.إِنَّا عَرَضْنَا الْأَمَانَةَ عَلَى السَّمَاوَاتِ
وَالْأَرْضِ وَالْجِبَالِ فَأَبَيْنَ أَن يَحْمِلْنَهَا وَأَشْفَقْنَ مِنْهَا
وَحَمَلَهَا الْإِنسَانُ ۖ إِنَّهُ كَانَ ظَلُومًا جَهُولًا
.لِّيُعَذِّبَ اللَّهُ الْمُنَافِقِينَ وَالْمُنَافِقَاتِ
وَالْمُشْرِكِينَ وَالْمُشْرِكَاتِ وَيَتُوبَ اللَّهُ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ
وَالْمُؤْمِنَاتِ ۗ وَكَانَ اللَّهُ غَفُورًا رَّحِيمًا
৭২) আমি এ আমানতকে আকাশসমূহ, পৃথিবী ও পর্বতরাজির ওপর পেশ করি, তারা একে বহন করতে
রাজি হয়নি এবং তা থেকে ভীত হয়ে পড়ে৷ কিন্তু মানুষ একে বহন করেছে, নিসন্দেহে সে বড়
জালেম ও অজ্ঞ৷১২০ ৭৩) এ আমানতের বোঝা উঠাবার অনির্বায ফল হচ্ছে এই যে, আল্লাহ মুনাফিক পুরুষ ও নারী
এবং মুশরিক পুরুষ ও নারীদেরকে সাজা দেবেন এবং মু’মিন পুরুষ ও নারীদের তাওবা কবুল
করবেন, আল্লাহ ক্ষমাশীল ও করুণাময়৷ (আল আহযাব)
তাফহীমুল কুরআনে প্রণীত উক্ত আয়াতসমূহের বিস্তারিত ব্যাখ্যা নীচে দেয়া হল:
১২০. বক্তব্য শেষ করতে
গিয়ে আল্লাহ মানুষকে এ চেতনা দান করতে চান যে, দুনিয়ায় সে কোন ধরনের মর্যাদার
অধিকারী এবং এ মর্যাদায় অধিষ্ঠিত থেকে যদি সে দুনিয়ার জীবনকে নিছক একটি খেলা মনে
করে নিশ্চিন্তে ভুল নীতি অবলম্বন করে, তাহলে কিভাবে স্বহস্তে নিজের ভবিষ্যত নষ্ট
করে।
এ স্থানে "আমানত" অর্থ সেই "খিলাফতই" যা কুরআন মজীদের দৃষ্টিতে মানুষকে দুনিয়ায়
দান করা হয়েছে। মহান আল্লাহ মানুষকে আনুগত্য ও অবাধ্যতার যে স্বাধীনতা দান করেছেন
এবং এ স্বাধীনতা ব্যবহার করার জন্য তাকে অসংখ্য সৃষ্টির ওপর যে কর্তৃত্ব ক্ষমতা
দিয়েছেন। তার অনিবার্য ফল স্বরূপ মানুষ নিজেই নিজের স্বেচ্ছাকৃত কাজের জন্য দায়ী
গণ্য হবে এবং নিজের সঠিক কর্মধারার বিনিময়ে পুরস্কার এবং অন্যায় কাজের বিনিময়ে
শাস্তির অধিকারী হবে। এসব ক্ষমতা যেহেতু মানুষ নিজেই অর্জন করেনি বরং আল্লাহ তাকে
দিয়েছেন এবং এগুলোর সঠিক ও অন্যায় ব্যবহারের দরুন তাকে আল্লাহর সামনে জবাবদিহি
করতে হবে, তাই কুরআন মজীদের অন্যান্য স্থানে এগুলোকে খিলাফত শব্দের মাধ্যমে প্রকাশ
করা হয়েছে এবং এখানে এগুলোর জন্য আমানত শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে।
এ আমানত কতটা গুরুত্বপূর্ণ ও দুর্বল সে ধারণা দেবার জন্য আল্লাহ বলেন, আকাশ ও
পৃথিবী তাদের সমস্ত শ্রেষ্ঠত্ব এবং পাহাড় তার বিশাল ও বিপুলায়তন দেহাবয়ব ও গম্ভীরতা
সত্ত্বেও তা বহন করার শক্তি ও হিম্মত রাখতো না কিন্তু দূর্বল দেহাবয়বের অধিকারী
মানুষ নিজের ক্ষুদ্রতম প্রাণের ওপর এ ভারী বোঝা উঠিয়ে নিয়েছে।
পৃথিবী ও আকাশের সামনে আমানতের বোঝা পেশ করা এবং তাদের তা উঠাতে অস্বীকার করা
এবং ভীত হওয়ার ব্যাপারটি হতে পারে শাব্দিক অর্থেই সংঘটিত হয়েছে। আবার এও হতে পারে
