Pages

Friday, March 28, 2014

নাস্তিকদের প্রশ্নঃ আল্লাহ তাআলার স্রষ্টা কে? প্রশ্নটি যৌক্তিক না অবান্তর?

নাস্তিকদের প্রশ্নঃ আল্লাহ তাআলার স্রষ্টা কে? প্রশ্নটি যৌক্তিক না অবান্তর?


প্রশ্ন
নাস্তিকরা প্রশ্ন করে থাকে যে, আল্লাহ তাআলাকে কে সৃষ্টি করেছে? এর জবাব কি?
উত্তর
بسم الله الرحمن الرحيم
আল্লাহ তাআলা সব কিছু সৃষ্টি করেছেন। সব কিছুর স্রষ্টা যিনি তাকে আবার কে সৃষ্টি করবে? এটাতো বোকামীসূলভ প্রশ্ন। কারণ সৃষ্টি জগতে যা কিছু আছে সবই আল্লাহ তাআলাই সৃষ্টি করেছেন। তিনি সব কিছুর স্রষ্টা যখন, তখন তার আগেতো কেউ থাকতে পারে না।  তার আগে কেউ না থাকায় তাঁকে কেউ সৃষ্টি করবে কিভাবে? তাকে সৃষ্টির প্রশ্ন করাটাইতো অবান্তর।
আল্লাহ তাআলা সকল কিছু সৃষ্টি করেছেন
سَبِّحِ اسْمَ رَبِّكَ الْأَعْلَى [٨٧:١] الَّذِي خَلَقَ فَسَوَّىٰ [٨٧:٢] وَالَّذِي قَدَّرَ فَهَدَىٰ [٨٧:٣]
আপনি আপনার মহান পালনকর্তার নামের পবিত্রতা বর্ণনা করুন। যিনি সৃষ্টি করেছেন ও সুবিন্যস্ত করেছেন। এবং যিনি সুপরিমিত করেছেন ও পথ প্রদর্শন করেছেন। {সূরা আলা-১-৩}
وَتَرَى الْجِبَالَ تَحْسَبُهَا جَامِدَةً وَهِيَ تَمُرُّ مَرَّ السَّحَابِ ۚ صُنْعَ اللَّهِ الَّذِي أَتْقَنَ كُلَّ شَيْءٍ ۚ إِنَّهُ خَبِيرٌ بِمَا تَفْعَلُونَ [٢٧:٨٨]
তুমি পর্বতমালাকে দেখে অচল মনে কর, অথচ সেদিন এগুলো মেঘমালার মত চলমান হবে। এটা আল্লাহর কারিগরী, যিনি সবকিছুকে করেছেন সুসংহত। তোমরা যা কিছু করছ, তিনি তা অবগত আছেন। [সূরা নমল-৮৮}
قَالَ رَبُّنَا الَّذِي أَعْطَىٰ كُلَّ شَيْءٍ خَلْقَهُ ثُمَّ هَدَىٰ [٢٠:٥٠]
মূসা বললেনঃ আমাদের পালনকর্তা তিনি,যিনি প্রত্যেক বস্তুকে তার যোগ্য আকৃতি দান করেছেন, অতঃপর পথপ্রদর্শন করেছেন। {সূরা ত্বহা-৫০}
আল্লাহ তাআলাকে কে সৃষ্টি করেছেন? প্রশ্নটি স্ববিরোধী প্রশ্ন
আল্লাহ তাআলা স্রষ্টা। যিনি স্রষ্টা তিনি যদি সৃষ্টি হন, তাহলে মৌলিক স্রষ্টাতো আর তিনি বাকিই থাকেন না। কারণ তখন তাঁকে যিনি সৃষ্টি করেছেন তিনি হয়ে যাচ্ছেন মূল স্রষ্টা। এক্ষেত্রেতো আল্লাহ তাআলা মূল স্রষ্টা হিসেবে আর বাকি থাকবেন না। তাই আল্লাহ তাআলাকে স্রষ্টা মানার পর তাঁর স্রষ্টা কে? এ প্রশ্ন করাটাই অযৌক্তিক ও বোকামী।
