Oxford এর Centre for Anthropology and Mind বিভাগের সিনিয়র রিসার্চার Dr. Justin Berrett দীর্ঘ ১০ বছর শিশুদের উপর বৈজ্ঞানিক গবেষনা করে বলেছেন:
“Young people have a predisposition to believe in a supreme being because they assume that everything in the world was created with a purpose.”
 “If we threw a handful (of babies) on an island and they raised themselves I think they would believe in God.”

প্রশ্ন ২। আচ্ছা বুঝলাম এই সৃষ্টিজগত একজন স্রষ্টা তৈরী করেছেন, কিন্তু তাহলে সেই স্রষ্টার স্রষ্টা কে?
উত্তর:  স্রষ্টা কে কেউ সৃষ্টি করতে পারে কিনা – আসুন ব্যাপারটা একটু তলিয়ে দেখি।
কখনো ডমিনোর খেলা দেখেছেন? ডমিনোগুলোকে একটার পর একটা সাজিয়ে বাইরে থেকে ধাক্কা দেয়া হয় আর তার effect শুরু হয়, একটার পর একটা ডমিনো পড়তে থাকে। সৃষ্টির ব্যাপারটাও একইরকম। একটা সৃষ্টি আরেকটা সৃষ্টির কারণ ঘটায়। এখন, আমি যদি আপনাকে বলি, কোন বাতাস ছিল না, কেউ ধাক্কা দেই নাই, অনেকগুলো ডমিনো সাজানো ছিল এবং কোন বাহ্যিক বল ছাড়া এমনি এমনি ডমিনো একটার উপর আরেকটা পড়তে শুরু করল, আপনি কি বিশ্বাস করবেন? করবেন না (নিউটনের ১ম সূত্র) । এবং যে এই বাহ্যিক বল প্রয়োগ করবে সে অবশ্যই ডমিনো হতে পারে না। কারণ সে ডমিনো হলে, অর্থাৎ সে process of creation এর অন্তর্ভুক্ত হলে তাকে push করার জন্য, অন্য কথায় তাকে সৃষ্টি করার জন্য অন্য কাউকে লাগবে। অর্থাৎ, এই বাহ্যিক বল প্রয়োগকারী স্রষ্টাকে সৃষ্টি থেকে ভিন্ন প্রকৃতির হতে হবে। সৃষ্টি যদি সসীম হয়, স্রষ্টা হবেন অসীম; সৃষ্টি যদি অন্য সৃষ্টির প্রয়োজন অনুভব করে, স্রষ্টা হবেন চাহিদার উর্দ্ধে; সৃষ্টি যদি ভুল প্রবণ হয়, স্রষ্টা হবেন ভুলের উর্দ্ধে; সৃষ্টি যদি ক্ষণস্থায়ী হয়, স্রষ্টা হবেন চিরস্থায়ী। আর এই স্রষ্টা যেহেতু অসীম ক্ষমতাশীল, অনাদি, অনন্ত, কাজেই এই রকম স্রষ্টা মাত্র একজনই থাকবেন। কারণ, একাধিক অসীম ক্ষমতাশীল, অনাদি, অনন্ত স্রষ্টার সহাবস্থান অসম্ভব।
বলুন – তিনিই আল্লাহ্‌, এক ও অদ্বিতীয়। সবাই তার মুখাপেক্ষী, তিনি কারো মুখাপেক্ষী নন। তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং তাঁকেও জন্ম দেয়া হয়নি। এবং কেউই তার সমকক্ষ নয়। – সূরা ইখলাস (১১২:১-৪)
সুতরাং, মহাবিশ্বের অস্তিত্বই প্রমাণ করে যে স্রষ্টাকে কেউ সৃষ্টি করে নাই। কারণ, মহাবিশ্বকে যে স্রষ্টা সৃষ্টি করেছেন সেই স্রষ্টাকে সৃষ্টি করতে যদি স্রষ্টা লাগে, তাকে সৃষ্টি করতে যদি স্রষ্টা লাগে, তাকে সৃষ্টি করতে যদি স্রষ্টা লাগে – এই প্রক্রিয়া চলতেই থাকবে এবং  কোনদিনই মহাবিশ্ব সৃষ্টি হত না। এই ধাঁধার একমাত্র সমাধান হলঃ স্রষ্টাকে কেউ সৃষ্টি করেন নাই, এবং তিনি সবসময়ই ছিলেন। এই কথাই বলে মহাগ্রন্থ কোরআন:

আল্লাহ্‌ – তিনি ছাড়া আর কোন উপাস্য নাই। তিনি চিরঞ্জীব, অনাদি। তাঁকে তন্দ্রা বা নিদ্রা স্পর্শ করে না। আকাশ ও পৃথিবীতে যা-কিছু আছে সবই তাঁর। কে আছে যে তাঁর অনুমতি ছাড়া তাঁর কাছে সুপারিশ করবে? তাদের (মানুষের) সামনে ও পেছনে যা-কিছু আছে তিনি তা জানেন। তিনি যা ইচ্ছা করেন তা ছাড়া তাঁর জ্ঞানের কিছুই তারা আয়ত্ত করতে পারে না। আকাশ ও পৃথিবীব্যাপী তাঁর আসন, আর তাদের রক্ষণাবেক্ষণে তিনি ক্লান্ত হন না। তিনি অত্যুচ্চ মহামহিম। – সূরা বাক্বারাহ্‌ (২:২৫৫ – আয়াতুল কুরসী)
প্রশ্ন ৩। আমার কাছে মহাবিশ্ব নিজেই স্রষ্টা। এতে কোনও সমস্যা আছে?
উত্তর: আপনি নিশ্চয়ই বিগ ব্যাং থিউরী তে বিশ্বাস করেন। বিগ ব্যাং থিউরী মতে এই মহাবিশ্বের একটা শুরু আছে। পৃথিবীর অন্যতম বড় পদার্থবিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং নিজেও তার ওয়েবসাইটে এই সম্পর্কে লিখেছেন:
The conclusion of this lecture is that the universe has not existed forever. Rather, the universe, and time itself, had a beginning in the Big Bang, about 15 billion years ago.  The Beginning of Time, Stephen Hawking
যার শুরু থাকে তার সৃষ্টি হওয়ারও একটা কাল থাকে, আর যে সৃষ্টি হয় – তার অবশ্যই একজন স্রষ্টা থাকে। কাজেই মহাবিশ্ব নিজে কখনই স্রষ্টা হতে পারে না। মহাবিশ্বকে সৃষ্টি করার জন্য একজন অনন্ত-অসীম, পরম ক্ষমতাশীল স্রষ্টা লাগবে – আর সেই পরম ক্ষমতাশীল স্রষ্টাই হলেন আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা।
অবিশ্বাসীরা কি ভেবে দেখে না যে, আকাশ ও পৃথিবী ওতপ্রোতভাবে মিশে ছিল? তারপর আমি উভয়কে পৃথক করে দিলাম এবং প্রাণবান সবকিছু পানি থেকে সৃষ্টি করলাম। তবুও কি ওরা বিশ্বাস করবে না? – সূরা আম্বিয়া (২১:৩০)
References:
1. Does God exist? – Abdur Raheem Green
2. Who is your Lord? – Dr. Bilal Philips
3. Fundamentals of Faith – Dr. Yasir Qadhi

Source: http://adnanfaisal.wordpress.com
      

Wednesday, March 26, 2014

জান্নাতে আল্লাহর দিদার লাভ

জান্নাতে আল্লাহর দিদার লাভঃ

জান্নাতের সর্বোৎকৃষ্ট, সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বোত্তম নেয়ামত হবে দিদারে ইলাহী বা সরাসরি আল্লাহর দিদার লাভ। ( মুসলিম শরীফ )।

আল্লাহর দিদার বা দর্শন লাভকারীদের অবস্থান হবে চার ধরণের। এক প্রকার লোক যারা সারা বছরে একবার আল্লাহর দিদার লাভের সৌভাগ্য অর্জন করবে। দ্বিতীয় প্রকার সপ্তাহে প্রতি শুক্রবার। তৃতীয় প্রকার দৈনন্দিন দুইবার আল্লাহর দিদার লাভের সৌভাগ্য অর্জন করবে। ( মুসলিম শরীফ )।
হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে, যারা ফজর এবং আসরের নামায খুশু-খুজু বা অত্যন্ত মনযোগ সহকারে একনিষ্ঠভাবে আদায় করবে, তাদের জন্য দৈনন্দিন দুইবার আল্লাহর দিদার লাভ খুবই সহজতর হবে। আর চতুর্থ প্রকার হবে চূড়ান্ত বিশ্বস্ত, আস্থাভাজন, বিশেষ বিশেষ লোক, যারা চাকর-বাকরের ন্যায় সদা-সর্বদা, সর্বক্ষণ দিদারে ইলাহীর চরম সৌভাগ্য অর্জন করতে থাকবে। ( মুসলিম, তিরমিজী, ইবনে মাজাহ )।

আল্লাহ্‌ তা'আলা আমাদের সকলকে জান্নাতে প্রতিমুহূর্তে দিদারে ইলাহীর সৌভাগ্য অর্জনের তৌফিক দান করুন। আ-মী-ন।