যে, একথাটি রূপকের ভাষায় বলা হয়েছে। নিজের সৃষ্টির সাথে আল্লাহর যে সম্পর্ক রয়েছে
তা আমরা জানতেও পারি না এবং বুঝতেও পারি না। পৃথিবী, চাঁদ, সূর্য ও পাহাড় যেভাবে
আমাদের কাছে বোবা, কালা ও প্রাণহীন, আল্লাহর কাছেও যে তারা ঠিক তেমনি হবে তার কোন
নিশ্চয়তা নেই। আল্লাহ নিজের প্রত্যেক সৃষ্টির সাথে কথা বলতে পারেন এবং সে তার জবাব
দিতে পারে। এর প্রকৃত অবস্থা অনুধাবন করার ক্ষমতা আমাদের বুদ্ধি ও বোধশক্তির নেই।
তাই এটা পুরোপুরিই সম্ভব যে, প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ নিজেই এ বিরাট বোঝা তাদের সামনে
পেশ করে থাকবেন এবং তারা তা দেখে কেপে উঠে থাকবে আর তারা তাদের প্রভু ও স্রষ্টার
কাছে এ নিবেদন পেশ করে থাকবে যে, আমরা তো আপনারই ক্ষমতাহীন সেবক হয়ে থাকার মধ্যেই
নিজেদের মংগল দেখতে পাই। নাফরমানী করার স্বাধীনতা নিয়ে তার হক আদায় করা এবং হক আদায়
না করতে পারলে তার শাস্তি বরদাশত করার সাহস আমাদের নেই। অনুরূপভাবে এটাও সম্ভব,
আমাদের বর্তমান জীবনের পূর্বে আল্লাহ সমগ্র মানব জাতিকে অন্য কোন ধরনের একটি
অস্তিত্ব দান করে নিজের সামনে হাজির করে থাকবেন এবং তারা নিজেরাই এ দায়িত্ব বহন
করার আগ্রহ প্রকাশ করে থাকবেন। একথাকে অসম্ভব গণ্য করার জন্য কোন যুক্তি আমাদের
কাছে নেই। একে সম্ভাবনার গন্ডীর বাইরে রাখার ফায়সালা সেই ব্যক্তিই করতে পারে যে
নিজের চিন্তা ও বুদ্ধিবৃত্তিক যোগ্যতার ভুল ধারণা নিয়ে বসে আছে।
তবে এ বিষয়টাও সমান সম্ভবপর যে, নিছক রূপকের আকারে আল্লাহ এ বিষয়টি উপস্থাপন
করেছেন এবং অবস্থার অস্বাভাবিক গুরুত্বের ধারণা দেবার জন্য এমনভাবে তার নকশা পেশ
করা হয়েছে যেন একদিকে পৃথিবী ও আকাশ এবং হিমালয়ের মতো গগণচুম্বী পাহাড় দাঁড়িয়ে আছে
আর অন্যদিকে দাঁড়িয়ে আছে ৫/৬ উচু লম্বা একজন মানুষ। আল্লাহ জিজ্ঞেস করছেনঃ
"আমি আমার সমগ্র সৃষ্টিকূলের মধ্যে কোন একজনকে এমন শক্তি দান করতে চাই যার ফলে
আমার সার্বভৌম কর্তৃত্বের মধ্যে অবস্থান করে সে নিজেই স্বেচ্ছায় ও সাগ্রহে আমার
প্রাধান্যের স্বীকৃতি এবং আমার হুকুমের আনুগত্য করতে চাইলে করবে অন্যথায় সে আমাকে
অস্কীকার করতেও পারবে আর আমার বিরুদ্ধে বিদ্রোহের ঝান্ডা নিয়েও উঠতে পারবে। এ
স্বাধীনতা দিয়ে আমি তার কাছ থেক এমনভাবে আত্মগোপন করে থাকবো যেন আমি কোথাও নেই।
এ স্বাধীনতাকে কার্যকর করার জন্য আমি তাকে ব্যাপক ক্ষমতা দান করবো, বিপুল
যোগ্যতার অধিকারী করবো এবং নিজের অসংখ্য সৃষ্টির ওপর তাকে শ্রেষ্ঠত্ব দান করবো।
এর ফলে বিশ্ব- জাহানে সে যা কিছু ভাংগা গড়া করতে চায় করতে পারবে। এরপর একটি
নির্দিষ্ট সময়ে আমি তার কাজের হিসেব নেবো। যে আমার প্রদত্ত স্বাধীনতাকে ভুলপথে
ব্যবহার করবে তাকে এমন শাস্তি দেবো যা কখনো আমার কোন সৃষ্টিকে আমি দেইনি। আর যে