এছাড়া এ প্রশ্ন করার দ্বারা ক্রমান্বয়িক অসীম প্রশ্নধারার পথ খোলা হয়। যার কোন শেষ কোনদিন হবে না। কারণ যদি বলা হয় যে, আল্লাহর স্রষ্টা ওমুক [নাউজুবিল্লাহ]।
তাহলে আবার প্রশ্ন হবে- ওমুকের স্রষ্টা কে? যদি কারো নাম উচ্চারণ করা হয়, তাহলে আবার প্রশ্ন আসবে- ওমুকের স্রষ্টা কে? এভাবে ক্রমধারায় অসীম প্রশ্নের দ্বার উন্মোচিত হবে। যার কোন সীমা-পরিসীমা আর বাকি থাকবে না। চলতেই থাকবে এ প্রশ্ন। তাই এরকম প্রশ্ন অযৌক্তিক ও বোকামীসূলভ প্রশ্ন।
এ প্রশ্নটি শয়তানের প্রশ্ন
قال أبو هريرة رضي الله عنه : قال رسول الله صلى الله عليه و سلم ( يأتي الشيطان أحدكم فيقول من خلق كذا من خلق كذا حتى يقول من خلق ربك ؟ فإذا بلغه فليستعذ بالله ولينته )
হযতর আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেনঃ তোমাদের কারো কাছে শয়তান আসতে পারে, এবং সে বলতে পারে যে, এ বস্তু কে সৃষ্টি করেছে? ঐ বস্তু কে সৃষ্টি করেছে? এরূপ প্রশ্ন করতে করতে শেষ পর্যন্ত বলে বসবে, তোমাদের প্রতিপালককে কে সৃষ্টি করেছে? যখন বিষয়টি এ পর্যায়ে পৌঁছে যাবে তখন সে যেন অবশ্যই আল্লাহর কাছে আশ্রয় চায় এবং বিরত থাকে। {সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৩১০২, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৩৬২, মুসনাদে আবী আওয়ানা, হাদীস নং-২৩৬}
عن عائشة عن رسول الله صلى الله عليه و سلم قال : إن الشيطان يأتي أحدكم فيقول : من خلق السماوات ؟ فيقول : الله فيقول : من خلق الأرض ؟ فيقول : الله فيقول : من خلق الله ؟ فإذا كان ذلك فليقل : آمنت بالله ورسله
হযরত আয়শা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেনঃ তোমাদের কারো কাছে শয়তান এসে বলতে পারে- আসমানসমূহ কে সৃষ্টি করেছে? সে বলবে, আল্লাহ। তারপর শয়তান প্রশ্ন করবে- জমীন কে সৃষ্টি করেছে? জবাবে সে বলবে-আল্লাহ তাআলা। তারপর শয়তান বলবে- আল্লাহকে কে সৃষ্টি করেছে? যখন বিষয়টি এ পর্যন্ত এসে যাবে তাহলে বলবে- আমি আল্লাহ ও রাসূলের উপর ঈমান এনেছি। {মুসনাদে আবী ইয়ালা, হাদীস নং-৪৭০৪, মুসনাদে আহমাদ বিন হাম্বল, হাদীস নং-২১৯১৬, মুসনাদে আব্দ বিন হুমাইদ,হাদীস নং-২১৫, আলমুজামুল কাবীর, হাদীস নং-৩৭১৯}
والله اعلم بالصواب
     উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
সহকারী মুফতী-জামিয়াতুল আস’আদ আল ইসলামিয়া-ঢাকা
lutforfarazi@yahoo.com