জান্নাতে মুমিনদের আল্লাহর
দিদার লাভঃ
যদি আপনি মহা পরাক্রমশালী প্রশংসিত
প্রভুর সাক্ষাৎ এবং কোন প্রকার
উপমা ও সাদৃশ্য হতে পবিত্র তাঁর
চেহারা দর্শন সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন তবে জেনে নিন
যে আপনি কিয়ামতের দিন
আল্লাহকে সেরকমই দেখতে পাবেন,
যেমন পরিস্কার আকাশে দিনের
বেলায় সূর্য এবং রাতের বেলায়
পূর্ণিমার চন্দ্রকে দেখতে পান। এ সম্পর্কে রাসূল (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
হতে মুতাওয়াতির (ধারাবাহিক)
সূত্রে হাদীছ বর্ণিত হয়েছে।
যারীর, সুহাইব, আনাস, আবু হুরায়রা,
আবু মুসা, আবু সাঈদ ও অন্যান্য সাহাবী (রাঃ) হতে সহীহ
এবং সুনানের কিতাবগুলোতে এসমস্ত
হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। অতএব
আপনি শ্রবণ করুন, যে দিন
ঘোষণাকারী এই
বলে ঘোষণা করবে যে, হে জান্নাতবাসীগণ! আপনাদের প্রভু
আপনাদের সাথে সাক্ষাৎ করবেন।
আপনারা তাড়াতাড়ি বের হয়ে আসুন!
জান্নাতবাসীগণ দ্রুত বের
হয়ে এসে দ্রুতগামী বাহনগুলো প্রস্তুত
অবস্থায় দেখতে পাবেন। বাহনের উপর তারা উঠে বসবেন। যখন
তারা প্রশস্ত উপত্যকায় সমবেত
হবেন তখন আল্লাহ
তাআলা সেখানে কুরসী স্থাপন
করতে বলবেন। তারপর
জান্নাতবাসীদের জন্যে মণি-মুক্তা, নূর, যাবারযাদ, এবং স্থাপন করা হবে।
তারা যখন স্থির হয়ে বসবেন তখন
ঘোষণা দেয়া হবেঃ হে জান্নাতীগণ!
সালামুন আলাইকুম (আপনাদের উপর
শান্তি বর্ষিত হোক)। অতি সুন্দর ভাষায় তারা সালামের উত্তর
দিবেনঃ
َﺖْﻛَﺭﺎَﺒَﺗ ُﻡﺎَﻠَّﺴﻟﺍ َﻚْﻨِﻣَﻭ ُﻡﺎَﻠَّﺴﻟﺍ َﺖْﻧَﺃ َّﻢُﻬَّﻠﻟﺍ
ٍﺮْﻴَﻤُﻧ ِﻦْﺑﺍ ِﺔَﻳﺍَﻭِﺭ ﻲِﻓَﻭ ِﻡﺍَﺮْﻛِﺈْﻟﺍَﻭ ِﻝﺎَﻠَﺠْﻟﺍ ﺍَﺫ
ِﻡﺍَﺮْﻛِﺈْﻟﺍَﻭ ِﻝﺎَﻠَﺠْﻟﺍ ﺍَﺫ ﺎَﻳ
অর্থঃ হে আল্লাহ! আপনি শান্তিময়। আপনার পক্ষ হতেই শান্তির
ধারা বর্ষিত হয়ে থাকে।
হে মহা সম্মানের অধিকারী!
আপনি অতি বরকতময়। তাদের উত্তর
শুনে আল্লাহ তাআলা সর্বপ্রথম
বলবেনঃ আমার সেই বান্দাগণ কোথায়? যারা আমাকে না দেখেই
আমার আনুগত্য করেছিল। আজ তাদের
অতিরিক্ত পুরস্কারের দিন। তখন
সকল জান্নাতবাসী এক
বাক্যে বলবেনঃ হে আল্লাহ
আমরা আপনার উপর সন্তুষ্ট। সুতরাং আপনিও আমাদের উপর সন্তুষ্ট
হয়ে যান। তখন আল্লাহ
বলবেনঃ হে জান্নাতীগণ!
আমি যদি তোমাদের উপর সন্তুষ্ট
না থাকতাম
তাহলে তোমাদেরকে আমার এই জান্নাতে প্রবেশ করাতামনা। আজ
তোমাদের জন্যে অতিরিক্ত
পুরস্কারের দিন। তোমাদের মন
যা চায়, তাই চাইতে পার। তখন
সকলেই এক বাক্যে বলবেনঃ আমাদের
জন্যে আপনার চেহারা মুবারাক উম্মুক্ত করুন। আমরা আপনার
দিকে তাকিয়ে আপনার দর্শন লাভের
নেয়া’মত ভোগ করব। তারপর আল্লাহ
তাআলা চেহারার পর্দা উম্মুক্ত
করে তাদের সামনে বের হবেন।
আল্লাহর নূর তাদেরকে আচ্ছাদিত করে ফেলবে। আল্লাহ যদি এ
ফয়সালা না করতেন
যে তারা আল্লাহর নূরে প্রজ্বলিত
হবেনা তাহলে তাঁরা অবশ্যই
জ্বলে যেতেন। ঐ
মজলিসে যারা উপস্থিত হবেন তাদের সবার সাথেই আল্লাহ রাব্বুল
আলামীন কথা বলবেন।
এমনকি আল্লাহ বলবেনঃ হে আমার
বান্দা! তোমার কি মনে আছে?
তুমি অমুক দিন এই কাজ করেছিলে।
সে বলবে, হে দয়াময় আল্লাহ! আপনি কি আমাকে ক্ষমা করে দেননি?
আল্লাহ বলবেনঃ আমার ক্ষমার
বিনিময়েই তুমি এই মর্যাদায়
পৌঁছতে সক্ষম হয়েছো। কতইনা সুন্দর
হবে আল্লাহর এসমস্ত কথা শ্রবণ!!
সম্মানিত প্রভুর চেহারার দিকে তাকিয়ে চক্ষু
শীতলকারী সৎকর্মশীলদের
কতইনা সৌভাগ্য!! ক্ষতিগ্রস্ত
ব্যবসা নিয়ে প্রত্যাবর্তনকারীদের
কতইনা দুর্ভাগ্য!! আল্লাহ বলেনঃ
ٌﺓَﺮِﻇﺎَﻧ ﺎَﻬِّﺑَﺭ ﻰَﻟِﺇ ٌﺓَﺮِﺿﺎَﻧ ٍﺬِﺌَﻣْﻮَﻳ ٌﻩﻮُﺟُﻭ َﻞَﻌْﻔُﻳ ْﻥَﺃ ُّﻦُﻈَﺗ ٌﺓَﺮِﺳﺎَﺑ ٍﺬِﺌَﻣْﻮَﻳ ٌﻩﻮُﺟُﻭَﻭ
ٌﺓَﺮِﻗﺎَﻓ ﺎَﻬِﺑ
অর্থঃ “সেদিন অনেক মুখমন্ডল
উজ্জ্বল হবে। তারা তাদের
প্রতিপালকের
দিকে তাকিয়ে থাকবে। আর অনেক মুখমন্ডল সেদিন উদাস হয়ে পড়বে।
তারা ধারণা করবে যে, তাদের
সাথে কোমর ভাঙ্গা আচরণ করা হবে।
(সূরা আল-কিয়ামাহঃ ২২-২৫)

Tuesday, March 25, 2014

সুরা আল-কিয়ামাহতে বর্ণিত আখেরাতে আল্লাহর দর্শন লাভের বিস্তারিত ব্যাখ্যা

সুরা আল-কিয়ামাহতে বর্ণিত আখেরাতে আল্লাহর দর্শন লাভের বিস্তারিত ব্যাখ্যা


আল্লাহ বলেনঃ
ٌঅর্থঃ “সেদিন অনেক মুখমন্ডল উজ্জ্বল হবে। নিজের রবের প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখবে৷১৭   আর অনেক মুখমন্ডল সেদিন উদাস হয়ে পড়বে। তারা ধারণা করবে যে, তাদের সাথে কোমর ভাঙ্গা আচরণ করা হবে। (সূরা আল-কিয়ামাহঃ ২২-২৫)



তাফহীমুল কুরআনে প্রণীত উক্ত আয়াতসমূহের বিস্তারিত ব্যাখ্যা নীচে দেয়া হল: 

১৭ . ''নিজের রবের প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখবে৷" - মুফাস্সিরগণের কেউ কেউ একথাটিকে রূপক অর্থে গ্রহণ করেছেন। তারা বলেনঃ "কারো প্রতি তাকিয়ে থাকা"কথাটি প্রচলিত প্রবাদ হিসেবে তার কাছে কোন কিছু আশা কার, তার সিদ্ধান্তের অপেক্ষা করা এবং তার দয়া প্রার্থী হওয়া অর্থে ব্যবহৃত হয়। এমন কি অন্ধ ব্যক্তিও অনেক সময় বলে যে, আমি তো অমুকের দিকে তাকিয়ে আছি, তিনি আমার জন্য কি করেন তা দেখার জন্য। কিন্তু বহু সংখ্যক হাদীসে এর যে ব্যাখ্যা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত হয়েছে তাহলো, আখেরাতে আল্লাহর নেককার বান্দাদের আল্লাহর সাক্ষাত লাভের সৌভাগ্য হবে। বুখারী,শরীফের বর্ণনায় আছেঃ ---------------"তোমরা প্রকাশ্যে সুষ্পস্টভাবে তোমাদের রবকে দেখতে পাবে।" মুসলিম এবং তিরমিযীতে হযরত সুহাইব থেকে বর্ণিত হয়েছে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ বেহেশতবাসীরা বেহেশতে প্রবেশ করার পর আল্লাহ তা"আলা তাদের জিজ্ঞেস করবেন, তোমরা কি চাও, যে, আমি তোমাদের আরো কিছু দান করি৷ তারা আরয করবে, আপনি কি আমাদের চেহারা দীপ্তিময় করেননি৷ আপনি কি আমাদের জান্নাতে প্রবেশ করেননি এবং জাহান্নাম থেকে রক্ষা করেননি৷তখন আল্লাহ তা"আলা পর্দা সরিয়ে দেবেন। ইতিপূর্বে তারা যেসব পুরস্কার লাভ করেছে তার কোনটিই তাদের কাছে তাদের "রবের "সাক্ষাতলাভের সম্মান ও সৌভাগ্য থেকে অধিক প্রিয় হবে না। এটিই সে অতিরিক্ত পুরষ্কার যার কথা কুরআনে এভাবে বলা হয়েছেঃ--------------------- অর্থাৎ "যারা নেক কাজ করেছে তাদের জন্য উত্তম পুরস্কার রয়েছে। আর এ ছাড়া অতিরিক্ত পুরস্কারও রয়েছে।"(ইউনুস, ২৬) বুখারী ও মুসলিমে হযরত আবু সাঈদ খুদরী এবং হযরত আবু হুরাইরা থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, তারা জিজ্ঞেস করলেনঃ হে আল্লাহর রসূল, আমরা কি কিয়ামতের দিন আমাদের রবকে দেখতে পাবো৷ জবাবে নবী (সা) বললেনঃ যখন মেঘের আড়াল থাকে না তখন সুর্য ও চাঁদকে দেখতে তোমাদের কি কোন কষ্ট হয়৷ সবাই বললো "না।" তিনি বললেনঃ তোমরা তোমাদের রবকে এ রকমই স্পষ্ট দেখতে পাবে। বুখারী ও মুসলিমে হযরত জারীর ইবনে আবদুল্লাহ থেকে এ বিষয়ের প্রায় অনুরূপ একটি হাদীস বর্ণিত হয়েছে। মুসনাদে আহমাদ,তিরমিযী, দারকুতনী, ইবনে জারীর, ইবনুল মুনযির, তাবারানী, বায়হাকী, ইবনে আবী শায়বা, এবং আরো কিছু সংখ্যক মুহাদ্দিস কিছুটা শাব্দিক তারতম্যসহ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমরের একটি বর্ণনা উদ্ধৃত করেছেন, যার বিষয়বস্তু হলো, জান্নাতবাসীদের মধ্যে সর্বনিম্ন মর্যাদার অধিকারী ব্যক্তিও দুই হাজার বছরের দুরত্ব পর্যন্ত তার সাম্রাজ্যের বিস্তার দেখতে পাবে। এবং সর্বাধিক মর্যাদার অধিকারী ব্যক্তি প্রতিদিন দুই বার তার রবকে দেখতে পাবে। একথা বলার পর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ আয়াতটি পাঠ করলেন যে, "সেদিন কিছু সংখ্যক চেহারা তরতাজা থাকবে। নিজের রবের প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখবে।" ইবনে মাজাতে হযরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ বর্ণিত একটি হাদীসে আছে যে, আল্লাহ তাদের প্রতি তাকাবেন আর তারাও আল্লাহর প্রতি তাকাবে। অতপর যতক্ষণ আল্লাহ তা"আলা তাদের থেকে অন্তর্হিত না হবেন ততক্ষণ তারা জান্নাতের কোন নিয়ামতের প্রতি মনোযোগ দিবে না। এবং আল্লাহর প্রতি তাকিয়ে থাকবে। এটি এবং অন্য আরো বহু হাদীসের ভিত্তিতে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের অনুসারীগণ প্রায় সর্বসম্মতভাবেই এ আয়াতের যে অর্থ করেন তাহলো, জান্নাতবাসীগণ আখেরাতে মহান আল্লাহর সাক্ষাৎ লাভে ধন্য হবে। কুরআন মজীদের এ আয়াত থেকেও তার সমর্থন পাওয়া যায়।------------------- "কখ্খনো নয়, তারা (অর্থাৎ পাপীগণ) সেদিন তাদের রবের সাক্ষাৎ থেকে বঞ্চিত হবে।"(আল মুতাফফিফীন,১৫) এ থেকে স্বতই এ সিদ্ধান্ত উপনীত হওয়া যায় যে,এ বঞ্চনা হবে পাপীদের জন্য,নেককাদের জন্য নয়।
এখানে একটি প্রশ্ন দেখা দেয়। তাহলো, মানুষের পক্ষে আল্লাহকে দেখা কিভাকে সম্ভব৷ কোন জিনিসকে দেখতে পাওয়ার জন্য যা অনিবার্যরূপে প্রয়োজন তাহলো, সে জিনিসটিকে কোন বিশেষ দিক, স্থান,আকৃতি ও বর্ণ নিয়ে সামনে বিদ্যমান থাকতে হবে।আলোকে রশ্মি তাতে প্রতিফলিত হয়ে চোখের ওপর পড়বে এবং চোখ থেকে তার ছবি বা প্রতিবিম্ব মস্তিস্কের দর্শনকেন্দ্রে পৌছবে। মানুষের আল্লাহ রব্বুল আলামীনের পবিত্র সত্তাকে এভাবে দেখতে পাওয়ার কল্পনাও কি করা যায়৷ কিন্তু এ ধরনের প্রশ্ন মূলত একটি বড় ভ্রান্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত । এ ক্ষেত্রে দুটি জিনিসের মধ্যে পার্থক্য করা হয়নি। একটি হলো, দেখার তাৎপর্য। আর অপরটি হলো দেখার কাজটি সংঘটিত হওয়ার সেই বিশেষ অবস্থা বা প্রক্রিয়াটি যার সাথে আমরা এ পৃথিবীতে পরিচিত। দেখার তাৎপর্য হলো, দর্শনকারী ব্যক্তির মধ্যে দৃষ্টিশক্তি থাকতে হবে। অর্থাৎ সে অন্ধ হবে না। দৃশ্যমান বস্তু তার কাছে স্পষ্ট হবে, অদৃশ্য বা চোখের আড়াল হবে না। কিন্তু দুনিয়াতে আমরা যে জিনিসের অভিজ্ঞতা লাভ করি বা তা পর্যবেক্ষণ করে থাকি তা দেখার সে বিশেষ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে হয় যার সাহায্যে কোন মানুষ বা পশু কার্যত কোন জিনিসকে দেখে থাকে। এ জন্য অনিবার্যরূপে যা প্রয়োজন তা হলো, দর্শনকারীর দেহে চোখ নামক একটি অংগ থাকবে।সে অংগটিতে দেখার শক্তি বর্তমান থাকবে। তার সামনে একটি সসীম রঙীন বা বর্ণময় দেহ বিদ্যমান থাকবে যা থেকে আলোকরশ্মি প্রতিফলিত হয়ে চোখের পর্দার ওপর পড়বে এবং চোখের পর্দায় তার আকৃতির স্থান সংকুলান হতে হবে। এখন যদি কেউ মনে করে যে, দেখতে পাওয়ার মূলে এ দুনিয়াতে যে প্রক্রিয়াটি কার্যকর বলে আমরা জানি শুধু সে প্রক্রিয়াতেই দেখার কাজটি কার্যত প্রকাশ পেতে বা ঘটতে পারে তাহলে তা তার নিজের মন-মগজ তথা ধী -শক্তির সংকীর্ণতা। অন্যথায় আল্লাহ তা"আলার নিজের সাম্রাজ্যে দেখার জন্য এত অসংখ্য উপায় ও প্রক্রিয়া থাকা সম্ভব যা আমরা কল্পনাও করতে পারি না। এ প্রশ্ন নিয়ে যে ব্যক্তি বিতর্কে লিপ্ত হয় সে নিজেই বলূক, তার বর চক্ষুষ্মান না অন্ধ৷ তিনি যদি চক্ষুষ্মান তথা দৃষ্টিশক্তির অধিকারী হয়ে থাকেন এবং গোটা বিশ্ব -জাহান ও তার প্রতিটি বস্তু দেখে থাকেন তাহলে কি তিনি চোখ নামের একটি অংগ দিয়ে দেখছেন যা দিয়ে দুনিয়ায় মানুষ ও অন্য সব জীবজন্তু দেখে থাকে এবং আমাদের দ্বারা যেভাবে দেখার কাজটা সংঘটিত হচ্ছে তাঁর দ্বারাও কি সেভাবেই সংঘটিত হচ্ছে৷ সবারই জানা যে,এর জবাব হবে নেতিবাচক।এর জবাব যখন নেতিবাচক ,তখন কোন বিবেক ও বোধ সম্পন্ন মানুষের একথা বুঝাতে কষ্ট হবে কেন যে, দুনিয়াতে মানুষ যে নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ায় কোন জিনিসকে দেখে থাকে জান্নাতবাসীগণ সে নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ায় আল্লাহর দর্শন লাভ করবেন না। বরং সেখানে দেখর ধরন, প্রকৃতি ও প্রক্রিয়া হবে অন্য রকম যা এখানে আমাদের পক্ষে জানা সম্ভব নয়। দাম্পত্য জীবন কি এবং কেমন একটি দুই বছরের শিশুর পক্ষে তা বুঝা যতটা কঠিন, প্রকৃতপক্ষে আখেরাতের সবকিছু সঠিকভাবে বুঝা আমাদের জন্য তার চেয়েও বেশী কঠিন। অথচ যৌবনে উপনীত হয়ে এ শিশু নিজের দাম্পত্য জীবন যাপন করবে।