নাফরমানীর সমস্ত সুযোগ পাওয়া সত্ত্বেও আমার আনুগত্যের পথই অবলম্বন করে থাকবে তাকে
এমন উচ্চ মর্যাদা দান করবো যা আমার কোন সৃষ্টি লাভ করেনি। এখন বলো তোমাদের মধ্য
থেকে কে এ পরীক্ষাগৃহে প্রবেশ করতে প্রস্তুত আছে৷
এ ভাষণ শুনে প্রথমে তো বিশ্ব-জগত নিরব নিথর দাঁড়িয়ে থাকে। তারপর একের পর এক
এগিয়ে আসে। সকল প্রকান্ড অবয়ব ও শক্তির অধিকারী সৃষ্টি এবং তারা হাটু গেড়ে বসে
কান্নাজড়িত স্বরে সানুনয় নিবেদন করে যেতে থাকে তাদেরকে যেন এ কঠিন পরীক্ষা থেকে
মুক্ত রাখা যায়। সবশেষে এ একমুঠো মাটির তৈরি মানুষ ওঠে। সে বলে, হে আমার
পওয়ারদিগার!আমি এ পরীক্ষা দিতে প্রস্তুত। এ পরীক্ষায় সফলকাম হয় তোমার সালতানাতের
সবচেয়ে উচ্চ পদে অধিষ্ঠিত হবার যে আশা আছে সে কারণে আমি এ স্বাধীনতা ও
স্বেচ্ছাচারের মধ্যে যেসব আশংকা ও বিপদাপদ রয়েছে সেগুলো অতিক্রম করে যাবো।
নিজের কল্পনাদৃষ্টির সামনে এ চিত্র তুলে ধরেই মানুষ এই বিশ্ব জাহানে কেমন নাজুক
স্থানে অবস্থান করছে তা ভালোভাবেই আন্দাজ করতে পারে। এখন এ পরীক্ষাগৃহে যে ব্যক্তি
নিশ্চিন্তে বসে থাকে এবং কতবড় দায়িত্বের বোঝা যে সে মাথায় তুলে নিয়েছে, আর দুনিয়ার
জীবনে নিজের জন্য কোন নীতি নির্বাচন করার সময় যে ফায়সালা সে করে তার সঠিক বা ভুল
হবার ফল কি দাঁড়ায় তার কোন অনুভূতিই যার থাকে না তাকেই আল্লাহ এ আয়াতে জালেম ও
অজ্ঞ বলে অভিহিত করছেন। সে অজ্ঞ, কারণ সেই বোকা নিজেই নিজেকে অদায়িত্বশীল মনে করে
নিয়েছে। আবার সে জালেম, কারণ সে নিজেই নিজের ধ্বংসের ব্যবস্থা করছে এবং নাজানি
নিজের সাথে সে আরো কতজনকে নিয়ে ডুবতে চায়।
Fine
ReplyDeleteজ্ঞান-ই আমানতের মূল বিষয়বস্তু/আমানত আল্লাহর।
ReplyDeleteন্যায়/সালাত/সত্য প্রতিষ্ঠাকারী আল্লাহর প্রতিনিধি। ইহা কেবল জ্ঞান দিয়েই সম্পাদন করা সম্ভব। ভুল/অন্যায়/মিথ্যা কার্য সম্পাদনকারীর জন্য অনন্ত শাস্তি। জয়-ইয়া-রাসুলআল্লাহ; জয়-ইয়া মুর্শিদআল্লাহ, আল্লাহুস্সামাদ। আমিন!!!
ReplyDeleteমানুষ কর্ম সম্পাদন করে ন্যায়/অন্যায়! বিচার করে তাও ন্যায়/অন্যায়! কথা বলে তাও আবার মিথ্যা/সত্য! অথচ! অঙ্গিকারের মাধ্যমে মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিন ন্যায়/সত্য প্রতিষ্ঠার জন্য মানুষকে তাঁহার নিজ প্রতিনিধি স্বরূপ এই দুনিয়ায় প্রেরণ করিয়াছেন কিন্তু মানুষ স্বভাবতই ভুল কাজ করে থাকে। এইজন্যই বিধি-বিধান বা কোরআন নামক গ্রন্থ দিয়াছেন; যাতে করে মানুষ ভাল/মন্দ হিসাব করে চলে এবং ভাল কাজের প্রশংসা যখন হয়, তখন জ্ঞানের প্রচার ঘটে। তাই, জ্ঞানই মূল শক্তি বা আমানত। যিনি জ্ঞানী ও সত্যবান এবং ন্যায়বান তাঁহার প্রশংসা করেন সকলেই। জয় ইয়া মালিক সাঁই রাব্বানা। আমিন।
ReplyDelete