Source: jamiatulasad.com
.......................................................................................................

সূরা এখলাছ ( মক্কায় অবতীর্ণ ), আয়াত সংখাঃ ৪

بِسْمِ اللّهِ الرَّحْمـَنِ الرَّحِيمِ
শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু।

قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ

01. বলুন, তিনি আল্লাহ, এক,

اللَّهُ الصَّمَدُ

02. আল্লাহ অমুখাপেক্ষী,

لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ

03. তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং কেউ তাকে জন্ম দেয়নি

وَلَمْ يَكُن لَّهُ كُفُوًا أَحَدٌ

04. এবং তার সমতুল্য কেউ নেই।


............................................................................................................
সৃষ্টিকর্তাকে কে সৃষ্টি করেছে ?

আমাদের চারপাশে এই যে মহাবিশ্ব, সূর্য্য চন্দ্র আমি আপনি এই সব কিছু নিয়েই কিন্তু আমাদের প্রকৃতি বা Nature. মানুষ হচ্ছে এই প্রকৃতির মাঝে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ জীব। আচ্ছা মানুষ কি নিজে নিজে বাচঁতে পারে ? না মানুষকে খাদ্য গ্রহন করতে হয়, এই খাদ্য কিন্তু মানুষের শরীর থেকে উৎপন্ন হয় না। মানুষ এই খাদ্য উদ্ভিদ প্রাণীকূল থেকে সংগ্রহ করে। তাই বলা যায় মানুষ একটা পরাধীন সত্ত্বা। প্রকৃতির মাঝে এমন কোন প্রাণী নেই যেটা নিজে নিজে বাচতে পারে। প্রত্যেকটা প্রানীই বেচে থাকার জন্য একজন আরেকজনের উপর নির্ভরশীল। আবার মানুষ চাইলেই সব কিছু করতে পারে না। মানুষ কিন্তু কোন মৌলিক পদার্থ সৃষ্টি করতে পারে না। মানুষ এই মহাবিশ্বের মাঝে সবচেয়ে বুদ্ধিমান প্রাণী কিন্তু মানুষের পক্ষে সম্ভব নয় কোন মৌলিক পদার্থ সৃষ্টি করা তাই আমরা ধরে নিতে পারি যে প্রকৃতির মাঝে আর কারো পক্ষেই সম্ভব নয় কোন মৌলিক পদার্থ একদম নতুন ভাবে সৃষ্টি করা। আবার মানুষ আকার আয়তনে সীমিত। সে চাইলেও তার থেকে খুব ভারী কোন জিনিস উত্তোলন করতে পারে না। আবার মানুষ চাইলেও মৃত্যুকে ঠেকাতে পারবে না, তাই আমরা বলতে পারি মানুষ হল একটা সীমাবদ্ধ ও পরাধীন সত্ত্বা। শুধু মানুষ নয় আমাদের প্রকৃতির মাঝে আপনি এমন কোন সত্ত্বা খুজে পাবেন না যেটা Unlimited, infinite ও independent. Nature বা প্রকৃতির প্রত্যেকটা সত্ত্বাই Limited, Finite এবং একজন আরেকজনের প্রতি Dependent. এবং এই Nature বা প্রকৃতির কোন সত্ত্বাই মৌলিক কোন পদার্থ তৈরী করতে পারে না। সূর্য্য, চন্দ্র, গ্রহ নক্ষত্র এগুলিও কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম কানুন মেনে চলে। এই মহাজাগতিক উপাদান গুলিও অসীম নয়। আকার আয়তনে সসীম। বলা হয় যে এই মহাবিশ্ব প্রতিনিয়ত প্রসারিত হচ্ছে। কিন্তু মহাবিশ্বের এই প্রসারনটাও কিন্তু একটি সীমার মধ্য থেকেই হচ্ছে। মহাবিশ্ব যদি অসীমই হত তাইলে তো আর সে প্রসারিত হত না। তাছাড়া এই মহাবিশ্ব আবার সংকুচিত হয়ে তার পূর্বের সত্ত্বায় ফিরে আসবে। তাই এই মহাবিশ্বকে আমরা অনন্ত অসীম বলতে পারি না।