Monday, March 24, 2014

আল্লাহকে দেখার ব্যাপারে সালাফে সালেহীনের অভিমত কি? যারা বলে যে, চর্মচক্ষু দিয়ে আল্লাহকে দেখা সম্ভব নয় বরং আল্লাহকে দেখার অর্থ পরিপূর্ণ ঈমানের নামান্তর, তাদের হুকুম কি?

আল্লাহকে দেখার ব্যাপারে সালাফে সালেহীনের অভিমত কি? যারা বলে যে, চর্মচক্ষু দিয়ে আল্লাহকে দেখা সম্ভব নয় বরং আল্লাহকে দেখার অর্থ পরিপূর্ণ ঈমানের নামান্তর, তাদের হুকুম কি?


বিবরণ/উত্তরঃ


আল্লাহ তাআ’লা কুরআন মজীদে কিয়ামতের আলোচনা করতে গিয়ে বলেন,
)وُجُوهٌ يَوْمَئِذٍ نَاضِرَةٌ إِلَى رَبِّهَا نَاظِرَةٌ(
“সেদিন অনেক মুখমন্ডল উজ্জল হবে। তারা তাদের পালনকর্তার দিকে তাকিয়ে থাকবে।” (সূরা কিয়ামাহঃ ২২-২৩) আয়াতের মধ্যে সুস্পষ্ট দলীল পাওয়া যায় যে, কিয়ামত দিবসে জান্নাতের মধ্যে আল্লাহকে চর্মচক্ষু দিয়ে দেখা যাবে। এর অর্থ এ নয় যে, আল্লাহর সমগ্র সত্বাকে দর্শন করা সম্ভব হবে। 
)وَلَا يُحِيطُونَ بِهِ عِلْمًا(
“তারা তাঁকে জ্ঞান দ্বারা আয়ত্ব করতে পারে না।” (সূরা ত্বোহাঃ ১১০) জ্ঞানের মাধ্যমে  কোন জিনিষকে আয়ত্ব করার বিষয়টি চোখের মাধ্যমে দেখে আত্ত্ব করার চেয়ে অধিকতর ব্যাপক। যখন জ্ঞানের মাধ্যমে আল্লাহকে পরিপূর্ণভাবে জানা সম্ভব নয় তাহলে প্রমাণিত হচ্ছে যে চর্মচক্ষু দ্বারা পরিপূর্ণভাবে দর্শন করা সম্ভব নয়।  আল্লাহ তাআ’লা বলেনঃ
)لَا تُدْرِكُهُ الْأَبْصَارُ وَهُوَ يُدْرِكُ الْأَبْصَارَ (
“দৃষ্টিসমূহ তাঁকে পারে না, অবশ্য তিনি দৃষ্টিসমূহকে পেতে পারেন।” (সূরা আনআ’মঃ ১০৩) প্রকৃত পক্ষেই মানুষ আল্লাহকে স্বচক্ষে দেখবে। কিন্তু পরিপূর্ণভাবে তাঁকে বেষ্টন করতে পারবে না। কারণ আল্লাহ তাআ’লা এর অনেক উর্দ্ধে। এটাই সালাফে সালেহীনের মাযহাব। তাঁরা বিশ্বাস করেন যে, আল্লাহর দিকে তাকিয়ে থাকা বেহেশ্‌তবাসীর জন্য হবে সবচেয়ে বড় নেয়ামত। এই জন্যই নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দু’আয় বলতেনঃ
)وَأَسْأَلُكَ لَذَّةَ النَّظَرِ إِلَى وَجْهِكَ(
উচ্চারণঃ- আস্‌-আলুকা লায্‌যাতান্‌ নাযরি ইলা ওয়াজ্‌হিকা। অর্থঃ “হে আল্লাহ আমি আপনার চেহারার দিকে তাকিয়ে থাকার পরিতৃপ্তি প্রার্থনা করছি।” আল্লাহর চেহারার দিকে তাকানোর স্বাদ খুবই বিরাট। যে ব্যক্তি আল্লাহর নেয়ামত ও অনুগ্রহ লাভ করেছে, সেই কেবলমাত্র তা অনুভব করতে সক্ষম হবে। আল্লাহর কাছে দু’আ করি তিনি যেন আমাকে এবং আপনাদেরকে তাঁর দিদার লাভে ধন্য করেন।
   যারা ধারণা করে যে, আল্লাহকে চর্মচক্ষু দ্বারা দেখা সম্ভব নয়; বরং আল্লাহকে দেখার অর্থ পরিপূর্ণভাবে অন্তর দিয়ে আল্লাহকে বিশ্বাস করার নামান্তর, তাদের কথা বাতিল এবং দলীল বিরোধী। প্রকৃত অবস্থা এই ধারণাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে। কারণ অন্তরের পরিপূর্ণ বিশ্বাস দুনিয়াতেই বর্তমান রয়েছে। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইহসানের ব্যাখ্যায় বলেনঃ
أَنْ تَعْبُدَ اللَّهَ كَأَنَّكَ تَرَاهُ فَإِنْ لَمْ تَكُنْ تَرَاهُ فَإِنَّهُ يَرَاكَ
“ইহসান হল তুমি এমনভাবে আল্লাহর এবাদত করবে যে, যেন তুমি আল্লাহকে দেখছ। তা যদি সম্ভব না হয়, তাহলে বিশ্বাস করবে যে, আল্লাহ তোমাকে দেখছেন।” তুমি এমন ঈমান নিয়ে আল্লাহর এবাদত করবে, যেন তুমি আল্লাহকে দেখছ। এটিই পরিপূর্ণ ঈমানের পরিচয়। যে সমস্ত আয়াত ও হাদীছে আল্লাহকে দেখার কথা আছে, সেগুলোকে অন্তরের বিশ্বাসের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করা সম্পূর্ণ ভুল এবং কুরআনের আয়াতকে তার আসল অর্থ হতে পরিবর্তন করার শামিল। যে ব্যক্তি এ ধরণের ব্যাখ্যা করবে তার প্রতিবাদ করা ওয়াজিব।