এখন প্রকৃতি বলতে আমরা কি বুঝি ? প্রকৃতি কিন্তু এই মহাবিশ্ব এই সকল প্রাণি জগত এই গুলির সমষ্টি। অনেক গুলি সীমাবদ্ধ বস্তুর সমষ্টি কিন্তু সীমাবদ্ধই হবে। ১, ২, ৩, এরকম আপনি যত সংখ্যাই যোগ করুন না কেন এগুলির সমষ্টি কিন্তু একটি নির্দিষ্ট সংখ্যাই হবে। কখনই অসীম কোন সংখ্যা হবে না। যেহেতু প্রকৃতি বা Nature সব Dependent, finite এবং limited সত্ত্বার সমষ্টি তাই প্রকৃতিও একটা Dependent, finite এবং Limited সত্ত্বা। এখন প্রকৃতি যেহেতু নিজেই একটি সীমাবদ্ধ স্বত্বা এবং প্রকৃতির কোন সত্ত্বারই এই ক্ষমতা নেই যে নিজে থেকে কোন মৌলিক পদার্থ সৃষ্টি করা তাই সম্মিলিত প্রকৃতিরও এই ক্ষমতা নেই যে এই মহাবিশ্বকে নিজে থেকে সৃষ্টি করা। তাই প্রকৃতি যদি নিজে নিজেকে সৃষ্টি না করতে পারে তাইলে এই প্রকৃতি এই মহাবিশ্ব কে কে সৃষ্টি করেছেন ? আমরা যদি এখন Rational Method বা স্বাভাবিক বিচার বুদ্ধি প্রয়োগ করি তাইলে দেখব প্রকৃতিও যেহেতু নিজে নিজেকে সৃষ্টি করতে পারে না তাইলে এই প্রকৃতির অবশ্যই একজন সৃষ্টিকর্তা আছে। সেই সৃষ্টিকর্তা কে অবশ্যই একটি স্বাধীন এবং অনন্ত অসীম সত্ত্বা হতে হবে। এবং এই সৃষ্টিকর্তা অবশ্যই কারো প্রতি নির্ভরশীল হবেন না। এই সৃষ্টিকর্তার নামই হল আল্লাহ সুবহানাতায়ালা।
এখন প্রশ্ন হল এই আল্লাহ সুবহানাতায়ালা কে কে সৃষ্টি করেছেন ? এর ৩ টা উত্তর আছে। হয় আল্লাহ সুবহানাতায়ালাকে কেউ তৈরী করেছেন বা আল্লাহ সুবহানাতায়ালা নিজে নিজেকে তৈরী করেছেন অথবা আল্লাহ সুবহানাতায়ালা হচ্ছেন একটি অনন্ত অসীম আজালী সত্ত্বা যাকে কেউ সৃষ্টি করেনি। আল্লাহ সুবহানাতায়ালা কে যদি কেউ সৃষ্টি করেন তাইলে তো আর তিনি আল্লাহই হলেন না। এখন ২য় শর্তে যদি যাই তাইলে দেখব যে আল্লাহ সুবহানাতায়ালা নিজে নিজেকে তৈরি করেছেন। এটাও গ্রহনযোগ্য নয় কারন এটা করতে হলে আগে আল্লাহ সুবহানাতায়ালাকে নিজের অস্তিত্ত্বে আসতে হবে এরপর নিজে নিজেকে তৈরী করতে হবে। আল্লাহ সুবহানাতায়ালা যদি আগেই অস্তিত্ত্বে এসেই পড়েন তাইলে আর নিজেকে সৃষ্টি করার কি দরকার ? তাইলে ৩য় শর্ত টাই ঠিক। আল্লাহ সুবহানাতায়ালা হচ্ছেন একটি আজালী বা অনন্ত অসীম সত্ত্বা যাকে কেউ সৃষ্টি করেনি। আল-কোরআনের সূরা ইখলাসে আল্লাহ সুবহানাতায়ালা নিজের সম্পর্কে যা বলেছেন এটাই আমাদের মানতে হবে যে উনাকে কেঊ সৃষ্টি করেনি আর উনিও কাউকে জন্ম দেন নি উনি হলেন একটি আজালী বা অনন্ত অসীম সত্ত্বা। যখন কেউ ছিল না তখনও আল্লাহ সুবহানাতায়ালা ছিলেন আর যখন কেউ থাকবে না তখনো আল্লাহ সুবহানাতায়ালা থাকবেন। আর মানুষ হচ্ছে একটি সসীম সত্ত্বা। একটি সসীম সত্ত্বা কখনই একটি অনন্ত অসীম আজালী সত্ত্বাকে বুঝতে পারবে না। একটা পাখি যেমন কোনদিন মানুষের মস্তিস্ক কে বুঝতে পারবে না, বিড়াল যেমন কখনো ল্যাপটপ কিভাবে চলে তা জানতে পারবে না ঠিক তেমনি আমরা মানুষেরাও কখনোই দুনিয়ার জীবনে পুরাপুরি ভাবে আল্লাহ সুবহানাতায়ালাকে বুঝতে পারবো না। আল-কোরআনে এবং সহীহ হাদীসে আল্লাহ সুবহানাতায়ালা নিজের সম্পর্কে যতটুকু বলেছেন ততটুকুর উপরই আমাদের কে সন্তুষ্ট থাকতে হবে। কারন মানুষ হচ্ছে একটা সসীম সত্ত্বা আর আল্লাহ সুবহানাতায়ালা হচ্ছেন একটা অনন্ত অসীম আজালী সত্ত্বা। আল্লাহর সত্ত্বা সম্পর্কে এর বেশী চিন্তা করলে আমাদের কে পাগল হয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতে হবে।
[ তথ্যসূত্রঃ আমি এই নোটটি লেখার ক্ষেত্রে মুসলিম বিশ্বের প্রবাদ পুরুষ ফিলিস্তিনের শায়খ তাকিউদ্দিন আন নাবাহানীর লেখা নিজামুল ইসলাম/The System of islam/ইসলামী জীবন ব্যবস্থা এই বইয়ের সাহায্য নিয়েছি। ]    
Source: http://www.farabiblog.com