Source: http://www.hadithbd.com

Saturday, March 22, 2014

তিন ব্যক্তির সাথে কিয়ামতের দিন আল্লাহ কথা বলবেন না

তিন ব্যক্তির সাথে কিয়ামতের দিন আল্লাহ কথা বলবেন না  


আরবি হাদিস
وَعَن أَبي ذَرٍّ رضي الله عنه، عَنِ النَّبِيِّ ﷺ، قَالَ: « ثَلاَثَةٌ لاَ يُكَلِّمُهُمُ اللهُ يَوْمَ القِيَامَةِ، وَلاَ يَنْظُرُ إِلَيْهِمْ، وَلاَ يُزَكِّيهِمْ، وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ ». قَالَ: فَقَرَأَهَا رَسُولُ اللهِ ﷺ ثَلاَثَ مِرَارٍ، قَالَ أَبُو ذرٍّ: خَابُوا وَخَسِرُوا ! مَنْ هُمْ يَا رَسُولَ اللهِ ؟ قَالَ: «المُسْبِلُ، وَالمنَّانُ، وَالمُنْفِقُ سِلْعَتَهُ بِالحَلِفِ الكاذِبِ ». رواه مسلم . وفي رواية لَهُ: «المُسْبِلُ إزَارَهُ » .
বাংলা অনুবাদ
আবূ যার্র রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তিন ব্যক্তির সাথে কিয়ামতের দিন আল্লাহ কথা বলবেন না, তাদের দিকে (দয়ার দৃষ্টিতে) তাকাবেন না, তাদেরকে পবিত্র করবেন না এবং তাদের জন্য থাকবে যন্ত্রনাদায়ক শাস্তি।’’ বর্ণনাকারী বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উক্ত বাক্যগুলি তিনবার বললেন।’ আবূ যার্র বললেন, তারা ব্যর্থ ও ক্ষতিগ্রস্ত হোক! তারা কারা? হে আল্লাহর রসূল!’ তিনি বললেন, (লুঙ্গি-কাপড়) পায়ের গাঁটের নীচে যে ঝুলিয়ে পরে, দান করে যে লোকের কাছে দানের কথা বলে বেড়ায় এবং মিথ্যা কসম খেয়ে যে পণ্য বিক্রি করে।’’ তাঁর অন্য বর্ণনায় আছে, যে লুঙ্গি ঝুলিয়ে পরে।’’
[মুসলিম ১০৬, তিরমিযি ১২১১, নাসায়ি ২৫৬৩, ২৬৫৪, ৪৪৫৮, ৪৪৬৯, ৫৩৩৩, আবু দাউদ ৪০৮৭, ইবন মাজাহ ২২০৮, আহমদ ২০৮১১, ২০৮৯৫, ২০৯২৫, ২০৯৭০, ২১০৩৪, দারেমি ২৬০৫]

Friday, March 21, 2014

আল্লাহর নাম ছাড়া দরখাস্ত শুরু!

আল্লাহর নাম ছাড়া দরখাস্ত শুরু! 


بسم الله الرحمن الرحيم
কয়েক বছর থেকেই দেখছি; এ বছর তো অনেক বেশি চোখে পড়ল যে, তালিবানে ইলম দরখাস্তের শুরুতে বিসমিল্লাহ লেখেন না। এতদিন শুনে এসেছি, কোনো কোনো মুরববী পূরা বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম লেখার পরিবর্তে বিসমিহী তাআলা লিখতে উৎসাহিত করেছেন। তাঁদের ব্যাখ্যা এই যে, সাধারণভাবে এ ধরনের কাগজ হেফাযত করা হয় না। এ কারণে অনেক সময় তা পথে-ঘাটে, এমনকি নর্দমায়ও পড়ে থাকে। ফলে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম এর, যা কুরআন মজীদের একটি আয়াত, অমর্যাদা হয়ে থাকে। এ কারণে বিসমিল্লাহর স্থলে বিসমিহী তাআলা লেখা উচিত। কিন্তু আফসোসের বিষয় এই যে, অধিকাংশ তালিবে ইলম এখন বিসমিহী তাআলাও লেখেন না। এ বছর দাখেলা ফরমের দরখাস্তগুলো দেখে আমার এমনই মনে হয়েছে। এই মুতাওয়ারাছ ও মানসূস আলাইহি সুন্নতের বিষয়ে এই অবহেলা কেন তা বুঝে আসে না।
আম মানুষকে অনেক সময় দেখা যায়, সুনানে হুদা ও সুনানে মাকসূদা সম্পর্কে উদাসীন, কিন্তু ইযাফী সুন্নত সম্পর্কে, যা মোবাহ কাজের অন্তর্ভুক্ত, খুব তৎপর! ইযাফী সুন্নত অর্থ ঐসব মোবাহ কাজ, যেগুলোকে আম মানুষ সুন্নত মনে করে থাকে। এগুলোকে সুন্নতের মতো গুরুত্ব দেওয়া হলে তা বিদআতের অন্তর্ভুক্ত হবে। শরীয়তে যেমন কোনো সুন্নত বর্জিত হওয়া-নাউযুবিল্লাহ- কাম্য নয়। তেমনি এমন কিছুকে সুন্নত সাব্যস্ত করাও কাম্য নয়, যা প্রকৃতপক্ষে সুন্নত নয়। সুন্নত বর্জন বা সুন্নত উদ্ভাবন কোনোটাই গ্রহণযোগ্য নয়।
যাই হোক, আমি চিন্তা করতে বাধ্য হলাম যে, তালিবানে ইলমের মাঝে আলোচিত সুন্নতের বিষয়ে, যা খালিস সুন্নতে মাকসূদা, এই অবহেলা এত ব্যাপক কেন হয়ে গেল।
ফতোয়া উছমানী খন্ড ২, পৃষ্ঠা ১৬৪ তে উস্তাযে মুহতারাম হযরত মাওলানা মুহাম্মাদ তকী উছমানী দামাত বারাকাতুহুমের একটি ফতোয়া আছে, যা ১০/৫/১৩৯১ হিজরীতে লিখিত। তাতে হযরত লিখেছেন, চিঠিপত্রের শুরুতে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম লেখা মাসনূন এবং তা কুরআন মজীদ দ্বারা প্রমাণিত। কুরআন মজীদে আছে হযরত সুলায়মান আ. এর চিঠি বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম দ্বারা শুরু হত। বিসমিল্লাহর পরিবর্তে ৭৮৬ সংখ্যাটি কখন থেকে লেখা শুরু হয়েছে তা কোনো নির্ভরযোগ্য কিতাবে চোখে পড়েনি। তবে এর কারণ সম্ভবত এই যে, বিসমিল্লাহ লিখিত কাগজ কোনো অসম্মানের জায়গায় ব্যবহৃত হলে তার অমর্যাদা হবে। তাই কেউ যদি একথা চিন্তা করে মুখে বিসমিল্লাহ পাঠ করে এই সংখ্যা লিখে দেয় তাহলে সুন্নত আদায় হয়ে যাবে। তবে পরিষ্কারভাবে বিসমিল্লাহ লেখাই উত্তম মনে হয়। কাণ হযরত সুলায়মান আ.-এর চিঠিপদত্র কাফিরদের কাছে গিয়েছিল। তেমনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও কাফির বাদশাহদেরকে যে পত্র পাঠিয়েছিলেন তাতেও বিসমিল্লাহ লেখা ছিল। বলাবাহুল্য, মুসলমানদের চেয়ে কাফিরদের মাধ্যমে অমর্যাদার আশঙ্কা বেশি ছিল, কিন্তু এ কারণে বিসমিল্লাহ ত্যাগ করা হয়নি।
এই ফতোয়ার উপর হযরত মাওলানা মুফতী মুহাম্মদ শফী রাহ. একটি মন্তব্য লিখেছেন, যার খোলাসা হল, জওয়াব সহীহ, তবে শর্ত এই যে, চিঠির অমর্যাদা হবে না-এই ধারণা প্রবল হতে হবে।
প্রশ্ন এই যে, মাদরাসার পরিবেশে কাগজের অমর্যাদা কীভাবে হবে? এখানে তো যে কোনো কাগজ, সাদা হোক বা যেকোনো কিছু লিখিত, অমর্যাদা থেকে রক্ষা করা অতি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম। যা সালাফ থেকে তাওয়ারুছের সাথে চলে আসছে। এটা ঠিক যে, অন্যান্য আদবের মতো কাগজের আদবের বিষয়েও তালিবানে ইলমের মাঝে অবহেলা ব্যাপক হতে চলেছে। কিন্তু এর সংশোধনের পন্থা এই নয় যে, অপরাগ হয়ে একটি সুন্নতে মাকসূদাকে ছেড়ে দেওয়া হবে বা ছেড়ে দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হবে। বরং চিকিৎসার উপায় এই যে, এই অবহেলা দূর করার চেষ্টা করা এবং উৎসাহ ও শাসন দুভাবেই তালিবানে ইলমের মাঝে কাগজপত্র ও ইলমের উপায়-উপকরণের আদব রক্ষার অনুভূতি ও অভ্যাস গড়ে তোলা। মোটকথা, তালীম-তাআল্লুমের পরিবেশেও যদি বিসমিল্লাহ লেখা কাগজের অমর্যাদা হওয়ার ছুতায় এই সুন্নত বর্জন করা হয় তাহলে এই সুন্নতের উপর আর কে আমল করবে এবং কোথায় করবে?
দাখেলার দরখাস্ত তো মাদরাসার দফতরে দাখেলা সংক্রান্ত ফাইলে সংরক্ষিত থাকে। এখানে এমন অমর্যাদার আশঙ্কা কোথায় যে, নববই ভাগ তালিবে ইলমের দাখেলা দরখাস্ত বিসমিল্লা-শূন্য হতে হবে? তবে তো দরখাস্ত এত সতর্কতার সাথে লিখতে হবে যে, তাতে কোথাও কোনোভাবে আল্লাহর নাম না আসে! কারণ আল্লাহর নামের অমর্যাদাও তো হারাম।
হযরত মাওলানা মুফতী রশীদ আহমদ লুধিয়ানুবী রাহ.-এর খেদমতে নিম্নোক্ত ইসতিফতা পেশ করা হয়েছিল :
প্রশ্ন : পত্র-পত্রিকায় কুরআন মজীদের আয়াত, বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম, হাদীস শরীফ ইত্যাদি লেখার প্রচলন আছে। অথচ ঐসব পত্রিকায় ছবি থাকে, সিনেমার বিজ্ঞাপন থাকে। এরপর পুরানো কাগজে বিক্রি হয়ে যায়। এর দ্বারা দোকানদাররা গ্রাহকদেরকে জিনিসপত্র মুড়িয়ে দেয়। তদ্রূপ পুরানো পত্রিকা এখানে সেখানে পড়ে থাকে। পায়ের নীচে পড়ে। এ অবস্থায় পত্রিকায় আয়াত-হাদীস লেখা জায়েয হবে কি?
তাছাড়া কিছুদিন যাবৎ সরকারী দফতরে সরকারী চিঠিপত্রে পুরা বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম লেখা হচ্ছে। এই কাগজগুলোরও উপরের অবস্থা হয়ে থাকে। তো এই সকল চিঠিপত্রে কি বিসমিল্লা লেখা
জায়েয হবে? পুরা বিসমিল্লাহর স্থলে যদি বিসমিহী সুবহানাহু
ওয়া তাআলা বা বিসমিহী তাআলা কিংবা ৭৮৬ লেখা হয়
তাহলে সুন্নতের ছওয়াব পাওয়া যাবে কি না?
হযরত মুফতী ছাহেব উপরের প্রশ্নের এই জবাব দিয়েছেন:
বর্তমানের পত্রপত্রিকা ও বিজ্ঞাপনে (যার অবস্থা প্রশ্নে বলা হয়েছে) কুরআন মজীদের আয়াত ও বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম লেখা জায়েয় নয়। সরকারী দাফতরিক কাগজপত্রে লেখা জায়েয; বরং মুস্তাহসান (ভালো)। কেউ অমর্যাদা করলে সে গুনাহগার হবে। বিসমিল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো শব্দ বা ৭৮৬ লেখা কুরআনে কারীম, আল্লাহর রাসূলের আমল ও উম্মতের মুতাওয়ারাছ আমলের খেলাফ। হোদায়বিয়ার সন্ধির সময় আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিসমিল্লাহ লেখার আদেশ করেছিলেন। মুশরিকরা আপত্তি করে বলেছিল,
اكتب ما كنت تكتب باسمك اللهم
এ থেকে প্রমাণ হয়, ইসলামে বিসমিল্লাহ লেখাই নির্ধারিত। এর পরিবর্তে অন্য কোনো শব্দ লিখলে বিসমিল্লাহর ছওয়াব পাওয়া যাবে না এবং সুন্নত আদায় হবে না।
৫ রবিউল আওয়াল ১৪০১ হি.
(আহসানুল ফাতাওয়া খন্ড ৮, পৃ. ২৪)
আমি আমার তালিবে ইলম
ভাইদের খিদমতে আকাবিরের কথা পৌঁছে দিলাম। আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে আমলের তাওফীক দান করুন। আমীন।

Source: http://www.alkawsar.com

আল্লাহকে কেন আল্লাহ বলে ডাকা হয়? অন্য কোন নামে ডাকা হয় না কেন?

প্রশ্নঃ প্রশ্নটা আমার এক অমুসলিম বান্ধবীর।সে তার পরিচয় দিতে অনিচ্ছুক।তার প্রশ্ন হল আল্লাহকে কেন আল্লাহ বলে ডাকা হয়? অন্য কোন নামে ডাকা হয় না কেন?
উত্তরঃ
ডা. জাকির নাইকঃ বোন, আপনি প্রশ্ন করলেন যে, আল্লাহকে কেন আল্লাহ নামে ডাকা হয়,অন্য নামে কেন ডাকা হয় না? এর উত্তর আছে পবিত্র কুর’আনে সূরা ইসরায় ১১০ নম্বর আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে-
“তোমরা তাঁকে ডাক আল্লাহ অথবা রহমান বলে।তোমরা তাঁকে যে নামেই ডাক না কেন সকল সুন্দর নামগুলো তো তাঁরই।”
আপনি মহান স্রষ্টা আল্লাহ সুবহানা ওয়া তা’আলা কে ডাকতে পারেন যে কোন নামে সেটা হতে হবে সঠিক নাম,সেটা হবে বিশুদ্ধ নাম,এমন নাম হবে যেটা তিনি নিজেই দিয়েছেন।পবিত্র কুর’আন এবং সহীহ হাদিসে আল্লাহর নাম উল্লেখ আছে ৯৯ টি।আর সবার উপরে যে নাম সেটি হল “আল্লাহ”। আর এই কথাটা যে সুন্দর নামগুলো আল্লাহর,এটা সূরা ইসরার ১১০ নম্বর আয়াতে উল্লেখ আছে, এছাড়াও সূরা “ত্বহার” ৮ নম্বর আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে,সূরা আ’রাফ এর ১৮০ নম্বর আয়াতে উল্লেখ আছে, সূরা হাশরের ২৪ নম্বর আয়াতে আছে,এখানে আল্লাহ তা’আলা বলেছেন-
“সুন্দর নামগুলো কেবল আল্লাহর জন্যই।”
আর সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ নাম আল্লাহ।এখন আমরা মুসলিমরা কেন আল্লাহ তা’আলাকে আরবীতে আল্লাহ বলে ডাকি?কেন ইংরেজি God    বলে ডাকিনা?আসলে এর কারন্টা হচ্ছে অন্যসব নাম আর শব্দগুলোকে আমরা বিকৃত করতে পারি।যেমন-ধরুন ইংরেজিতে God   এর পর একটা s লাগালে হবে Gods। ইশ্বরের বহুবচন। আল্লাহর কোন বহুবচন হয়না।“ক্বুলহু আল্লাহু আহ্বাদ” -বল তিনি আল্লাহ এক ও অদ্বিতীয়। যদি  God  এর পর ess  যোগ করেন তাহলে এটা হবে Goddess।    মহিলা ইশ্বর।ইসলামে পুরুষ আল্লাহ বা মহিলা আল্লাহ বলে কিছু নেই।আল্লাহ তা’আলার কোন লিঙ্গ নেই।যদি God   এর পর father   যোগ করেন তাহলে Godfather,      সে আমার অভিভাবক। ইসলাম ধর্মে আল্লাহ আব্বা বা আল্লাহ Father    বলে কিছু নেই।যদি God   এর পর একটা mother     যোগ করেন তবে হবে, Godmother।       ইসলাম ধর্মে আল্লাহ mother বা আল্লাহ আম্মি বলে কিছু নেই।যদি God   এর পূর্বে tin কথাটা লাগান তবে হবে Tin God (Fake God)।ইসলামে Tin Allah  বলে কিছু নেই। এজন্যই আমরা মুসলিমরা আল্লাহকে ডাকি আরবী শব্দ আল্লাহ বলেই। আর এ কারনেই আল্লাহ শব্দটা বেশিরভাগ ধর্ম গ্রন্থগুলোতে দেখতে পাবেন।যদি শিখ ধর্ম গ্রন্থ পড়েন তবে সেখানে মহান সৃষ্টিকর্তার একটা বৈশিষ্ট্যের কথা বলা হয়েছে “আল্লাহ”

যদি খ্রিস্টানদের বাইবেল পড়েন  Gospel ob Mark এর ১৫ নং অধ্যায়ের ৩৪ নং অনুচ্ছেদে আছে যে-


“যীশুখ্রিস্টকে যখন ক্রুশবিদ্ধ করা হয়েছিল তখন তিনি বলছিলেন-‘এল্লাই এল্লাই লামা সাবাকতানি’-ইশ্বর,ইশ্বর তুমি কেন আমাকে ত্যাগ করলে।”

এই এল্লাই এল্লাই লামা সবাকতানি শুনে কি মনে হয় ইশ্বর তুমি কেন আমাকে ত্যাগ করলে? না। তবে যদি আরবী করেন তবে এটা হবে “এল্লাই এল্লাই লামা তারাকতানি।” একই রকম।এই হিব্রু আর আরবী ভাষা দুটো একই রকম।(কাছাকাছি ভাষা) আর আপনারা ধর্মীয় ডিকশনারীতে দেখবেন সেখানে বলা হয়েছে, আল্লাহ বা এল্লাই।একই কথা।তাহলে আল্লাহ শব্দটি বাইবেলেও আছে,হিন্দু ধর্মগ্রন্থেও আছে,বেদেও উল্লেখ করা আছে।একটা আলাহা উপনিষদ আছে। যার নাম “আল্লাহ উপনিষদ”। তাহলে আল্লাহ শব্দটা বিভিন্ন প্রধান ধর্মগ্রন্থে উল্লেখ আছে।এটাই হল স্রষ্টার সবচেয়ে সঠিক ও শুদ্ধ নাম।

Thursday, March 20, 2014

আল্লাহর সুন্দর সুন্দর নাম,সেগুলোর অর্থ ও সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা

আল্লাহর সুন্দর সুন্দর নাম,সেগুলোর অর্থ ও সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা


আল্লাহ্ বলেন  وَلِلَّهِ الْأَسْمَاءُ الْحُسْنَى فَادْعُوهُ بِهَا
“আল্লাহর অনেক সুন্দর সুন্দর নাম আছে, সেই নামের মাধ্যমে তোমরা তাঁকে ডাক। (সূরা আরাফঃ ১৮০) আবু হুরায়রা (রা:) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:
إِنَّ لِلَّهِ تَعَالَى تِسْعَةً وَتِسْعِينَ اسْمًا مِائَةً إلاَّ واَحِداً مَنْ أَحْصَاهَا دَخَلَ الْجَنَّةَ “আল্লাহ তায়ালার এমন নিরানব্বইটি (এক কম একশ) নাম রয়েছে, যে উহা গণনা করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (বুখারী ও মুসলিম)
হাদীছে যে বলা হয়েছে: “যে ব্যক্তি উহা গণনা করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।” এর অর্থ হচ্ছে:
(১) শব্দ ও সংখ্যা সমূহ গণনা করা।
(২) উহার অর্থ ও তাৎপর্য অনুধাবন করা, তার প্রতি ঈমান রাখা ও সে অনুযায়ী আমল করা। যেমন: الْحَكِيمُ মহা বিজ্ঞ। বান্দা যখন নিজের যাবতীয় বিষয় তাঁর কাছে সমর্পণ করবে তখনই এ নামের উপর আমল হবে। কেননা সকল বিষয় তাঁরই হেকমত ও পাণ্ডিত্যেই হয়ে থাকে। বান্দা যখন বলবে الْقُدُّوسُ বা মহা পবিত্র, তখন অন্তরে অনুভব করবে যে, তিনি যাবতীয় দোষ-ত্র“টি থেকে পূত পবিত্র।
(৩) নামসমূহ উল্লেখ করে দুআ করা। এ দুআ দুপ্রকারঃ (ক) প্রশংসা ও ইবাদতের দুআ (খ) প্রয়োজন পূরণের জন্য প্রার্থনা।
কুরআন ও সুন্নাহ্ অনুসন্ধান করে আল্লাহর যে সমস্ত নাম জানা যায় তা নিম্নরূপ:
আল্লাহর
নাম সমূহ
নামের ব্যাখ্যা
الله
( আল্লাহ) আল্লাহ্‌। তিনি সৃষ্টিকুলের ইবাদত ও দাসত্বের অধিকারী। তিনিই মাবূদ-উপাস্য, তাঁর কাছে বিনীত হতে হয়, রুকূ-সিজদাসহ যাবতীয় ইবাদত-উপাসনা তাঁকেই নিবেদন করতে হয়।
الرَّحْمَنُ
(আর রাহমান) পরম দয়ালু, সৃষ্টির সকলের প্রতি ব্যাপক ও প্রশস্ত দয়ার অর্থবোধক নাম। এ নামটি আল্লাহর জন্যে সবিশেষ, তিনি ব্যতীত কাউকে রহমান বলা জায়েয নয়।
الرَّحِيمُ
(আর রাহীম) পরম করুণাময়, তিনি মুমিনদেরকে দুনিয়া ও আখেরাতে ক্ষমাকারী করুণাকারী, তাঁর ইবাদতের প্রতি মুমিনদের হেদায়াত করেছেন। জান্নাত দিয়ে আখেরাতে তাদেরকে সম্মানিত করবেন।
العَفُوُ
আল আফুউ) ক্ষমাকারী, তিনি বান্দার গুনাহ মিটিয়ে দেন তাকে ক্ষমা করে দেন, অপরাধ করে শাস্তিযোগ্য হওয়া সত্বেও তিনি শাস্তি দেন না।
الغَفُوْرُ
(আল গাফূর) মহাক্ষমাশীল, তিনি বান্দার অন্যায় গোপন রাখেন, তাকে লাঞ্ছিত করেন না এবং শাস্তিও দেন না।
الْغَفَّارُ
(আল গাফফার) অত্যধিক ক্ষমাকারী, গুনাহগার বান্দা ক্ষমা প্রার্থনা করলে তিনি তাকে ক্ষমা করে দেন।
الرَّءُوفُ
( আর  রাউফ) অতিব দয়ালু, রহমত বা দয়ার সাধারণ অর্থের তুলনায় এ শব্দটি অধিক ও ব্যাপক অর্থবোধক তাঁর এই দয়া দুনিয়াতে সৃষ্টির সকলের জন্যে এবং আখেরাতে কতিপয় মানুষের জন্যে। আর তারা হচ্ছে আল্লাহর বন্ধু মুমিনগণ।
الحَلِيمُ
(আল হালীম) মহাসহিষ্ণু, তিনি বান্দাদেরকে তাৎক্ষণিক শাস্তি দেন না; অথচ তিনি শাস্তি দিতে সক্ষম। বরং তারা মাফ চাইলে তিনি তাদেরকে মাফ করে দেন।
التَّوَّابُ
(আত তাওয়াব) তওবা কবূলকারী, তিনি বান্দাদের মধ্যে যাকে চান তওবা করার তাওফীক দেন এবং তাদের তওবা কবূল করেন।
السِّتِّيْرُ
(আস সিত্তীর)[1] দোষ-ত্রুটি গোপনকারী, তিনি বান্দার অন্যায় গোপন রাখেন, সৃষ্টিকুলের সামনে তাদেরকে লাঞ্ছিত করেন না। তিনি ভালবাসেন বান্দা নিজের এবং অন্যের দোষ-ত্রুটি গোপন রাখুক, তাহলে তিনিও তাদের অপরাধ গোপন রাখবেন।
الغَنِيُّ
(আল গানী) ঐশ্বর্যশালী, তিনি সৃষ্টিকুলের কারো মুখাপেক্ষী নন। কেননা তিনি নিজে পরিপূর্ণ, তাঁর গুণাবলী পরিপূর্ণ। সৃষ্টির সকলেই ফকীর, অনুগ্রহ ও সাহায্যের জন্যে তাঁর উপর নির্ভরশীল।
الكَرِيمُ
(আল কারীম) মহা অনুগ্রহশীল, সর্বাধিক কল্যাণকারী, সুমহান দানকারী। যাকে যা চান যেভাবে ইচ্ছা দান করেন। চাইলেও দান করেন, না চাইলেও দান করেন। গুনাহ মাফ করেন, দোষ-ত্রুটি গোপন রাখেন।
الأَكْرَمُ
(আল আকরাম) সর্বাধিক সম্মানিত, সর্বোচ্চ সম্মানের অধিকারী, তাতে তাঁর কোন দৃষ্টান্ত নেই। যাবতীয় কল্যাণ তাঁর নিকট থেকেই আসে। নিজ অনুগ্রহে মুমিনদের পুরস্কৃত করবেন। অবাধ্যদের সুযোগ দেন, ন্যায়নিষ্ঠার সাথে তাদের হিসাব নিবেন।
الْوَهَّابُ
(আল ওয়াহহাব) মহান দাতা, বিনিময় ব্যতীত বিনা উদ্দেশ্যেই অত্যধিক দান করেন। না চাইতেও অনুগ্রহ করেন।
الْجَوَادُ
(আল  জাওয়াদ) উদার দানশীল, সৃষ্টিকুলকে উদারভাবে অধিক দান ও অনুগ্রহ করেন। তাঁর উদারতা ও অনুগ্রহ বিশেষভাবে মুমিনদের প্রতি বেশী হয়ে থাকে।
الْوَدُودُ
(আল ওয়াদূদ) মহত্তম বন্ধু, তিনি তাঁর মুমিন বন্ধুদের ভালবাসেন, মাগফিরাত ও নেয়ামত দিয়ে তিনি তাদের প্রতি ভালবাসা প্রকাশ করেন। তিনি তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হন এবং তাদের আমল কবূল করেন। তাদেরকে পৃথিবীবাসীর কাছেও ভালবাসার পাত্র করেন।
الْمُعْطِي
(আল মু’তী) দানকারী, তাঁর অফুরন্ত ভান্ডার থেকে সৃষ্টিকুলের যাকে চান যা চান প্রদান করেন। তাঁর দানের শ্রেষ্ঠাংশ তাঁর (মুমিন) বন্ধুদের জন্যে হয়ে থাকে। তিনিই সকল বস্তু সৃষ্টি করেছেন ও তাতে আকৃতি প্রদান করেছেন।
الوَاسِعُ
(আল ওয়াসি’) মহা প্রশস্ত, তাঁর গুণাবলী সুপ্রশস্ত। কেউ যথাযথভাবে তাঁর গুণগান গাইতে পারবে না। তাঁর মহত্ব ও রাজত্ব সুবিশাল প্রশস্ত। তাঁর মাগফিরাত ও করুণা সুপ্রশস্ত। দয়া ও অনুগ্রহ সুপ্রশস্ত।
الْمُحْسِِنُ
(আল মুহসিন) মহা অনুগ্রহকারী, তিনি স্বীয় সত্বা, গুণাবলী ও কর্মে অতি উত্তম। তিনি সুন্দরভাবে সকল বস্তু সৃষ্টি করেছেন এবং সৃষ্টিকুলের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন।
الرازقُ
(আর রাযিক) রিযিকদাতা, তিনি সৃষ্টিকুলের সকলকে রিযিক দিয়ে থাকেন। তিনি জগত সৃষ্টির পূর্বে তাদের রিযিক নির্ধারণ করেছেন। আর পরিপূর্ণরূপে সেই রিযিক তাদের প্রদান করার দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন।
الرَّزَّاقُ
(আর রাযযাক) সর্বাধিক রিযিকদাতা, তিনি সৃষ্টিকুলকে অধিকহারে রিযিক দিয়ে থাকেন। তাঁর কাছে প্রার্থনা না করতেই তিনি রিযিকের ব্যবস্থা করেন। এমনকি অবাধ্যদেরকেও তিনি রিযিক দিয়ে থাকেন।
اللَطِيْفُ
(আল লাত্বীফ) সুক্ষ্ণদর্শী, সকল বিষয়ের সুক্ষ্ণাতিসুক্ষ্ণ জ্ঞান আছে তাঁর কাছে। কোন কিছুই গোপন থাকেনা তাঁর নিকট। তিনি বান্দাদের নিকট এত গোপনীয়ভাবে কল্যাণ ও উপকার পৌঁছিয়ে থাকেন যে তারা ধারণাই করতে পারে না।
الخَبيْرُ
(আল খাবীর) মহাসংবাদ রক্ষক, তিনি যেমন সকল বস্তুর প্রকাশ্য বিষয়ের জ্ঞান রাখেন, অনুরূপভাবে তাঁর জ্ঞান সবকিছুর গোপন ও অপকাশ্য সংবাদকেও বেষ্টন করে আছে।
الْفَتَّاحُ
(আল ফাত্তাহ) উন্মোচনকারী, তিনি তাঁর রাজত্বের ভান্ডার এবং করুণা ও রিযিক থেকে যা ইচ্ছা বান্দাদের জন্যে খুলে দেন। তাঁর জ্ঞান ও হিকমত অনুযায়ীই তিনি তা উন্মুক্ত করে থাকেন।
العَلِيمُ
(আল আ’লীম) মহাজ্ঞানী, তাঁর জ্ঞান বেষ্টন করে আছে যাহের-বাতেন, প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য, অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের যাবতীয় বিষয়কে। কোন কিছুই তাঁর কাছে গোপন বা লুকায়িত নয়।
البَرُّ
(আল বার) মহাকল্যাণদাতা, তিনি সৃষ্টিকুলকে প্রশস্ত কল্যাণদানকারী। তিনি প্রদান করেন কিন্তু তাঁর দানকে কেউ গণনা করতে পারে না। তিনি নিজ অঙ্গীকারে সত্যবাদী। তিনি বান্দাকে ক্ষমা করেন, তাকে সাহায্য করেন ও রক্ষা করেন। তিনি বান্দার অল্পদানও গ্রহণ করেন এবং তার ছওয়াবকে বৃদ্ধি করতে থাকেন।
الحَكِيْمُ
(আল হাকীম) মহাবিজ্ঞ, তিনি নিজ জ্ঞানে সকল বস্তুকে উপযুক্তভাবে স্থাপন করেন। তাঁর পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনায় কোন ত্রুটি হয় না ভুল হয় না।
الْحَكَمُ
(আল হাকাম) মহাবিচারক, তিনি ন্যায়নিষ্ঠার সাথে সৃষ্টিকুলের বিচার করবেন। কারো প্রতি অত্যাচার করবেন না। তিনিই সম্মানিত কিতাব (সংবিধান) নাযিল করেছেন, যাতে করে উক্ত সংবিধান অনুযায়ী মানুষের মাঝে বিচার কার্য সম্পাদন করা যায়।
الشَّاكِرُ