.................................................................................

সবকিছুই যদি আল্লাহ্‌ তৈরী করে থাকেন তো আল্লাহ্‌কে কে তৈরী করলো? বিভিন্ন সময় নাস্তিকদের বলতে শুনেছি যে আল্লাহর অস্তিত্বে বিশ্বাস করা অন্ধবিশ্বাস মাত্র।  ঈশ্বর বিশ্বাস কি আসলেই একটা আবেগীয় ব্যাপার,  নাকি ঈশ্বরের অস্তিত্বের যৌক্তিক প্রমান আছে?

উত্তর: নাস্তিকেরা বলে থাকে সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাস একটি অন্ধবিশ্বাস। তারা বলে, যেহেতু আল্লাহকে দেখা যায়না, ধরা যায় না, শুনা যায় না, লজিক দিয়ে প্রমাণ করে যায় না – কাজেই আল্লাহ্‌ বলে কিছু নেই। কিন্তু, বাস্তব হলো সৃষ্টিকর্তার প্রতি বিশ্বাস এবং সৃষ্টিকর্তার ইবাদত করা মানুষের জন্মগত স্বভাব। আর যদিও নাস্তিকেরা নিজেদেরকে যুক্তিবাদী বলে দাবী করে, কিন্তু সত্য হলো সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব  যুক্তি বা লজিক দিয়ে প্রাচীণ কাল থেকেই প্রমাণিত হয়ে এসেছে।
বর্তমানে আমরা যে লজিক বা যুক্তিবিদ্যা পড়ি, তার আবিষ্কারক হলো প্রাচীণ গ্রীকের পন্ডিতগণ। গ্রীকের ইতিহাসের সবচেয়ে বিখ্যাত লজিশিয়ান বা যুক্তিবিজ্ঞানী ছিলেন প্লেটো এবং তার ছাত্র এরিস্টোটল, যারা লজিককে formal discipline হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করে গেছেন। আপনি জানেন কি এরা দুজনেই সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব (তাদের ভাষায় ‘unmoved mover’) বিশ্বাস করতেন? এরা দু’জনেই যুক্তি দিয়েই সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব প্রমাণ করে গেছেন। এর মাধ্যমে এটুকু বোঝা গেল, যুক্তিবাদী(?) নাস্তিকেরা যুক্তিবিদ্যার পিতা / পিতাতুল্যদেরকে নিজেরাই বিশ্বাস করে না।
এবার আসুন দেখি প্লেটোর যুক্তি কি ছিল। প্লেটো যে যুক্তিটি ব্যবহার করেছিলেন সেটা হলো, Design Indicates Designer, অর্থাৎ – প্রতিটি নকশারই নকশাকারী আছে। মহাগ্রন্থ কোরআনে আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা এই একই যুক্তি দিয়ে বার বার অবিশ্বাসীদের নিকট স্রষ্টার অস্তিত্ব প্রমাণ করেছেন (যেমনঃ সূরা আন’আম ৬:৯৯, সূরা রুম ৩০:২০-২৭)। উদাহরন দিয়ে বুঝানো যাক। আপনি যদি সমুদ্র পারে একটা বালির ঘর দেখেন, আপনি কি চিন্তা করবেন – বাহ কি সুন্দর একটা ঢেউ এসেছিল যেটা একটা বালির ঘর তৈরি করে চলে গেছে? নাকি এটি চিন্তা করবেন, নিশ্চয়ই এখানে কোন মানুষ এসে এটা বানিয়েছিল? কাকে