(আশ শাকির) কৃতজ্ঞতাকারী, যে বান্দা তাঁর আনুগত্য করে ও তাঁর গুণগান গায় তিনি তার প্রশংসা করেন। আমল যত কম হোক না কেন তিনি তাতে প্রতিদান দেন। যারা তাঁর নেয়ামতের শুকরিয়া করে বিনিময়ে তাদের নেয়ামতকে দুনিয়াতে আরো বৃদ্ধি করে দেন এবং পরকালে প্রতিদান বৃদ্ধি করবেন।
الشَّكُورُ
(আশ শাকুর) কৃতজ্ঞতাপ্রিয়, বান্দার সামান্য আমল তাঁর কাছে পবিত্রময়। তিনি তাতে বহুগুণ ছওয়াব প্রদান করেন। বান্দার প্রতি আল্লাহর কৃতজ্ঞতা করার অর্থ হচ্ছে তার কর্মের প্রতিদান দেয়া এবং আনুগত্য গ্রহণ করা।
الجَمِيْلُ
(আল জামীল) অতিব সুন্দর, তিনি নিজ সত্বা, নাম ও গুণাবলীতে এবং কর্মে অতিব সুন্দর। সৃষ্টির যে কোন সৌন্দর্য তাঁর পক্ষ থেকেই প্রদত্ত।
الْمَجِيدُ
(আল মাজীদ) মহাগৌরবান্বিত সপ্তাকাশে ও পৃথিবীতে গর্ব ও অহংকার, সম্মান ও মর্যাদা এবং উচ্চতা ও শ্রেষ্ঠত্ব একমাত্র তাঁরই।
الْوَلِيُّ
(আল ওয়ালী) মহা অভিভাবক, তিনি সৃষ্টি জগতের প্রতিটি বিষয়ের পরিচালনাকারী, রাজত্বে কর্তৃত্বকারী। তিনিই তাঁর মুমিন বন্ধুদের সাহায্যকারী, মদদকারী ও রক্ষাকারী।
الْحَمِيدُ
(আল হামীদ) মহাপ্রশংসিত, তিনি নিজ নাম, গুণাবলী ও কর্মে সর্বোচ্চ প্রশংসিত। সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা ও সচ্ছলতা-অভাবে তাঁরই প্রশংসা। তিনিই সকল প্রশংসা ও স্তুতির হকদার। কেননা তিনি সকল পরিপূর্ণ গুণাবলীর অধিকারী।
المَوْلَى
(আল মাওলা) অভিভাবক, তিনি পালনকর্তা, বাদশা, নেতা। তিনি তাঁর মুমিন বন্ধুদের সাহায্য ও সহযোগিতাকারী।
النَّصِيْرُ
(আন নাসীর) সাহায্যকারী, তিনি যাকে ইচ্ছা নিজ সাহায্য দ্বারা শক্তিশালী করেন। তিনি যাকে মদদ করেন তাকে কেউ পরাজিত করতে পারে না। তিনি যাকে লাঞ্ছিত করেন তাকে কেউ সাহায্য করতে পারে না।
السَّمِيعُ
মহাশ্রবণকারী, তাঁর শ্রবণ প্রত্যেক গোপনীয় সলা-পরামর্শকে বেষ্টন করে, প্রত্যেক প্রকাশ্য বিষয়কে বেষ্টন করে; বরং সকল আওয়াজকে বেষ্টন করে তা যতই উঁচু হোক অথবা নীচু বা ক্ষীণ হোক।
البَصِيرُ
(আল বাসীর) মহাদ্রষ্টা, তাঁর দৃষ্টি জগতের সকল কিছুকে বেষ্টন করে আছে। দৃশ্য-অদৃশ্য সকল কিছুই তিনি দেখতে পান। যতই গোপন বা প্রকাশ্য হোক না কেন অথবা ক্ষুদ্র ও বৃহৎ হোক না কেন তাঁর অগোচরে কিছুই থাকে না।
الشَّهِيدُ
(আশ শাহীদ) মহাস্বাক্ষী, তিনি সৃষ্টিকুলের পর্যবেক্ষক। তিনি নিজের একত্ববাদ ও ন্যায়-ইনসাফ প্রতিষ্ঠার স্বাক্ষ্য দিয়েছেন। মুমিনগণ তাঁর একত্ববাদ ঘোষণা করলে তিনি তাদের স্বাক্ষী হন। তিনি তাঁর রাসূলগণ এবং ফেরেশতাদের জন্যেও স্বাক্ষী|
الرَّقِيبُ
(আর রাক্বীব) মহাপর্যবেক্ষক, তিনি সৃষ্টিকুলের সবকিছুই জানেন। তিনি তাদের কর্ম সমূহ গণনা করে রাখেন। কারো চোখের পলক বা অন্তরের গোপন বাসনা তাঁর জ্ঞান বহির্ভূত নয়।
الرَّفِيْقُ
(আর রাফীক্ব) মহান বন্ধু, দয়ালু, তিনি নিজের কর্মে খুব বেশী নম্রতা অবলম্বন করেন। তিনি সৃষ্টি ও নির্দেশের বিষয় ক্রমান্বয়েও ধীরস্থীরভাবে সম্পন্ন করেন। তিনি বান্দাদের সাথে কোমল ও দয়ালু আচরণ করেন। সাধ্যের বাইরে তাদের উপর কোন কিছু চাপিয়ে দেন না। তিনি নম্র-ভদ্র বান্দাকে ভালবাসেন।
القَرِيْبُ
(আল ক্বরীব) সর্বাধিক নিকটবর্তী, তিনি জ্ঞান ও ক্ষমতার মাধ্যমে সকল সৃষ্টির নিকটবর্তী। সাহায্য ও দয়ার মাধ্যমে মুমিন বন্দাদের নিকটবর্তী। সেই সাথে তিনি সপ্তাকাশের উপর সুমহান আরশে সমুন্নত। তিনি  স্বসত্বায় মাখলুকের সাথে মিশে থাকেন না।
المُجِيبُ
(আল মুজীব) কবূলকারী, আহবানে সাড়াদানকারী, তিনি আহবানকারীর আহবানে এবং প্রার্থনকারীর প্রার্থনায় সাড়া দিয়ে থাকেন। তাঁর জ্ঞান ও হিকমত অনুযায়ীই তিনি সাড়া দিয়ে থাকেন।
الْمُقِيْتُ
(আল মুক্বীত) ভরণ-পোষণ দানকারী, খাদ্যদাতা, তিনি রিযিক ও খাদ্য সৃষ্টি করেছেন এবং তা মাখলুকের কাছে পৌঁছে দেয়ার দায়িত্বও নিয়েছেন। তিনি বান্দার রিযিক ও আমল লোকসান ও ত্রুটি ছাড়াই সংরক্ষণ করেন।
الْحَسِيبُ
(আল হাসীব) মহান হিসাব রক্ষক, যথেষ্ট, বান্দার দ্বীন-দুনিয়ার যাবতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের জন্যে তিনিই যথেষ্ট। তাঁর যথেষ্টতার শ্রেষ্ঠাংশ মুমিনদের জন্যে নির্ধারিত। মানুষ দুনিয়ায় যে আমল সম্পাদন করেছে তিনি তার হিসাব নিবেন।
المُؤْمِنُ
(আল মু’মিন) নিরাপত্তাদানকারী, বিশ্বাসী, নবী-রাসূল এবং তাঁদের অনুসারীদের সত্যতার সাক্ষী দিয়ে তিনি তাদের সত্যায়ন করেছেন। তাঁদের সত্যতাকে বাস্তবায়ন করার জন্যে যে দলীল-প্রমাণ দিয়েছেন তার সত্যায়ন করেছেন। দুনিয়া-আখেরাতের সকল নিরাপত্তা তাঁরই দান। মুমিনদের নিরাপত্তা দিয়েছেন যে, তিনি তাদের প্রতি যুলুম করবেন না, তাদেরকে শাস্তি দিবেন না এবং কিয়ামতের বিভীষিকাময় অবস্থায় তাদেরকে বিপদে ফেলবেন না।
الْمَنَّانُ
(আল মান্নান) অনুগ্রহকারী, দানকারী, তিনি অঢেল দান করেন, বড় বড় নেয়ামত প্রদান করেন। সৃষ্টির উপর পরিপূর্ণরূপে অনুগ্রহ করেন।
الطَّيِّبُ
(আত ত্বইয়েব) মহা পবিত্র, তিনি অতি পবিত্র, যাবতীয় দোষ-ত্রুটি থেকে মুক্ত। যাবতীয় সৌন্দর্য, শ্রেষ্ঠত্ব ও পরিপূর্ণতা তাঁরই। তিনি সৃষ্টিকুলকে অফুরন্ত কল্যাণ প্রদান করেন। আমল ও দান-সাদকা একনিষ্ঠভাবে তাঁর উদ্দেশ্যে না হলে এবং হালাল ও পবিত্র উপার্জন থেকে না হলে তিনি তা কবূল করবেন না।
الشَّافِي
(আশ শাফী) আরোগ্য দানকারী, তিনি অন্তর ও অঙ্গ-প্রতঙ্গের যাবতীয় ব্যাধির আরোগ্য দানকারী। আল্লাহ্‌ যা দিয়েছেন তা ব্যতীত বান্দার হাতে কোন নিরাময়ক উপকরণ নেই। আরোগ্য বা রোগমুক্তির ক্ষমতা একমাত্র তাঁর হাতেই আছে।
الْحَفِيظُ
(আল হাফীয) মহারক্ষক, তিনি নিজ অনুগ্রহে মুমিন বান্দার আমল সমূহ হেফাযত ও সংরক্ষণ করে থাকেন। তাঁর অসীম ক্ষমতা দ্বারা মাখলুকাতকে লালন-পালন করেন এবং রক্ষণাবেক্ষণ করেন।
الْوَكِيلُ
(আল ওয়াকীল) মহা প্রতিনিধি, তিনি সমস্ত জগতের দায়িত্ব নিয়েছেন, সৃষ্টি ও পরিচালনার কর্তব্যভার গ্রহণ করেছেন। অতএব সৃষ্টিকুলকে অস্তিত্ব প্রদান ও মদদ করার তিনিই যিম্মাদার।
الْخَلاَّقُ
(আল খাল্লাক্ব) সৃষ্টিকারী, আল্লাহ্‌ তাআলা যে অগণিত বস্তু সৃষ্টি করেন শব্দটি তার অর্থই বহণ করছে। তিনি সৃষ্টি করতেই আছেন এবং সৃষ্টি করার এই বিশাল ক্ষমতা তাঁর মধ্যে চিরকালীন।
الخَالِقُ
(আল খালিক্ব) স্রষ্টা, তিনি পূর্ব দৃষ্টান্ত ছাড়াই মাখলুকাতকে সৃষ্টি করেছেন।
البَارِئُ
(আল বারী) সৃজনকর্তা, তিনি যা নির্ধারণ করেছেন এবং যা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাকে অনস্তিত্ব থেকে অস্তিত্বে রূপ দান করেছেন।
المُصَوِّرُ
(আল মুসাব্বির) অবয়বদানকারী, আল্লাহ্‌ তা’আলা নিজের প্রজ্ঞা, জ্ঞান ও করুণা অনুযায়ী সৃষ্টিকুলকে ইচ্ছামত আকৃতি ও অবয়ব দান করেছেন।
الرَّبُّ
(আর রব) প্রভু, প্রতিপালক, তিনিই সৃষ্টিকুলকে তাঁর নেয়ামতরাজী দিয়ে প্রতিপালন করেন, তাদেরকে ধীরে ধীরে গড়ে তোলেন। তিনি মুমিন বন্ধুদের অন্তর যেভাবে সংশোধন হয় সেভাবে যত্নসহকারে লালন-পালন করেন। তিনিই মালিক, স্রষ্টা, নেতা ও পরিচালক।
العَظِيمُ
(আল আযীম) সুমহান, তিনি নিজ সত্বা, নাম ও গুণাবলীতে সুমহান গৌরবান্বিত। তাই সৃষ্টিকুলের আবশ্যক হচ্ছে তাঁর মহত্ব ঘোষণা করা, তাঁকে সম্মান করা এবং তাঁর আদেশ-নিষেধের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তা মেনে চলা।
القَاهِرُ/ القَهَّارُ
(আল কাহির/আল কাহ্হার) পরাজিতকারী, অসীম ক্ষমতাবান, তিনি বান্দাদেরকে বাধ্যকারী, সৃষ্টিকুলেকে তাঁর দাসে পরিণতকারী, সকলের উপর সর্বোচ্চ। তিনিই বিজয়ী, তাঁর জন্যেই সকল মস্তক নত হয়, সব মুখমন্ডল অবনমিত হয়।
المُهَيْمِنُ
(আল মুহাইমিন) রক্ষক, কর্তৃত্বকারী, তিনি সকল বস্তুকে পরিচালনাকারী, সংরক্ষণকারী, সাক্ষী এবং সব কিছুকে বেষ্টনকারী।
العَزِيزُ
(আল আযীয) মহাপরাক্রমশালী, ক্ষমতা ও শক্তির যাবতীয় বিষয় তাঁরই অধিকারে। তিনি প্রতাপশালী- তাঁকে কেউ পারজিত করতে পারে না। তিনি বাধাদানকারী- তিনি কারো মুখাপেক্ষী নন, কর্তৃত্ব ও বিজয় তাঁর হাতেই- তাঁর অনুমতি ছাড়া কোন কিছুই নড়তে পারে না।
الجَبَّارُ
(আল জাব্বার) মহাশক্তিধর, তিনি যা চান তাই হয়, সৃষ্টিকুল তাঁর কাছে পরাজিত, তাঁর মহত্বের কাছে অবনমিত, তাঁর হুকুমের গোলাম। তিনি ব্যাথাতুর ভগ্নের সহায়তা করেন, অভাবীকে স্বচ্ছল করেন, কঠিনকে সহজ করেন, অসুস্থ ও বিপদাপন্নকে উদ্ধার করেন।