আপনার যুক্তিবাদী মনে হয়? এটা সম্পূর্ণই অযৌক্তিক হবে যদি কেউ বলে, যে ঐ বালির ঘর ভাগ্যক্রমে বা হাজার হাজার ঢেঊ এর মিশ্রনে হয়েছে। বরং সাধারণ বিচার-বুদ্ধি সম্পন্ন যেকোন মানুষই বলবে যে ঐ বালির ঘরটি নিশ্চয়ই কেউ না কেউ তৈরী করেছে। কারন, প্রতিটা সৃষ্টির পেছনেই স্রষ্টা থাকে। ঠিক একইভাবে, এই মহাবিশ্ব এবং এর ভিতরের সবকিছুর অবশ্যই একজন স্রষ্টা আছে।
একটা কলম নিজে নিজে তৈরি হতে পারে না, ফেইসবুক নিজে নিজে তৈরী হতে পারে না, আইফেল টাওয়ার থেকে মোনালিসা কোন কিছুই নিজে নিজে তৈরী হতে পারে না, তাহলে এত নিয়মতান্ত্রিক, নিঁখুত মহাবিশ্ব ও মানবজাতি কিভাবে নিজে নিজে তৈরী হতে পারে? একটা অণুর ভিতর তাকান, আপনি ডিজাইন দেখতে পাবেন, মহাকাশের দিকে তাকান আপনি ডিজাইন দেখতে পাবেন। সূর্য যদি পৃথিবীর আরো কাছে থাকতো তাহলে পৃথিবী অনেক বেশী গরম হয়ে যেতো, পৃথিবী থেকে সূর্য আরো দূরে থাকলে পৃথিবী ঠান্ডা হয়ে বসবাসের অনুপযুক্ত হয়ে যেতো, সূর্য পৃথিবী থেকে ঠিক ততটুকুই দূরে আছে যতটুকু দূরে থাকলে পৃথিবীটা প্রাণের টিকে থাকার উপযুক্ত হবে, সৃষ্টিজগতের এই নিঁখুত স্থাপত্য এটা প্রমান করে যে এই সৃষ্টি জগত র‍্যান্ডমলি সৃষ্টি হতে পারে না, এর পেছনে অবশ্যই একজন প্রবল পরাক্রমশালী, অসীম ক্ষমতাধর, প্রজ্ঞাময় স্রষ্টা আছেন। আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা কোরআন মাজিদে প্রশ্ন করেন:
তারা কি স্রষ্টাহীন সৃষ্টি? না তারা নিজেরা নিজেদের সৃষ্টি করেছে? না তারা আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছে? বরং তারা নিশ্চিত বিশ্বাস রাখে না । – সূরা তুর (৫২:৩৫-৩৬)
প্রত্যেকটি মানুষই এক আল্লাহ্‌র অস্তিত্বের স্বাভাবিক অনুভূতি নিয়ে জন্মায়, জন্ম থেকেই মানুষ জানে যে আল্লাহ্‌ এক এবং আল্লাহ্‌ চান আমি তার ইবাদত করি -  ইসলামের ভাষায় এই অনুভূতিকে ‘ফিতরাহ’ বলে।
কি, ‘ফিতরাহ’ এর ব্যাপারটা বিশ্বাস হচ্ছে না? বৈজ্ঞানিক প্রমান লাগবে? তাহলে শুনুন। University of Oxford এর Centre for Anthropology and Mind বিভাগের সিনিয়র রিসার্চার Dr. Justin Berrett দীর্ঘ ১০ বছর শিশুদের উপর বৈজ্ঞানিক গবেষনা করে বলেছেন:
“Young people have a predisposition to believe in a supreme being because they assume that everything in the world was created with a purpose.”
 “If we threw a handful (of babies) on an island and they raised themselves I think they would believe in God.”

প্রশ্ন ২। আচ্ছা বুঝলাম এই সৃষ্টিজগত একজন স্রষ্টা তৈরী করেছেন, কিন্তু তাহলে সেই স্রষ্টার স্রষ্টা কে?
উত্তর:  স্রষ্টা কে কেউ সৃষ্টি করতে পারে কিনা – আসুন ব্যাপারটা একটু তলিয়ে দেখি।
কখনো ডমিনোর খেলা দেখেছেন? ডমিনোগুলোকে একটার পর একটা সাজিয়ে বাইরে থেকে ধাক্কা দেয়া হয় আর তার effect শুরু হয়, একটার পর একটা ডমিনো পড়তে থাকে। সৃষ্টির ব্যাপারটাও একইরকম। একটা সৃষ্টি আরেকটা সৃষ্টির কারণ ঘটায়। এখন, আমি যদি আপনাকে বলি, কোন বাতাস ছিল না, কেউ ধাক্কা দেই নাই, অনেকগুলো ডমিনো সাজানো ছিল এবং কোন বাহ্যিক বল ছাড়া এমনি এমনি ডমিনো একটার উপর আরেকটা পড়তে শুরু করল, আপনি কি বিশ্বাস করবেন? করবেন না (নিউটনের ১ম সূত্র) । এবং যে এই বাহ্যিক বল প্রয়োগ করবে সে অবশ্যই ডমিনো হতে পারে না। কারণ সে ডমিনো হলে, অর্থাৎ সে process of creation এর অন্তর্ভুক্ত হলে তাকে push করার জন্য, অন্য কথায় তাকে সৃষ্টি করার জন্য অন্য কাউকে লাগবে। অর্থাৎ, এই বাহ্যিক বল প্রয়োগকারী স্রষ্টাকে সৃষ্টি থেকে ভিন্ন প্রকৃতির হতে হবে। সৃষ্টি যদি সসীম হয়, স্রষ্টা হবেন অসীম; সৃষ্টি যদি অন্য সৃষ্টির প্রয়োজন অনুভব করে, স্রষ্টা হবেন চাহিদার উর্দ্ধে; সৃষ্টি যদি ভুল প্রবণ হয়, স্রষ্টা হবেন ভুলের উর্দ্ধে; সৃষ্টি যদি ক্ষণস্থায়ী হয়, স্রষ্টা হবেন চিরস্থায়ী। আর এই স্রষ্টা যেহেতু অসীম ক্ষমতাশীল, অনাদি, অনন্ত, কাজেই এই রকম স্রষ্টা মাত্র একজনই থাকবেন। কারণ, একাধিক অসীম ক্ষমতাশীল, অনাদি, অনন্ত স্রষ্টার সহাবস্থান অসম্ভব।
বলুন – তিনিই আল্লাহ্‌, এক ও অদ্বিতীয়। সবাই তার মুখাপেক্ষী, তিনি কারো মুখাপেক্ষী নন। তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং তাঁকেও জন্ম দেয়া হয়নি। এবং কেউই তার সমকক্ষ নয়। – সূরা ইখলাস (১১২:১-৪)
সুতরাং, মহাবিশ্বের অস্তিত্বই প্রমাণ করে যে স্রষ্টাকে কেউ সৃষ্টি করে নাই। কারণ, মহাবিশ্বকে যে স্রষ্টা সৃষ্টি করেছেন সেই স্রষ্টাকে সৃষ্টি করতে যদি স্রষ্টা লাগে, তাকে সৃষ্টি করতে যদি স্রষ্টা লাগে, তাকে সৃষ্টি করতে যদি স্রষ্টা লাগে – এই প্রক্রিয়া চলতেই থাকবে এবং  কোনদিনই মহাবিশ্ব সৃষ্টি হত না। এই ধাঁধার একমাত্র সমাধান হলঃ স্রষ্টাকে কেউ সৃষ্টি করেন নাই, এবং তিনি সবসময়ই ছিলেন। এই কথাই বলে মহাগ্রন্থ কোরআন:

আল্লাহ্‌ – তিনি ছাড়া আর কোন উপাস্য নাই। তিনি চিরঞ্জীব, অনাদি। তাঁকে তন্দ্রা বা নিদ্রা স্পর্শ করে না। আকাশ ও পৃথিবীতে যা-কিছু আছে সবই তাঁর। কে আছে যে তাঁর অনুমতি ছাড়া তাঁর কাছে সুপারিশ করবে? তাদের (মানুষের) সামনে ও পেছনে যা-কিছু আছে তিনি তা জানেন। তিনি যা ইচ্ছা করেন তা ছাড়া তাঁর জ্ঞানের কিছুই তারা আয়ত্ত করতে পারে না। আকাশ ও পৃথিবীব্যাপী তাঁর আসন, আর তাদের রক্ষণাবেক্ষণে তিনি ক্লান্ত হন না। তিনি অত্যুচ্চ মহামহিম। – সূরা বাক্বারাহ্‌ (২:২৫৫ – আয়াতুল কুরসী)
প্রশ্ন ৩। আমার কাছে মহাবিশ্ব নিজেই স্রষ্টা। এতে কোনও সমস্যা আছে?
উত্তর: আপনি নিশ্চয়ই বিগ ব্যাং থিউরী তে বিশ্বাস করেন। বিগ ব্যাং থিউরী মতে এই মহাবিশ্বের একটা শুরু আছে। পৃথিবীর অন্যতম বড় পদার্থবিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং নিজেও তার ওয়েবসাইটে এই সম্পর্কে লিখেছেন:
The conclusion of this lecture is that the universe has not existed forever. Rather, the universe, and time itself, had a beginning in the Big Bang, about 15 billion years ago.  The Beginning of Time, Stephen Hawking
যার শুরু থাকে তার সৃষ্টি হওয়ারও একটা কাল থাকে, আর যে সৃষ্টি হয় – তার অবশ্যই একজন স্রষ্টা থাকে। কাজেই মহাবিশ্ব নিজে কখনই স্রষ্টা হতে পারে না। মহাবিশ্বকে সৃষ্টি করার জন্য একজন অনন্ত-অসীম, পরম ক্ষমতাশীল স্রষ্টা লাগবে – আর সেই পরম ক্ষমতাশীল স্রষ্টাই হলেন আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা।
অবিশ্বাসীরা কি ভেবে দেখে না যে, আকাশ ও পৃথিবী ওতপ্রোতভাবে মিশে ছিল? তারপর আমি উভয়কে পৃথক করে দিলাম এবং প্রাণবান সবকিছু পানি থেকে সৃষ্টি করলাম। তবুও কি ওরা বিশ্বাস করবে না? – সূরা আম্বিয়া (২১:৩০)
References:
1. Does God exist? – Abdur Raheem Green
2. Who is your Lord? – Dr. Bilal Philips
3. Fundamentals of Faith – Dr. Yasir Qadhi

Source: http://adnanfaisal.wordpress.com
      

No comments:

Post a Comment