المُتَكَبِّرُ
(আল মুতাকাব্বির) মহাগৌরবান্বিাত তিনি মহান, সকল দোষ-ত্রুটির উর্ধ্বে। তিনি বান্দাদের প্রতি অত্যাচারের অনেক উর্ধ্বে। সৃষ্টির অবাধ্যদেরকে পরাজিতকারী। গর্ব-অহংকারের একক অধিকারী তিনিই।
الكَبيرُ
(আল কাবীর) অতীব মহান, তিনি নিজ সত্বা, গুণাবলী ও কর্মে অতিব মহান ও বড়। তাঁর চেয়ে বড় কোন বস্তু নেই। তাঁর মহত্ব ও শ্রেষ্ঠত্বের সামনে সব কিছুই ক্ষুদ্র ও তুচ্ছ।
الحَيـِِيُّ
(আল হায়িই) লজ্জাশীল, তাঁর সম্মানিত সত্বা ও বিশাল রাজত্বের সাথে সামঞ্জস্যশীল পন্থায় তিনি লজ্জা করেন। আল্লাহর লজ্জা হচ্ছে তাঁর দান, করুণা, উদারতা ও সম্মান।
الحَيُّ
(আল হাই) চিরঞ্জীব, তিনি চিরকাল পরিপূর্ণরূপে জীবিত। তিনি এভাবেই ছিলেন ও আছেন এবং থাকবেন। তাঁর শুরু নেই বা শেষ নেই। জগতে প্রাণের যে অস্তিত্ব তা তাঁরই দান।
القَيُّومُ
(আল কাইয়ূম) চিরস্থায়ী, তিনি নিজে নিজেই প্রতিষ্ঠিত, তিনি সৃষ্টিকুলের কারো মুখাপেক্ষী নন। নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলে যা কিছু আছে তার সবকিছুই তাঁর মাধ্যমেই প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। সবাই তাঁর দরবারের ভিক্ষুক।
الْوَارِثُ
(আল ওয়ারিস) উত্তরাধিকারী, সৃষ্টিকুল ধ্বংস হওয়ার পর তিনিই থাকবেন, প্রত্যেক বস্তুর মালিক ধ্বংস হওয়ার পর তা তাঁর কাছেই ফিরে যাবে। আমাদের কাছে যা কিছু আছে তা আমানত স্বরপ আল্লাহ্‌ দিয়েছেন। এগুলো সবই প্রকৃত মালিক আল্লাহর কাছে একদিন ফিরে যাবে।
الدَّيْانُ
(আদ দাইয়ান) মহাবিচারক, তিনি সেই সত্বা সৃষ্টিকুল যাঁর অনুগত ও অবনমিত। তিনি বান্দাদের কর্মের বিচার করবেন। ভাল কর্মে বহুগুণ প্রতিদান দিবেন। মন্দ কর্মে শাস্তি দিবেন অথবা তা ক্ষমা করে দিবেন।
المَلِكُ
(আল মালিক) মহান মালিক, বাদশা, আদেশ-নিষেধ ও কর্তৃত্বের অধিকারী তিনিই। তিনি আদেশ ও কর্মের মাধ্যমে সৃষ্টিকুলকে পরিচালনাকারী। তাঁর রাজত্ব ও পরিচালনায় তাঁর কোন শরীক নেই।
الْمَالِكُ
আল (মালিক) মহান মালিক, তিনি মূলে সব কিছুর মালিক এবং মালিকানার যোগ্যও একমাত্র তিনিই। জগত পয়দা করার সময় তিনিই মালিক, তিনি ব্যতীত কেউ ছিলনা। সবশেষে সৃষ্টিকুল ধ্বংস হওয়ার পরও মালিকানা তাঁরই।
الْمَلِيْكُ
(আল মালীক) মহান বাদশা, ব্যাপকভাবে মালিকানা ও কর্তৃত্ব তাঁরই।
السُّبُّوْحُ
(আস সুব্বূহ) মহামহিম, পূতপবিত্র, তিনি সকল দোষ-ত্রুটি থেকে পবিত্র। কেননা পরিপূর্ণতা, শ্রেষ্ঠত্ব ও সৌন্দর্যের যাবতীয় গুণাবলী তাঁরই।
القُدُّوسُ
(আল ক্বুদ্দূস) মহা পবিত্র, তিনি সবধরণের ত্রুটি-বিচ্যুতি থেকে পবিত্র, পরিচ্ছন্ন ও নিঃষ্কলুষ। কারণ পূর্ণতা বলতে যা বুঝায় এককভাবে তিনিই তার উপযুক্ত, তাঁর কোন দৃষ্টান্ত নেই।
السَّلامُ
(আস সালাম) পরম শান্তিদাতা, তিনি স্বীয় সত্বা, নাম, গুণাবলী ও কর্মে যে কোন ধরণের দোষ-ত্রুটি থেকে মুক্ত। দুনিয়া ও আখেরাতের যাবতীয় শান্তি-শৃংখলা একমাত্র তাঁর নিকট থেকেই পাওয়া যায়।
الحَقُّ
(আল হাক্ক) মহাসত্য, তাঁর মধ্যে কোন সন্দেহ নেই সংশয় নেই- না তাঁর নাম ও গুণাবলীতে না তাঁর উলুহিয়্যাতে। তিনিই সত্য মা’বূদ- তিনি ব্যতীত কোন মা’বূদ সত্য নয়।
المُبيْنُ
(আল মুবীন) সুস্পষ্টকারী, প্রকাশকারী, তাঁর একত্ববাদ, হিকমত ও রহমতের প্রতিটি বিষয় প্রকাশ্য। তিনি বান্দাদেরকে কল্যাণ ও হেদায়াতের পথ পরিস্কার বাতলিয়ে দিয়েছেন, যাতে তারা তার অনুসরণ করে এবং বিভ্রান্তি ও ধ্বংসের পথও সুস্পষ্ট বর্ণনা করেছেন, যাতে তারা সতর্ক থাকতে পারে।
القَويُّ
(আল ক্বাবী)মহা শক্তিধর, তিনি পরিপূর্ণ ইচ্ছা-স্বাধিনতার সাথে একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী।
المَتِيْنُ
(আল মাতীন) দৃঢ়শক্তির অধিকারী, তিনি নিজ ক্ষমতা ও শক্তিতে অত্যন্ত কঠোর। কোন কাজে কষ্ট-ক্লেশ বা ক্লান্তি তাঁকে আচ্ছন্ন করে না।
الْقَادِرُ
(আল ক্বাদির) সর্বশক্তিমান, তিনি সকল বস্তুর উপর শক্তিমান, কোন কিছুই তাঁকে আপরাগ করতে পারে না- না যমীনে না আসমানে। তিনিই সব কিছু নির্ধারণ করেছেন।
القَدِيْرُ
(আল ক্বাদীর) মহাপ্রতাপশালী, এ শব্দটির অর্থ পূর্বের শব্দটিরই অনুরূপ। কিন্তু আল্‌ কাদীর শব্দটির মাধ্যমে আল্লাহর প্রশংসা অধিক হয়।
الْمُقْتَدِرُ
(আল মুক্তাদির) মহা ক্ষমতাবান, আল্লাহর পূর্ব জ্ঞান অনুযায়ী নির্ধারণকৃত বস্তু বাস্তবায়নে ও সৃষ্টি করতে তাঁর অতিরিক্ত ক্ষমতা আছে।
العليُّ الأَعْلَى
(আল আলিউল আ’লা) সুউচ্চ, মহান, মহত্তর, সর্বোচ্চ, তিনি মর্যাদা, ক্ষমতা ও সত্বা তথা সকল দিক থেকে সর্বোচ্চ। সব কিছুই তাঁর রাজত্ব ও ক্ষমতার অধিনে। তাঁর উপরে কখনোই কিছু নেই।
المُتَعَالُ
(আল মু’তাল) চিরউন্নত, তাঁর উচ্চতা ও মহত্বের সামনে সকল বস্তু অবনমিত। তাঁর উপরে কিছু নেই। সকল বস্তু তাঁর নীচে ও অধীনে, তাঁর ক্ষমতা ও রাজত্বের বলয়ে।
الْمُقَدِّمُ
(আল মুক্বাদ্দিম) অগ্রসরকারী, তিনি নিজের ইচ্ছা ও প্রজ্ঞা অনুযায়ী সকল বস্তুকে বিন্যস্ত করেছেন ও স্বস্থানে রেখেছেন। তাঁর জ্ঞান ও অনুগ্রহের ভিত্তিতে সৃষ্টির কাউকে কারো উপর প্রাধান্য দিয়েছেন।
الْمُؤَخِّرُ
(আল মুআখখির) পশ্চাতে প্রেরণকারী, তিনি প্রতিটি বস্তুকে নিজের হিকমত অনুযায়ী যেভাবে ইচ্ছা স্থাপন করেন, যাকে ইচ্ছা অগ্রসর করেন, যাকে ইচ্ছা পশ্চাতে রাখেন। পাপী বান্দাদেরকে শাস্তি দিতে দেরী করেন, যাতে তারা তাওবা করতে পারে আল্লাহর কাছে ফিরে আসতে পারে।
الْمُسَعِّرُ
(আল মুসায়্যি’র)[2] মূল্য নির্ধারণকারী, তিনি নিজের প্রজ্ঞা ও জ্ঞানের দাবী অনুযায়ী বিভিন্ন বস্তুর মূল্য, মর্যাদা, গুরুত্ব  ও প্রভাবকে বৃদ্ধি করেন অথবা হ্রাস করেন। ফলে উহা মূল্যবান (মহার্ঘ) হয় অথবা সস্তা হয়।
الْقَابِضُ
(আল কাবিয) কবজকারী, সংকুচনকারী, তিনিই প্রাণীকুলের জান কবজ করেন। তিনি নিজের হিকমত ও ক্ষমতা বলে সৃষ্টিকুলের মধ্যে যার ইচ্ছা রিযিক সংকুচন ও হ্রাস করেন- তাদেরকে পরীক্ষা করার জন্যে।
الْبَاسِطُ
(আল বাসিত্ব) সমপ্রসারণকারী, তিনি তাঁর উদারতা ও করুণায় বান্দাদের রিযিক প্রশস্ত করেন। অতঃপর তাঁর হিকমত অনুযায়ী তা দ্বারা তাদের পরীক্ষা করেন। তিনি গুনাহগারদের তাওবা কবূল করার জন্যে দু’হস্ত প্রসারিত করেন।
الأَوَّلُ
(আল আওয়াল) অনাদী, তিনি সেই সত্বা যাঁর পূর্বে কিছুই ছিল না। তিনি সৃষ্টি করেছেন বলেই মাখলুক অস্তিত্ব লাভ করেছে। কিন্তু তাঁর অস্তিত্বের কোন শুরু নেই।
الآخِرُ
(আল আখির) অনন্ত, তাঁর পর কোন কিছু নেই। তিনিই অনন্ত, চিরকালীন ও অবিশষ্ট। পৃথিবীর সব কিছু ধ্বংস হয়ে যাবে; অতঃপর প্রত্যাবর্তন করবে তাঁর কাছেই। কিন্তু তাঁর অস্তিত্বের শেষ নেই।
الظَّاهِرُ
(আয যাহির) প্রকাশ্য, তিনি সবকিছুর উপরে সুউচ্চ। তাঁর উচ্ছে কিছু নেই। তিনি সকল বস্তুকে করায়ত্বকারী ও বেষ্টনকারী।
البَاطِنُ
(আল বাত্বিন) গোপন, তাঁর পরে কোন কিছু নেই। তিনি দুনিয়াতে মাখলুকের দৃষ্টির আড়ালে থাকেন; তারপরও তিনি তাদের নিকটবর্তী ও তাদেরকে বেষ্টনকারী।
الوِتْرُ
(আল বিতর) বেজোড় বা একক, তিনি একক তাঁর কোন শরীক নেই। তিনি অদ্বিতীয় তাঁর কোন নযীর নেই।
السَّيِّدُ
(আস সাইয়েদ) প্রভু, নেতা, মানুষের অভাব পুরণকারী, সৃষ্টিকুলের একক নেতৃত্ব তাঁর হাতেই। তিনি তাদের মালিক ও পালনকর্তা। সবকিছু তাঁর সৃষ্টি ও দাস।
الصَّمَدُ
(আস সামাদ) অমুখাপেক্ষী, স্বয়ং সম্পূর্ণ, তিনি নিজের নেতৃত্বে   স্বয়ং সম্পূর্ণ,  | মাখলুকাত যাবতীয় প্রয়োজনে তাঁরই স্মরণাপন্ন হয়। কেননা তারা তাঁর কাছে বড়ই নি:স্ব তিনি সবার আহার যোগান; তাকে কেউ আহার দেয় না, তাঁর আহারের কোন দরকার নেই।
الوَاحِدُ  الأَحَدُ
(আল ওয়াহিদুল আহাদ) একক, অদ্বীতিয়, সকল ক্ষেত্রে পরিপূর্ণতায় তিনিই একক ও অদ্বিতীয়; তাঁর কোন অংশী নেই। তাঁর অনুরূপ কোন কিছু নেই। এই গুণাবলী এককভাবে তাঁরই ইবাদতকে আবশ্যক করছে। তাঁর কোন শরীক নেই।
الإِلَهُ
(আল ইলাহ) মা’বূদ বা উপাস্য, তিনিই সত্য মাবূদ। এককভাবে তিনি যাবতীয় ইবাদত ও দাসত্ব পাওয়ার হকদার; অন্য কেউ নয়।
সংকলনে: শাইখ আব্দুল্লাহ আল কাফী
জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার
সৌদী আরব।